নাগোয়া রেলওয়ে পার্ক

শিনকানসেনের প্রদর্শনী
শিনকানসেনের প্রদর্শনী

জাপানিরা যেসব বিষয় নিয়ে গর্ববোধ করতে পারে তার মধ্যে অন্যতম হলো, তাদের উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা। আর জাপানের যোগাযোগব্যবস্থার এই ঈর্ষণীয় উন্নয়নের পেছনে তাদের রেলওয়ের বিশেষ করে দ্রুতগতির (বুলেট) ট্রেন বা শিনকানসেনের ভূমিকা সুদূরপ্রসারী। জাপানের রেলওয়ের ইতিহাস অনেক পুরোনো ও সমৃদ্ধ। রেলওয়ের এই অভূতপূর্ব উন্নয়নের পেছনে রয়েছে বিভিন্ন প্রজন্মের অবদান। জাপানের রেলওয়ের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রজন্মের স্বপ্ন আর স্মৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য রয়েছে নানা রকম আয়োজন।

নাগোয়া রেলওয়ে পার্ক এ রকমই একটি প্রয়াস। প্রকৃতপক্ষে এটি একটি অত্যাধুনিক রেলওয়ে জাদুঘর। জাপানের রেলওয়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভের জন্য এটি একটি চমৎকার আয়োজন। নান্দনিক সব প্রদর্শনীর মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে দেখানো হয়েছে কীভাবে রেল যোগাযোগ জাপানের সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও মানুষের জীবনপ্রবাহে আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে।

জাপানের রেলওয়ের এই উন্নয়ন রাতারাতিই সম্ভব হয়নি। তাদের এই সাফল্য আসলে বহু প্রজন্মের স্বপ্ন, মেধা, শ্রম ও সাধনার ফসল। ১৯৬৪ সালে চালু হওয়া জিরো সিরিজের শিনকানসেনের গতি ছিল যেখানে ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটার, সেখানে ২০০৩ সালে চালু হওয়া সুপার কন্ডাক্টিং ম্যাগলেভ ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ৫৮১ কিলোমিটার। শিনকানসেনে প্রতিনিয়তই যুক্ত হচ্ছে নতুনত্ব।

লেখক
লেখক

দেশটির শিশুদের মধ্যে রেলওয়ের প্রতি ভালোবাসা ও নাগরিক দায়বদ্ধতা জাগ্রত করার জন্য রয়েছে নানা রকম আয়োজন। এর মধ্যে শিনকানসেন ড্রাইভিং সিমুলেটর অন্যতম। শিশুরা এখানে শিনকানসেন চালনার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে। রয়েছে লার্নিং কক্ষ। যেখানে ছাত্রছাত্রীরা জানতে পারে কীভাবে তাদের স্কুলের পদার্থবিজ্ঞানের জ্ঞান রেলওয়ের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়।

স্কুল থেকে ছাত্রছাত্রীদের এই জাদুঘর পরিদর্শনের জন্য নিয়ে আসা হয়। অনুসন্ধিৎসু মনের নানা রকম প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য জাদুঘরে রয়েছে তাদের প্রশিক্ষিত স্টাফ। অভিভাবকদের সঙ্গে আসা কয়েকজন শিশুকে আগ্রহ নিয়েই জিজ্ঞাসা করলাম ভবিষ্যতে কে কী হতে চায়। অকপটে তারা জানাল, ভবিষ্যতে কেউ হতে চায় রেলওয়ে প্রকৌশলী, আবার কেউ কেউ হতে চায় শিনকানসেনের চালক।

জাপানি শিশুরা শৈশবে রেলওয়ে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শেখে। আর বাংলাদেশের শিশুরা ট্রেনে ঢিল ছোড়ে পাশবিক বিনোদনের জন্য। এ বিষয়টি ভাবতে গেলে সত্যিই মনটা ভারী হয়ে আসে।
...

মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন: শিক্ষার্থী, কিউশু ইউনিভার্সিটি, জাপান।