খেলা দেখতে নয়, দেশ দেখতে

ছেলে অনুভবসহ লেখক
ছেলে অনুভবসহ লেখক

লন্ডনে শুরু হয়েছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। বিশ্বের সেরা ১০ দেশের খেলা। সেই দশে বাংলাদেশ একটি উজ্জ্বল নাম। আমাদের দেশ। আমাদের অহংকার। আমাদের বিজয়। লন্ডনকে বলা হয় তৃতীয় বাংলা। ঢাকা, কলকাতার পর লন্ডন। লন্ডন বাংলাভাষী মানুষের শহর।

মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাঙালিরা বসতি স্থাপন শুরু করে লন্ডনে। তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত ব্রিটেনের লোকবলের প্রয়োজন ছিল। বাঙালিরা সেই সুযোগ নেয়। তখন ভিসা লাগত না। মানুষ আসত ভাউচার নিয়ে। জাহাজে চেপে। কাজ করতে এসেই থেকে যাওয়া। তারপর তারা আনতে শুরু করলেন পরিবার। শুরু হলো বসতি স্থাপন। বৈরী আবহাওয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, বর্ণবাদীদের মার খেতে খেতে বাঙালি একদিন মাথা তুলে দাঁড়াল।

আজ ব্রিটেনের এমন কোনো এলাকা নেই, যেখানে বাঙালি নেই। চারদিকে বাঙালির গৌরবগাথা। বাঙালি চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, রাষ্ট্রদূত, মেয়র, এমপি, বিচারক। কী নেই তাদের!

আর এই লন্ডন শহরেই বাঙালিরা খেলতে এসেছে। একটি মায়া মায়া দেশ থেকে। লাল-সবুজের পতাকা হাতে। বিজয় ছিনিয়ে নিতে। খুব সুখের সংবাদ। আমি লন্ডনে বসবাস করা এক বাঙালি। আমি কি বসে থাকতে পারি! আমাকে দেখতে হবে না, পতাকা হাতে কারা এল। আমাকে কি চিৎকার করে বলতে হবে না, আরেকটু জোরে মারো ভাই। আরেকটা ছক্কা দেশটাকে জিতিয়ে দেয়, দেশ জিতলে আমি জিতি। দেশকে জেতানোর জন্য সব সময় এক পায়ে দাঁড়ানো।

গত রোববার ওভালে গিয়েছিলাম বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ দেখতে। দক্ষিণ লন্ডনের ওভালে। স্টেডিয়ামে ঢুকেই মনটা ভরে গেল। চারদিকে বাংলাভাষী মানুষ। উড়ছে বাংলাদেশের পতাকা। যেন একখণ্ড বাংলাদেশ। আমি যতটাই না খেলা দেখি, তার চেয়ে বেশি তাকিয়ে দেখি মানুষের মুখ। মুখের অভিব্যক্তি। চোখের ভাষা। বাংলাদেশ একটি রান পেলেই মানুষগুলোর চোখ কেমন উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। অনেক নারী, শিশু এসেছে যারা খেলার কিছুই বোঝেন না। কিন্তু বাংলাদেশ-বাংলাদেশ বলে উচ্ছ্বাস প্রকাশে, প্রেম প্রকাশে তিনি এক খ্যাপা ঝড়। পতাকাটা বুকের শক্তি দিয়ে ধরে রেখেছেন। আর আমার ছোট ছেলে অনুভব, যার জন্ম ব্রিটেনে, মূল ভাষা ইংরেজি (বাংলাও বলতে পারে), সেও লাল-সবুজের পতাকাটা ওড়াতে-ওড়াতে পাখি হয়ে যায়। আমি এসব দেখি আর চোখ ভরে ওঠে জলে—আহারে দেশ।

আজ বুধবার বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচ। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। সেই ওভালেই। খেলা দেখতে যাব বাপ-বেটা দুজনেই। ছেলে ইতিমধ্যেই ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। খেলা তো দেখতে যাব না, যেন একটা দেশ দেখতে যাব। একটা দেশের মায়া মাখতে যাব। বাংলাদেশ, তুমি জিতলে আমি জিতি, তুমি হারলে আমি হারি। প্লিজ সবাই দোয়া করবেন বাংলাদেশের জন্য। যেন একটা সম্মানজনক অবস্থান আমরা পাই—এইটুকুই।