সালালাহপ্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসকদের বর্ষবরণ

সালালাহপ্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসকদের বর্ষবরণের একটি দৃশ্য
সালালাহপ্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসকদের বর্ষবরণের একটি দৃশ্য

আমরা প্রবাসী। জীবনযাপনের জন্য দেশ থেকে সহস্র মাইল দূরে মধ্যপ্রাচ্যের ওমানপ্রবাসী। সূর্য পরিক্রমায় পৃথিবীর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের প্রবাসজীবনের ব্যাপ্তি বাড়ে। বাড়ে বুকের ভেতরের হাহাকার। ঈদ যায়, পার্বণ যায়, নববর্ষ আসে। আমরা কিন্তু সব সময় আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য দেশে যেতে পারি না। আমাদের যখন ছুটি থাকে, তখন যে সব সময় দেশে যাওয়াটা সম্ভব হয় তা-ও কিন্তু না।

প্রবাস জীবনে পয়লা বৈশাখ, ঈদের মতো আনন্দময় ব্যাপারগুলো যে নির্দিষ্ট দিনেই পালন করা হবে, তা কিন্তু না। যখন সবাই অবসর জোগাড় করতে পারবে, তখনই উৎসব উদযাপন করা হয়। আমরা ওমানের সালালাহপ্রবাসী চিকিৎসক পরিবারেরা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে সবাই একত্র হয়েছিলাম ইত্তিন পাহাড়ের পাদদেশে সিরাজি রিসোর্টে গত ২৬ এপ্রিল অর্থাৎ ১৩ বৈশাখে।

সালালাহপ্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসকদের বর্ষবরণের একটি দৃশ্য
সালালাহপ্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসকদের বর্ষবরণের একটি দৃশ্য

দিনটি ছিল শুক্রবার। তাই আমাদের আয়োজন শুরু করতে করতে বেলা তিনটা বেজে গিয়েছিল। প্রথমেই মধ্যাহ্নভোজন দেশীয় নানাবিধ ভর্তা সহকারে। এর পরের পর্বটা ছিল শিশুদের ছবি আঁকা। অতি আবশ্যক চিত্রগ্রহণ, যা পরে এই মধুর দিনটির কথা মনে করিয়ে দেবে পরের অনেকগুলো বছর।

বাসায় তৈরি নানা ঐতিহ্যবাহী খাবার পরিবেশনা, পিলো পাসিং গেম, বল থ্রোয়িং গেম, ছেলেদের ক্রিকেট—আরও কত কী!

তবে মূল আকর্ষণ ছিল লটারি।

সালালাহপ্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসকদের বর্ষবরণের একটি দৃশ্য
সালালাহপ্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসকদের বর্ষবরণের একটি দৃশ্য

সন্ধ্যা থেকে দেশীয় গান, আবৃত্তি, নাচ, জোকস ও কোরিওগ্রাফি নিয়ে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।

সবশেষে রাতের খাবারের পর আবার আড্ডা। বাংলাদেশের মানুষ আড্ডাপ্রিয় বটে। তবে আমাদের আড্ডা শেষ হওয়ার নয়। নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার জন্য ওমানের বিভিন্ন স্থানে বসবাসরত ডাক্তার পরিবারের সদস্যরা আড্ডার আয়োজন করেছিলেন। প্রথমে বুরাইমি-সোহার-সাহাম অঞ্চলে ১৯ এপ্রিল বেশ বড় একটা আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন হয়। পরবর্তী সময় সুর ও সালালাহে একই দিনে অর্থাৎ ২৬ এপ্রিলে আড্ডার আয়োজন হয়।

সালালাহপ্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসকদের বর্ষবরণের একটি দৃশ্য
সালালাহপ্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসকদের বর্ষবরণের একটি দৃশ্য

নিজস্ব সংস্কৃতিকে লালন করা, তার বীজ পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে বুনে দেওয়া এবং দেশের সব ঐতিহ্যে অংশগ্রহণ করাই এই আয়োজনের উপলক্ষ। সাদা শাড়ি-লাল পাড়ে কিংবা দেশীয় ঐতিহ্যবাহী সাজে নারী এবং পুরুষদের এই আয়োজনে প্রতিটি মুহূর্তে মনের গভীরে একটা আনন্দসংগীত বেজেছে।

‘আমরা বাঙালি-বাংলা মোদের গর্ব,
ভালোবাসা দেবে উজাড় করে-
বাংলা মায়ের জন্য।’

কত শত কারণে মানুষ প্রবাসী হয়। কিন্তু দেশের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানগুলোতে কেমন শূন্য শূন্য লাগে, তা শুধু আমরাই বলতে পারব। সে জন্য এমন আয়োজনগুলোতে আনন্দ আমাদের চোখে-মুখে খেলা করে। কেউ কেউ ২০০ কিলোমিটার বা তারও বেশি ড্রাইভ করে আসেন শুধু নিজেরা একটা দিন একত্রে কাটাবেন বলে। আর মিলনমেলাগুলো গভীর রাত পর্যন্ত গড়ালেও কারও বাড়ি ফেরার তাড়া থাকে না। চলে গেলেই তো শেষ হয়ে যাবে। আনন্দ কি এত তাড়াতাড়ি শেষ হতে দেওয়া যায়?

সালালাহপ্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসকদের বর্ষবরণের একটি দৃশ্য
সালালাহপ্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসকদের বর্ষবরণের একটি দৃশ্য

কিছু ছবি দিচ্ছি সালালাহ বাংলাদেশি ডক্টরস ক্লাবের আয়োজিত বর্ষবরণ ১৪২৬-এর। প্রবাসে বেড়ে ওঠা আমাদের বাচ্চারা যখন পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে কিংবা তু লাল পাহাড়ের দেশে যা গান গেয়েছে; কিংবা সুন্দর গানগুলোর সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেছে; কিংবা প্রাপ্তবয়স্কদের নাচ-গান পরিবেশন হচ্ছিল, কে বলবে আমরা দেশের বাইরে, কে বলবে আমরা প্রবাসী।

মাহফুজা বেগম স্নিগ্ধা: চিকিৎসক ও ফ্রিল্যান্স লেখক।