টরন্টোয় দুই বাংলার যৌথ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

টরন্টোয় দুই বাংলার যৌথ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার একটি দৃশ্য
টরন্টোয় দুই বাংলার যৌথ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার একটি দৃশ্য

কানাডার টরন্টোয় জাঁকজমক হাস্যকৌতুক আর ব্যান্ড গানের আনন্দপূর্ণ আবহে অনুষ্ঠিত হলো আনন্দধারা পারফর্মিং আর্টসের রিদম্ অব স্টারসের অনুষ্ঠানমালা। টরন্টোর রেলসাইড রোডের টরন্টো প্যাভিলিয়নে ১১ মে শনিবার সন্ধ্যায় এই অনুষ্ঠানের শুরু হয় আনন্দধারা ড্যান্স একাডেমির ‘এই পৃথিবী একই মাটি একই আকাশ বাতাস’ নৃত্য পরিবেশনা দিয়ে।

উদ্বোধনী নাচের কোরিওগ্রাফি করেন আনন্দধারা ড্যান্স একাডেমির শিপ্রা চৌধুরী। নাচটিতে অংশ নেয় অঙ্কিতা এঞ্জেল সাহা, অন্বিতা এমিলি সাহা, অনিতা বড়ুয়া, এমা বড়ুয়া, রিশিতা বড়ুয়া, প্রাপ্তি বড়ুয়া, স্মিতা বসাক ও অনুষা রায়।

অনুষ্ঠানের থিম সং গানটির সঙ্গে উদ্বোধনী নাচ দিয়ে আয়োজনের সুরকে বেঁধে মঞ্চে আসেন সঞ্চালনার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশের অজন্তা চৌধুরী ও পশ্চিম বাংলার প্রিতম চৌধুরী। দুই বাংলার মানুষের একই সমাজ, ভাষা, সংস্কৃতি, সংগীত ও সাহিত্যের মিলন বার্তা দিয়ে শুরু হয় রিদম অব স্টারসের অনুষ্ঠানমালা। সঞ্চালক দুই বাংলার অভিন্ন ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরে বলেন, সীমান্তের বাধা সত্ত্বেও আমাদের সাংস্কৃতিক-সামাজিক ঐক্য বজায় থাকবে আবহমান কাল ধরে।

টরন্টোয় দুই বাংলার যৌথ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার একটি দৃশ্য
টরন্টোয় দুই বাংলার যৌথ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার একটি দৃশ্য

এরপর মঞ্চে আসেন জি বাংলার মীরাক্কেলখ্যাত রাজশাহীর তরুণ আবু হেনা রনি। তার পরিবেশনার মধ্যেই তিনি মঞ্চে আহ্বান করেন বাংলাদেশের মঞ্চ-রেডিও-টিভি-সিনেমাখ্যাত নাট্যজগতের অন্যতম অভিনেতা ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ফজলুর রহমান বাবুকে। যিনি বিশেষত তাঁর কৌতুকপূর্ণ ও হাস্যরসাত্মক অভিনয়ের জন্য খুবই জনপ্রিয়। ফজলুর রহমান বাবু অবশ্য এই অনুষ্ঠানে কয়েকটি নাটকের গান ও লোকপ্রিয় গান পরিবেশন করে ভিন্নতর পরিচয় রাখেন। তাঁরা দুজন দুই দফায় মঞ্চে কৌতুক ও গান পরিবেশনার মাধ্যমে পুরো হলকে মাতিয়ে তোলেন।

মাঝে পশ্চিম বাংলার নাট্যশিল্পী রাজশ্রী রায় মঞ্চে নিয়ে আসেন ‘ইতি: একটি মেয়ের কথা’ শীর্ষক একক নাট্য পরিবেশনা। নাটকটির নাট্যকার সুমিত্র ব্যানার্জি। পরিচালনায়ও ছিলেন তিনি। নাটকটিতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর নিজস্ব অস্তিত্ব নিয়ে টিকে থাকার সংগ্রাম বিবৃত হয়েছে। রাজশ্রী রায় মঞ্চে বুঝতেই দেননি তিনি মাইক্রোফোন ছাড়াই ডায়ালগ বলছেন। দর্শকেরা উপভোগ করেছেন তাঁর একক পরিবেশনা।

টরন্টোয় দুই বাংলার যৌথ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার একটি দৃশ্য
টরন্টোয় দুই বাংলার যৌথ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার একটি দৃশ্য

উল্লেখ্য, বর্তমানে টরন্টোপ্রবাসী এই নাট্যশিল্পী এক সময় কলকাতার মঞ্চ, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনে নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। নাটকটিতে শব্দনিয়ন্ত্রণে ছিলেন অনুপ সেনগুপ্ত। মিউজিক ডিরেক্টর ছিলেন সৌমেন দত্ত। প্রোডাকশন ডিজাইনে ছিলেন কিংশুক ভট্টাচার্য ও লিপি ব্যানার্জি। এ ছাড়া নাটকের কবিতা অংশটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন সকলের পরিচিত মুখ শুভ্রা সাহা।

নাটকের পরিবেশনা শেষে দুই সঞ্চালক দর্শক-শ্রোতাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য মঞ্চে আহ্বান জানান এই অনুষ্ঠানের নেপথ্যের কুশীলবরদের। যাদের পরিশ্রমের ফসল হিসেবে দর্শক-শ্রোতারা অনুভব করেন এই অনুষ্ঠানের সফলতা। মঞ্চে আসেন রিদম অব স্টারস অনুষ্ঠানের সংগঠক শিপ্রা চৌধুরী, পাপিয়া সেনগুপ্ত, চম্পা মুখার্জি ও রাজশ্রী রায়। তাঁদেরসহ ফুলের তোড়া দিয়ে সম্মাননা জানানো হয় এই অনুষ্ঠানের প্রাইম স্পনসর জয়দীপ সরকারকে। এ ছাড়া সংগঠকেরা অন্য সকল স্পনসর, আগত অতিথি শিল্পী, স্বেচ্ছাসেবী কর্মী ও দর্শকদের প্রতি অনুষ্ঠান সফল করে তোলায় উদার সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

টরন্টোয় দুই বাংলার যৌথ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার একটি দৃশ্য
টরন্টোয় দুই বাংলার যৌথ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার একটি দৃশ্য

এরপরই ঈদ উপলক্ষে ভাসাভিস্ বুটিক কালেকশনের পক্ষ থেকে বাঙালির ঈদ ও বিয়ের পোশাকের বর্ণিল ফ্যাশন শো নিয়ে মঞ্চে আসে প্রবাসী প্রজন্মের একদল তরুণ। ফ্যাশন শোর নির্দেশনায় ছিলেন শিপ্রা চৌধুরী। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ভাসাভিসের কর্ণধার নাহিদ আক্তার। ফ্যাশন শোর শেষে মঞ্চে টরন্টোতে ভাষা আন্দোলনের শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার পক্ষ থেকে ফান্ড রাইজিংয়ে জন্য ব্যারিস্টার চয়নিকা দত্তসহ আরও অনেকে। আগত অতিথি শিল্পী ও সংগঠকদের পক্ষ থেকে শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতার জন্য সকলকে সাধ্যানুযায়ী এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

টরন্টোয় দুই বাংলার যৌথ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার একটি দৃশ্য
টরন্টোয় দুই বাংলার যৌথ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার একটি দৃশ্য

বিরতির পর মঞ্চে আসেন বাংলা ব্যান্ড জগৎ দাপিয়ে বেড়ানো বর্তমানের অন্যতম জনপ্রিয় দ্য অনুপম রায় ব্যান্ড, সংক্ষেপে টিএআরবি। ব্যান্ডের ভোকাল ও লিড প্রকৌশলী অনুপম রায় স্বয়ং। তিনি ইতিমধ্যে বাংলা ও হিন্দি সংগীত জগতে নিজের আসর পাকা করে নিয়েছেন। ২০১০ সালে তার গড়া এই ব্যান্ড এখন দেশে-বিদেশে নিরন্তর নিজেদের সৃষ্টি নিয়ে মঞ্চ মাতিয়ে বেড়াচ্ছে। এই ব্যান্ডে অনুপম রায়ের সঙ্গে যন্ত্রশিল্পী ও সহযোগী হিসেবে ছিলেন কিবোর্ড ও ব্যাকিং ভোকাল নবারুণ বোস নবী, ড্রামে সন্দীপন পাড়িয়াল, ইলেকট্রিক ও অ্যাকুস্টিক গিটারে ঋষভ রায়, বেস গিটারে কৌস্তুভ বিশ্বাস এবং শব্দ নিয়ন্ত্রণে শমী চ্যাটার্জি। এই দলটির দেশ-বিদেশে দৌড়াদৌড়ির সার্বিক ব্যবস্থাপনার কঠিনতর কাজটি সামলান ম্যানেজার রানা সিংহ রায়। ব্যান্ডের গান শুরু হলে সত্যিকার অর্থেই হলে ভিড় উপচে পড়েছিল। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে অনুপম রায় তাঁর গানের গায়কি এবং ব্যান্ড গানের মন মাতানো আবহে বুঁদ করে রেখেছিল সমগ্র হলের এ প্রান্ত ও প্রান্ত। সামগ্রিক অনুষ্ঠানের পরিপ্রেক্ষিতে মনে হয়, টিকিট কেটে অনুষ্ঠান উপভোগের আনন্দ পূর্ণ করেই দর্শকেরা হল থেকে ফিরেছেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুই বাংলার প্রবীণ, যুবা ও তরুণেরা।