জাপানে সাকুরা লেডিস ক্লাবের ঈদ পুনর্মিলনী

জাপানে সাকুরা লেডিস ক্লাবের ঈদ পুনর্মিলনী
জাপানে সাকুরা লেডিস ক্লাবের ঈদ পুনর্মিলনী

অমুসলিম দেশে বসবাসরত প্রবাসীদেরও কি ঈদ মানে কয়েক দিনের ছুটি কিংবা কেনাকাটা? দল বেঁধে ঈদের জামাতে যাওয়া, নামাজ শেষে প্রিয়জনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দোয়া করা, সারা দিন বন্ধুবান্ধব–আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে ঘোরাঘুরি এবং সন্ধ্যার পর সবাই মিলে জম্পেশ আড্ডা আর বিভিন্ন চ্যানেলের অনুষ্ঠানগুলো উপভোগ করা?

আবার সাপ্তাহিক কর্মদিবসে ঈদ হলে, বলতে গেলে এগুলোর কোনো কিছুই নেই এই সব অমুসলিম দেশে বসবাসরত প্রবাসীদের মধ্যে। এসব দেশে ঈদ উপলক্ষে কোনো ছুটি নেই। কর্মদিবসে ঈদের দিন খুব ভোরে ঈদের নামাজ আদায় করে সময়মতো কর্মস্থলে যাওয়া এবং দিন শেষে ঘরে ফেরা! তাই বলে কি ঈদে কোনো আনন্দ হবে না? তাই এসব দেশে বসবাসরত প্রবাসীরা তাকিয়ে থাকেন ঈদ–পরবর্তী সাপ্তাহিক ছুটির দিকে।

এবার টোকিও এবং এর আশপাশে বসবাসরত প্রবাসীদের মধ্যে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে গুন্মা-তচিগি অঞ্চলে এক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত সাকুরা লেডিস ক্লাব গত রোববার (৯ জুন) আয়োজন করে ঈদ পুনর্মিলনীর। এতে অংশ নেন বাংলাদেশ কমিউনিটির বিশিষ্টজন, ব্যবসায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-ছাত্র, গৃহবধূ, শিশু-কিশোর মিলিয়ে অনেক অতিথি। তাঁদের অংশগ্রহণে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান যেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। অনুষ্ঠানে সংগঠনের বর্ষপূর্তিও উদ্‌যাপন করা হয়।

দুপুর থেকেই অতিথিরা নিজস্ব গাড়িতে করে রাজধানী টোকিও থেকে প্রায় ১০০ মাইল পশ্চিমে সবুজ ধানখেত ঘেরা এক মনোরম পরিবেশে অবস্থিত তাতেবায়্যাসি কমিউনিটি সেন্টারে আসতে শুরু করেন। মুহূর্তেই ভরে যায় অনুষ্ঠানস্থল। সাকুরা লেডিস ক্লাবের পক্ষ থেকে সবাইকে সুস্বাদু ও মজাদার সব খাবার দিয়ে দুপুরে আপ্যায়ন করা হয়। দুপুরের প্রীতিভোজের পর সবার মধ্যে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে আয়োজন করা হয় এক সাংস্কৃতিক পর্বের।

জাপানে সাকুরা লেডিস ক্লাবের ঈদ পুনর্মিলনী
জাপানে সাকুরা লেডিস ক্লাবের ঈদ পুনর্মিলনী

প্রথমেই সাকুরা লেডিস ক্লাবের সদস্য নার্গিস আইরিন, সুলতানা রহমান, টুম্পা মনি, মুন্নি, জাকিয়া হোসাইন, যুথী চৌধুরী, জান্নাতুল সরকার শম্পা, রিফাত রহমান কচি ও আয়েশা হান্নান মীমকে পরিচয় করিয়ে দেন ক্লাবের সভাপতি মুনা ইব্রাহীম। এরপর মুন্নির উপস্থাপনায় ছোট্টমণি মুগ্ধ, নেসওয়ান ও মাসরুরের কোরআন থেকে তিলাওয়াত ও জাপানিজ তর্জমার মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। আমাদের আরেক ছোট্টমণি সুলাইমান সাদ (ঈসা) অতি মধুর কণ্ঠে পরিবেশন করে ত্রিভুবনে প্রিয় মুহাম্মদ...। ঈদুল ফিতরের থিম সং ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ’ পরিবেশন করেন ক্লাবের সকল সদস্য-পরিবার। এরপর মিতু ও জাকিয়া কবিতা আবৃত্তি করে শোনায়। জাকিয়ার বাংলাটা ঠিক আসে না, কবিতার আবৃত্তি সবারই মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।

নাচ-গান ছাড়া কি কোনো অনুষ্ঠান উপভোগ্য হয়। আমাদের গ্রাম–বাংলার আনাচকানাচে যে কত প্রতিভা লুকিয়ে আছে, তার প্রমাণ ক্লোজআপ ওয়ানের মতো অসংখ্য ট্যালেন্ট হান্টিং প্রোগ্রাম। ঠিক তেমনি প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যেও লুকিয়ে আছে অজানা প্রতিভা। তাই তো প্রথমবারের মতো গান ও নাচ পরিবেশন করে দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন টুম্পা মনি ও নার্গিস আইরিন। ক্লাবের সদস্যদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বের সমাপ্তি করা হয় চট্টগ্রামের ভাষার কুইজ পর্ব দিয়ে। অর্থাৎ চট্টগ্রামের ভাষার শুদ্ধ বাংলা অর্থ। পর্বটি সবাই খুব উপভোগ করেছেন।

জাপানে সাকুরা লেডিস ক্লাবের ঈদ পুনর্মিলনী
জাপানে সাকুরা লেডিস ক্লাবের ঈদ পুনর্মিলনী

দ্বিতীয় পর্বে একের পর গান পরিবেশন করে দর্শকদের মাতিয়েছেন টোকিও থেকে গোলাম মাসুম জিকোর নেতৃত্বে আগত একদল তরুণ শিল্পী। এ তরুণ গ্রুপটিতে জিকো ছাড়াও ছিলেন দীপ্ত (ঝিঁঝি পোকা, ভোকালিস্ট), অভি (ঝিঁঝি পোকা, কি–বোর্ড), সিমন (স্বরলিপি, বাস), সপ্তর্ষি (স্বরলিপি, গিটার) ও দুর্জয় (স্বরলিপি, ড্রাম)।

পোশাকপরিচ্ছদ ও সাজসজ্জা ঈদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আগত অতিথিরা ছিলেন জমকালো ও চোখধাঁধানো সাজসজ্জায় সজ্জিত। মূল হলরুমটার সাজানোটা ছিল সবার কাছে একটা বাড়তি আকর্ষণ। প্রতিটি কর্মেই যেন ছিল চারুকলার জ্ঞানসমৃদ্ধ এক শৈল্পিক হাতের ছোঁয়া। এ জন্যই সাকুরা লেডিস ক্লাবের পক্ষ থেকে তানিয়াকে বিশেষভাবে পুরস্কৃত করা হয়। কেউ কারও প্রতিপক্ষ না, একে অপরের পরিপূরক। এই মন্ত্র ধারণ করেই টোকিওভিত্তিক সংগঠন বাংলাদেশ উইমেন্স ক্লাবের পক্ষ থেকে কাকলি ও সোমা সাকুরা লেডিস ক্লাবের বর্ষপূর্তিতে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান।