ব্যাংককে বাংলাদেশ বিজনেস কমিউনিটির ইফতার
বাংলাদেশসহ মুসলিম দেশগুলোতে রমজান শুরুর আগ থেকেই শুরু হয় সাজসাজ রব। রমজানকে স্বাগত জানাতে ব্যস্ত থাকেন সবাই। বাংলাদেশে অনেক বিপণিবিতানে করা হয় আলোকসজ্জা। সাহরির সময় পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ থেকে সাইরেন বাজানো হয়। পাড়ার ছেলেরা ইসলামি গান গেয়ে মানুষকে জাগাতে চেষ্টা করে। কেউ কেউ ঘণ্টা বাজায়। মুসলমানেরা সানন্দে আরামের ঘুম ত্যাগ করে খাবারের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। রোজা কেন্দ্রিক দান, জাকাত, ফিতরা ব্যতীত অন্যান্য দান খয়রাতও চলে মাসব্যাপী। রমজানে রেডিও-টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ইসলামি অনুষ্ঠান প্রচার করতে থাকে। ইফতারের সময় পরিবার-পরিজন নিয়েই ইফতার করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে বাংলাদেশের মানুষ। পুরো রমজান মাস জুড়েই থাকে একটা উৎসব উৎসব ভাব।
কিন্তু আমরা যারা অমুসলিম দেশগুলোতে থাকি তাদের জন্য রোজার মাসটা একটু কষ্টের। এই জন্য যে, এই সব দেশে অফিস-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব খোলা থাকে। সাত সকালে ঘুম থেকে উঠে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে হয়। নিজেদেরও কাজের উদ্দেশে বের হয়ে যেতে হয়। যখন ফিরি তখন ইফতারের সময় হয়ে যায়। এখানে না শুনতে পারি আজান, না পাই পেঁয়াজি–বেগুনি–ছোলার ঘ্রাণ। তারপরেও আমরা যারা ব্যাংককে থাকি তারা ছুটির দিন শনি-রোববারে কোনো ভাই-ভাবি বা বোনের বাসায় সবাই মিলে ইফতার করি। তখন অনেকের সঙ্গে দেখা এবং একসঙ্গে দেশীয় আমেজে ইফতারও করা হয়।
গত ১০ জুন সকালের দিকে থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ ব্যবসায়ী কমিউনিটির সদস্য আমাদের প্রিয় আলী ভাইয়ের ফোন। ইসমাত তুমি কোথায়? বাচ্চাদের নিয়ে সন্ধ্যায় মেরাজ হোটেলে চলে আস। বাংলাদেশ বিজনেস কমিউনিটির পক্ষ থেকে ওখানে ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। বিকেলে আবারও ভাইয়ের ফোন। ইসমাত রওনা দিয়েছ? আমি বললাম আসছি। বাসা থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্ট লিংক ধরে গেলে মাত্র ছয় মিনিটে রামকামহাং স্টেশন। তারপর মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ। হোটেলে পৌঁছার আগেই শুরু হলো মুষলধারে বৃষ্টি। যখন মেরাজ হোটেলে পৌঁছালাম মোটামুটি ভিজে গেছি।
আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাইদা মুনা তাসনীমসহ ব্যাংককে অবস্থানরত অনেক বাংলাদেশি। মুষলধারে বৃষ্টি উপেক্ষা করে আমরা সবাই মিলিত হয়েছিলাম মেরাজ হোটেলে।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই কোরআন তিলাওয়াত করে শোনান হয়। তারপর বাংলাদেশ বিজনেস কমিউনিটির পক্ষ থেকে স্বাগত বক্তব্য দেন আবদুল মুক্তাদির। ঝুম বৃষ্টি উপেক্ষা করে ইফতার পার্টিতে উপস্থিত হওয়ার জন্য তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
নির্ধারিত সময়ে মিলনায়তনের মাইক্রোফোনে প্রচার করা হয় আজান। অনেক দিন পর আজান শুনলেও কেমন যেন শ্রুতি মধুর লাগে। প্রথমেই খেজুর, পানি, দুধ, সমুচা দিয়ে ইফতার শুরু হয়। তারপর নামাজ। নামাজের ব্যবস্থা ছিল হোটেলের চারতলায়। এর পরেই ডিনার পর্ব। নানা রকমের খাবারের সমারোহ ছিল। ফ্রায়েড রাইস, চিকেন, বিফ, নুডলস, সালাদ, মাছ ভাজা, কেক, পায়েস ও নানা রকমের মৌসুমি ফল।
অনেক অনেক ধন্যবাদ থাইল্যান্ডের বাংলাদেশ বিজনেস কমিউনিটির সদস্যদের। বিশেষ করে আবদুল মুক্তাদির, আজিজুল হক, মোহাম্মদ আলী খান, নিয়ামত আলী বাদল, মোহাম্মদ আদম আলী, মোস্তাফিজুর রহমান, ইশতিয়াক আহমেদ দুলাল, আমিন মুহাম্মদ শোয়েব, সিরাজ মিয়া মামুন ও আমিরুল ইসলামকে। তারা এই ইফতার পার্টির আয়োজন করে আমাদের এক জায়গায় করেছিলেন কিছু সময়ের জন্য।