ওমানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঈদ

ঈদের জামাতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা
ঈদের জামাতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা

ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আনন্দ। তবে প্রবাসীদের জীবনে বাস্তবতাটা একটু অন্য রকম। এখানে ঈদ মানে শূন্যতা, ঈদ মানে না পাওয়ার কষ্ট। পরিবার–পরিজন ছাড়া ঈদ করার কষ্টটা একমাত্র প্রবাসীদেরই নিতে হয়। ঈদের দিন দেশে ফেলে আসা প্রিয়জনদের শূন্যতা ভালোভাবেই নাড়া দেয় প্রবাসী মন। তারপরও হাহাকার ছাপিয়ে ঈদের আনন্দটা উপভোগের চেষ্টা থাকে সবার। উৎসাহ-উদ্দীপনা আর ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যে দিয়েই উদ্‌যাপন করেন পবিত্র ঈদ। যেমনটি এবারও করেছেন ওমানপ্রবাসী বাংলাদেশিরা।

নতুন পোশাক পরা, ঈদগাহ-মসজিদে নামাজ, পুনর্মিলনী আর বেড়ানোর মাধ্যমে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপন করেন মধ্যপ্রাচ্যের সমৃদ্ধ দেশ ওমানপ্রবাসী বাংলাদেশিরা।

সন্তানদের নিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেন অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি
সন্তানদের নিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেন অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি

সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় মঙ্গলবার (৪ জুন) ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপিত হলেও চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ওমানে ঈদ উদ্‌যাপিত হয় বুধবার (৫ জুন)। দেশটির বিভিন্ন ঈদগাহ ও মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানী মাসকাটে প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় সুলতান কাবুস গ্র্যান্ড মসজিদে। ওমান সরকাররে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিসহ এশিয়া ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলিমরা এই জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করেন।

ঈদে বেড়ানোতে প্রবাসী তরুণেরা
ঈদে বেড়ানোতে প্রবাসী তরুণেরা

রাজধানী মাসকাট ছাড়াও সালালাহ, সোহার, সাহাম, সুর, জালান, ইব্রি, বারকা, সিব, রুসতাকসহ ওমানের বিভিন্ন শহরে স্থানীয় নাগরিকদেরও সঙ্গে ঈদ জামাতে অংশ নেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। প্রতিটি জামাতের মোনাজাতে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে দোয়া করা হয়। নামাজ শেষে বাংলাদেশি বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করেন। কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ঈদ শুভেচ্ছা জানান প্রবাসীদের।

ঈদ পুনর্মিলনীতে চট্টগ্রাম সমিতি ওমান পরিবার
ঈদ পুনর্মিলনীতে চট্টগ্রাম সমিতি ওমান পরিবার

ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশি কমিউনিটির সংগঠনগুলো রেস্তোরাঁ, পার্ক, বাগান বা সংগঠনের নেতাদের কারও বাসায় পুনর্মিলনীরও আয়োজন করে। চট্টগ্রাম সমিতি ওমান পরিবারের ঈদ পুনর্মিলনী আয়োজন করা হয় সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরীর বাসভবনে। এ সময় ইয়াছিন চৌধুরী বলেন, ‘ঈদ মানেই পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া। কিন্তু আমাদের পরিবার এখানে থাকলেও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব দেশে থাকায় সবার সঙ্গে ঈদ করার আনন্দটা সত্যি খুব মিস করি। তাই প্রবাসী একসঙ্গে মিলিত হয়ে কিছুটা ভাগাভাগির চেষ্টা করে থাকে।’

বন্দরনগরী সোহারে ঈদের জামাত শেষে মসজিদের সামনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা
বন্দরনগরী সোহারে ঈদের জামাত শেষে মসজিদের সামনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা

এ ছাড়া পুনর্মিলনীর আয়োজন করে বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাব, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির স্থানীয় শাখাসহ প্রবাসী বিভিন্ন সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী ও ক্রীড়া সংগঠনগুলো।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘খুব কমসংখ্যক প্রবাসী পরিবার নিয়ে ওমানে থাকেন। আমার মতো বেশির ভাগেরই পরিবার দেশে। পরিবার-পরিজন ছাড়া ঈদের আনন্দটা জমে না কখনো। দেশের সবাইকে খুব মনে পড়ে।’

ঈদ পুনর্মিলনীতে আপ্যায়ন
ঈদ পুনর্মিলনীতে আপ্যায়ন

বিএনপির স্থানীয় নেতা মোহাম্মদ পারভেজ বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো আনন্দ করে এখানে ঈদ হয় না। দলমত-নির্বিশেষে প্রবাসীরা একে অপরের বাড়িতে গিয়ে রোমন্থন করি দেশের ঈদের স্মৃতি। আর প্রবাসের নতুন প্রজন্ম বঞ্চিত হচ্ছে দেশের ঈদের আনন্দ থেকে।’

ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা দেশে তাই প্রবাসের স্বজন-পরিচিতদের ঘরে ঘরে বেড়ানো আর মিলনীর মধ্য দিয়ে ঈদ আনন্দ খুঁজে নিচ্ছেন প্রবাসী পরিবারের সদস্যরা।

ঈদ পুনর্মিলনীতে প্রবাসী পরিবার
ঈদ পুনর্মিলনীতে প্রবাসী পরিবার

অনেকে বিশেষ করে তরুণেরা শহরের দর্শনীয় স্থানগুলোয় দল বেঁধে বেড়ানো মধ্য দিয়ে ঈদ আনন্দ মেতে উঠেছেন।

ঈদ উপলক্ষে এবার বিভিন্ন অপরাধে জেলে থাকা ৪৭৮ জন বন্দীকে রাজকীয় ক্ষমা ঘোষণা করেছেন দেশটির শাসক সুলতান কাবুস বিন সাইদ আল সাইদ। এর মধ্যে ২৪০ প্রবাসী রয়েছেন।