ফ্রান্সে আন্তর্জাতিক ভাষা মেলায় বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে হয়ে গেল ২৭তম আন্তর্জাতিক ভাষা মেলা। ১৯৯২ সাল থেকে তুলুজ শহরে Carrefour Culturel Arnaud-Bernard–এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই মেলা। ফ্রান্সে মার্সাইয়ের পর তুলুজ দ্বিতীয় শহর যেখানে এই মেলা হয়ে থাকে। মেলায় প্রতিবছর বিশ্বের এক শরও বেশি দেশ অংশগ্রহণ করে। এ মেলায় অংশ নিয়েছেন তুলুজপ্রবাসী বাংলাদেশিরা।

অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দেশের জন্য স্থানীয় মেয়রের পক্ষ থেকে বরাদ্দ থাকে স্টল। এক দিনের এই মেলা চলে দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। প্রতিটি দেশ তার নিজ নিজ দেশের সংস্কৃতি ও ইতিহাস তুলে ধরে। স্টলে থাকে এতিহ্যবাহী খাবার, নানা রংবেরঙের পোশাক ও বাদ্যযন্ত্রসহ অন্য জিনিস। মেলার এক পাশে করা হয় উন্মুক্ত মঞ্চ। সেখানে প্রতিটি দেশ নাচ, গান, আবৃত্তি ও নাটক প্রভৃতি পরিবেশনার মাধ্যমে তাদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি তুলে ধরে।

সংস্কৃতি বলতে আমরা সাধারণত সমাজে জনগোষ্ঠীর একগুচ্ছ রীতিনীতি, ধ্যানধারণা ও সামাজিক আচরণকে বুঝে থাকি। ভৌগোলিক সীমান্তের দরুন সাংস্কৃতিক পার্থক্য ঘটে থাকে। কোনো একটি বিশেষ সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ভাষা, বর্ণ, খাদ্যাভ্যাস, সামাজিক আইনকানুন, সংগীত ও শিল্পকলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

স্মরণাতীতকাল থেকে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি বহন করছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে তা সঞ্চারিত হয়েছে। সংস্কৃতির মাধ্যমে মানুষ একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে এবং একই সাংস্কৃতিক পটভূমিতে একটি জনগোষ্ঠী গড়ে তোলে। বিবর্তনের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া জনগোষ্ঠীর পরিচায়ক রূপে সেই জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিকে চিহ্নিত করা হয়। সাংস্কৃতিক পরিণয়ের মাধ্যমেই আমরা পূর্বপুরুষের কাছ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন গুণাবলি অর্জন ও ধারণ করেছি, যা জীবনের অর্থ চিহ্নিত করে। সাংস্কৃতিক বহনের মাধ্যমেই কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যসমূহ ফুটে ওঠে।

আর এসব সংস্কৃতি তুলে ধরার লক্ষ্যে ফ্রান্সের তুলুজে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের পক্ষে ২০০৪ সাল থেকে বাংলাদেশি কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশন তুলুজ এই মেলায় অংশগ্রহণ করে আসছে। ১৫ বছর ধরে এই মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে যথেষ্ট পরিচিতি পেয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাস। বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় এবারও আন্তর্জাতিক ভাষা মেলায় অংশগ্রহণ করেছে বাংলাদেশি কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশন তুলুজ।

বাংলাদেশের স্টলে প্রদর্শন করা হয় ফরাসি ভাষায় অনূদিত ইতিহাস সম্পর্কিত বই ও বাংলা বর্ণমালা। এ ছাড়া ছিল বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত তথ্যচিত্র প্রদর্শনী। উন্মুক্ত মঞ্চে গ্লরিয়া ইভার পরিচালনায় বাংলাদেশি নৃত্য পরিবেশন করে স্থানীয় শিশুশিল্পীরা।

মেলায় উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফখরুল আকম সেলিম, জাহাঙ্গীর হোসেন, জোসেফ ডি কস্তা, তাজিম উদ্দিন, ফারুক হোসেন, ফিরোজ আল মামুন, শাকিল চৌধুরী, মার্ক রায়, রেমন্ড ডি কস্তা ও মিশুক হোসেন। প্রবাসী বাংলাদেশিসহ বিশ্বের অন্য দেশের মানুষের আগমনে এই মেলা পরিণত হয় এক আন্তর্জাতিক মিলনমেলায়।