পৃথিবীর সব মা ভালো থাকুন

আমাদের হাসপাতালে কয়েক দিন ধরে একজন রোগী ভর্তি। মাত্র ৩৫ বছর বয়স। কিন্তু ক্যানসার ছড়িয়ে পড়েছে সারা শরীরে। পাঁচ বছরের একটা মেয়ে আছে তাঁর। ৬৫ বছর বয়সী মা যতক্ষণ পারেন রোগীর কাছে থাকেন আর বাকি সময় বাচ্চাটার দেখাশোনা করেন। রোগীর অবস্থা প্রতিদিন শুধু খারাপ হচ্ছে। প্রতিদিন রোগীকে বুঝিয়ে বলি, কোনো ওষুধ মৃত্যুকে থামাতে পারে না। কিন্তু রোগী বলে চলেন, ডাক্তার কিছু একটা করো প্লিজ। কষ্ট কমাতে ওষুধ দিলে কেমন অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যান। রোগীর মা দেখলেন বসে বসে তিন দিন। তারপর গত বৃহস্পতিবার (৯ মে) রোগীর পাঁচ বছরের মেয়েকে সঙ্গে এনে বললেন, ‘অ্যানকে তুমি গুডবাই বলো। এ লড়াইতে আমরা হেরে গেছি।’ রোগী তাঁর বাচ্চার হাত ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে তাঁর মাকে বললেন, ‘মা, ওকে ছেড়ে আমাকে যেতে বলো না।’ আর আমার হাত ধরে বলে চললেন, ‘এই মা দিবস আমাকে পালন করে যেতে দাও, তুমি পারবে।’

লেখিকা
লেখিকা

সান্ত্বনা দিয়ে বাইরে আসতেই রোগীর মা চলে এলেন। বললেন, ‘তোমাকে কি একটা হাগ দিতে পারি?’ এতক্ষণ যাঁকে শক্ত মুখ করে মেয়েকে বোঝাতে দেখেছি, তাঁর ডুকরে ডুকরে কান্না সহ্য করা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। একটু পরে মুখ ধুয়ে হাসি হাসি চেহারা করে তিনি রুমে ঢুকে গেলেন। আমি নিজের রুমে এসে নিজেকে সামলে নিলাম। আমার কাজটাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি কিন্তু মাঝেমধ্যে সৃষ্টিকর্তা এত বেশি পরীক্ষায় ফেলেন! রোগী মারা যাবেন যেকোনো মুহূর্তে। এদিকে মা দিবসের আরও দুই দিন বাকি—এ বছর মা দিবস ১২ মে। তাই নার্সকে ডেকে বললাম, রোগীর ঘরে আজই হ্যাপি মাদার্স ডে লিখে সাজাও। আর রোগীর মেয়েকে বললাম, মার জন্য যত গিফট বানিয়েছে সব নানির সঙ্গে গিয়ে এক্ষুনি নিয়ে আসতে। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রোগীর দিন তারিখের হিসাব থাকার কথা না। বিকেলে রোগীর ঘরে উঁকি দিয়ে দেখি রোগীর মুখে স্বর্গীয় হাসি। বললেন, ‘ইউ ডিড ইট ডক। বুঝতেই পারিনি এ বছর মা দিবস এসে গেছে দুই দিন আগে।’

বের হয়ে গেলাম ওই ওয়ার্ড থেকে। ছয় তলায় আরেক রোগীর ছেলে চলে এসেছে অন্য স্টেট থেকে। মাকে নিয়ে বাসায় যাবে, খুশিতে রোগী ডোনাট খাওয়াচ্ছে সবাইকে।

ছয়টার সময় বাসায় আসছি। নার্স টেক্সট করল প্রথম রোগীর জন্য। সাহস হারিয়েছি ওই টেক্সট খোলার। রাস্তায় প্রচণ্ড ভিড়। ২১ মাইল যেতে আজ দুই ঘণ্টা লাগবে। যেতে যেতে চিন্তা করছি, মাদার্স ডেতে কচি কচি শিশুরা স্কুল থেকে কত কিছু বানিয়ে আনে। একেকটা মায়ের কাছে কী প্রচণ্ড আনন্দ সেদিন। হৃদয়কে কেটে শরীরের বাইরে হাঁটতে দেওয়াই তো সন্তান। পৃথিবীর সব মা খুব ভালো থাকুন, হাজার বছর ধরে মা দিবস পালন করুন। সন্তানেরাও একটু সময় পাক মার কিছু সেবা করার।