রমজান মোবারক

আমি যে হাসপাতালে কাজ করি, সেখানে সহকর্মীরা বেশ বন্ধুবৎসল। প্রতিবছর রোজার মাসে তাঁদের থাকে অনেক কৌতূহল। আমি আর হাবি ছাড়া এত দিন আর কোনো মুসলমান ডাক্তার ছিল না। গত বছর আরেকজন জয়েন করেছে। সহকর্মীরা এ মাসে কেউ আমাদের সামনে পানি পর্যন্ত খায় না। সবার প্রচুর কৌতূহল কেন সারা দিন না খেয়ে থাকি। ইহুদি ডাক্তাররা কিছু বোঝেন। তাঁদের উপবাস জাতীয় কিছু আছে। খ্রিষ্টান ডাক্তারদের বছরে এক মাস মাংস না খাওয়ার রিচ্যুয়াল আছে। কিন্তু আমাদের মতো কঠিন নিয়ম নয়। পানিও খাওয়া যায় না।

এ মাসে আমাকে রাতের কাজ না দিতে বলি। তাঁরা শোনেন। সহজ কথায় তাঁদের বুঝিয়েছি এ মাস সংযম শেখায়, কথায়, কাজে, অন্য মানুষের দুঃখ বুঝতে, দান করতে শেখায়। যেহেতু প্রয়োজনের অতিরিক্ত সামান্য দান অনেকের বেঁচে থাকার পাথেয়। নামাজ আর আমাদের ধর্মগ্রন্থ পড়তে উৎসাহিত করে যেটা মেডিটেশন আর আত্মশুদ্ধির কাজে আসে। ২০১৬ সালে জাপানি বিজ্ঞানী ইওশিনোরি ওশুমি ওটোফেজির ওপর গবেষণা করে নোবেল পেয়ে আমার বোঝানোর কাজটা সহজ করে দিয়েছেন। ১৯৬২ সাল থেকেই যদিও এ গবেষণার শুরু। মোটামুটি ১২ ঘণ্টা বা আরও বেশি সময় না খেয়ে শরীরের কোষের ওপর স্ট্রেস সৃষ্টি করা হয় যা নষ্ট অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দিয়ে নতুন কোষ সৃষ্টি করে। ক্যানসার, পারকিনসনস থেকে শুরু করে অনেক রোগ প্রতিরোধ করে, হাড় ও পেশির স্বাস্থ্য ঠিক রাখে। অনেক গবেষণা চলছে এখনো। ছোট্ট লেখাতে এতটুকুই দিলাম।

স্যানডিয়াগোতে তিনটা বড় মসজিদ। ইসলামিক সেন্টারও বলা যায়। প্রতি রমজান মাসে উইক এন্ডে আমরা ইফতার করি নানা দেশের মুসলমানদের সঙ্গে। আমরা বাংলাদেশিরা এক সপ্তাহ স্পনসর করি। খতম তারাবিহ্‌ হয়। ছোট আকারে বিভিন্ন বাসায় ইফতার আর তারাবিহ্‌ পড়া তো হয়ই। মসজিদগুলোতে সারা বছর কোরআন শিক্ষা, বিভিন্ন স্কলারদের আনা হয়, ফান্ড রাইজিং হয়।

মুসলিম স্কলার প্রসঙ্গেও সেদিন মার সঙ্গে আমার দাদার বিষয়ে কথা হচ্ছিল। যিনি ব্রিটিশ আমলে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের প্রফেসর ছিলেন। প্রথম যখন কাজে যোগদান করেছিলেন তখন আশরাফ আলী থানবীর সাহেব, যার মুরিদ ছিলেন তিনি, তাঁর কাছে জিজ্ঞেস করেছিলেন, হুজুর ক্লাসে তো মেয়েরাও থাকবে, আমার পড়ানোটা কি উচিত হবে? তাঁর উত্তর ছিল ছেলেরা আল্লাহর বান্দা, মেয়েরা কি আল্লাহর বান্দা না? আমাদের এ ধরনের স্কলারদের খুব দরকার। মেয়েদের কত সম্মান সেই শত বছর আগে দিয়ে গিয়েছেন।

ছোটবেলায় দাদা বা নানার ফার্স্ট ডিভিশনের সার্টিফিকেট এবং সেই তুলনায় নিজের ফাঁকিবাজির কারণে বকা শুনে মহাবিরক্ত হতাম। আজকে চোখে পানি এল, শিক্ষার আলোটুকু না থাকলে মানুষ হিসেবে তো বেঁচেই থাকতে পারতাম না। এই রোজার মাসে দেশের সব মেয়ের জন্য দোয়া, সবাই যেন মানুষ হিসেবে সম্মান নিচে বেঁচে থাকতে পারেন। অকালে ঝরে যেতে না হয়।