খণ্ডগিরি পর্বত

খণ্ডগিরির গুহাগুলোতে পেইন্টিং ও খোদিত—দুই ধরনের চিত্রশিল্পেই চলমান সমাজ-আলেখ্যের চেয়ে নান্দনিক ভাবনার বিভাস ঘটেছে বেশি
খণ্ডগিরির গুহাগুলোতে পেইন্টিং ও খোদিত—দুই ধরনের চিত্রশিল্পেই চলমান সমাজ-আলেখ্যের চেয়ে নান্দনিক ভাবনার বিভাস ঘটেছে বেশি

খণ্ডগিরি পর্বতের মাথায় দাঁড়ালে চারপাশের নাগরিক পরিবেশের বিস্তীর্ণ চেহারা চোখে পড়ে। স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, ব্যাংক, মার্কেট, হোটেল ও রেস্টুরেন্টসহ জনজীবনের হাজার ছবির চলমান দৃশ্যপটে চারদিকটা কোলাহল মুখরতায় রীতিমতো সরগরম। কল্পনার জগতে ডুব না দিলে আড়াই হাজার বছর আগেকার নির্জন তপোভূমির সুগভীর নিশ্বাসটুকু উপলব্ধি করা যায় না।

এদিকটায় গাছপালার ভিড় নেই। বেশির ভাগ জায়গা এবড়োখেবড়ো। পাথরের চাঁই বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে রয়েছে জগদ্দল পাথরের বোঝা হয়ে। কোনোটা আবার পাহাড়ের হৃদয় ফুঁড়েই উঠে এসেছে ভিসুভিয়াসের দুর্দান্ত ইরাপশনের মতো। উদয়গিরির চেয়ে এখানে মানুষের সংখ্যাও বেশি।

খণ্ডগিরির গুহাগুলোতে পেইন্টিং ও খোদিত—দুই ধরনের চিত্রশিল্পেই চলমান সমাজ-আলেখ্যের চেয়ে নান্দনিক ভাবনার বিভাস ঘটেছে বেশি
খণ্ডগিরির গুহাগুলোতে পেইন্টিং ও খোদিত—দুই ধরনের চিত্রশিল্পেই চলমান সমাজ-আলেখ্যের চেয়ে নান্দনিক ভাবনার বিভাস ঘটেছে বেশি

উন্মুক্ত পরিবেশে প্রাণচাঞ্চল্যে অস্থির হয়ে ছোটাছুটি করে খেলা করছিল গুটিকয়েক শিশু। অম্বরীশ প্রধানের চোখে সে দৃশ্য ধরা পড়তেই মন্তব্য করলেন, এদিকটায় মন্দির থাকার দরুন লোকজনের ভিড় সব সময়ই থাকে। এদের কেউ ট্যুরিস্ট নয়। সুচরিত সঙ্গে সঙ্গে বলল, মন্দিরের সীমানা ছেড়ে সাধারণ মানুষ যাতে এদিকটায় না আসতে পারে, সেই ব্যবস্থা থাকলে ভালো হয়। ওই তো দেখুন, কতগুলো বাচ্চা গুহাগৃহের ভেতর ছোটাছুটি করে লুকোচুরি খেলছে। অথচ ওখানে তাদের বাধা দেওয়ার কেউ নেই।

অম্বরীশ লজ্জা পেয়ে কুণ্ঠিত হয়ে বললেন, আসলে এসব বিষয়ে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের অনুভূতি সে রকম শার্প নয়। সে জন্য ম্যানেজমেন্টও এখানে সেভাবে.... ! অনেক অমূল্য সম্পদ এ কারণেই আমরা নষ্ট করে ফেলি।

খণ্ডগিরির গুহাগুলোতে পেইন্টিং ও খোদিত—দুই ধরনের চিত্রশিল্পেই চলমান সমাজ-আলেখ্যের চেয়ে নান্দনিক ভাবনার বিভাস ঘটেছে বেশি
খণ্ডগিরির গুহাগুলোতে পেইন্টিং ও খোদিত—দুই ধরনের চিত্রশিল্পেই চলমান সমাজ-আলেখ্যের চেয়ে নান্দনিক ভাবনার বিভাস ঘটেছে বেশি

উদয়গিরির মতো খণ্ডগিরির গুহাগুলোরও ভিন্ন ভিন্ন নাম রয়েছে। সেগুলোও উদয়গিরির মতো গাণিতিক সংখ্যায় চিহ্নিত করা। সে রকম একটি চিহ্নের দিকে সুচরিত দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই অম্বরীশ জানালেন, ভারতের আর্কিওলজিক্যাল সার্ভের প্রতিষ্ঠাতা আলেকজান্ডার কানিংহাম এটা করেছিলেন। এখানেও কি নিয়মিত আর্কিওলজিক্যাল জরিপ চলে সূর্যমন্দিরের মতো? হ্যাঁ, হ্যাঁ। এর কোনো ব্যত্যয় হয় না। এ সম্পর্কে জানার জন্য বিস্তৃত গবেষণামূলক বইও রয়েছে। এর মধ্যে ১৯২৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিশ করা একটা বই পুরোনো হলেও জনপ্রিয়। বেণীমাধব বড়ুয়ার লেখা। ৩৬০ পৃষ্ঠার বই। নাম Old Brahmi inscriptions in the Udayagiri and Khandagiri Caves.

কথা শেষ করেই গাইড আবার বললেন, এখন আমরা অনন্ত গুম্ফের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছি। খণ্ডগিরি পর্বতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুম্ফ এটি। দেখুন, এর দুই পাশের দরজায় সাপের দুটি ফিগার রয়েছে। এ জন্য সর্প গুম্ফ বলেও এটি পরিচিত। উদয়গিরি থেকে এখানকার সব গুম্ফের দেয়ালচিত্রই আলাদা। মানে, এদের বিষয়বস্তু আলাদা। আচ্ছা একে গুম্ফ কেন বলা হচ্ছে?
এখানকার স্থানীয় ভাষায় গুম্ফ মানে গুহা। সে জন্য গুম্ফ হিসেবেই গুহাগৃহগুলো পরিচিত। দরজায় সাপের ফিগার কেন?

সাপের ফিগার যোগীদের সাধন-ভজনের স্বস্তিকা চিহ্ন। এই সাপ হচ্ছে মানবদেহের মেরুদণ্ডের প্রতীক। বৌদ্ধ, জৈন, সনাতন, সব মতের যোগীদের কাছেই মেরুদণ্ডের সাত চক্র, আধ্যাত্মিক সাধনায় উত্তরণের সোপান। চক্রগুলোর ভিন্ন ভিন্ন নাম রয়েছে।

খণ্ডগিরির গুহাগুলোতে পেইন্টিং ও খোদিত—দুই ধরনের চিত্রশিল্পেই চলমান সমাজ-আলেখ্যের চেয়ে নান্দনিক ভাবনার বিভাস ঘটেছে বেশি
খণ্ডগিরির গুহাগুলোতে পেইন্টিং ও খোদিত—দুই ধরনের চিত্রশিল্পেই চলমান সমাজ-আলেখ্যের চেয়ে নান্দনিক ভাবনার বিভাস ঘটেছে বেশি

খণ্ডগিরির গুহাগুলোতে পেইন্টিং ও খোদিত—দুই ধরনের চিত্রশিল্পেই চলমান সমাজ-আলখ্যের চেয়ে নান্দনিক ভাবনার বিভাস ঘটেছে বেশি। তাদের সবার আড়ালে বহতা রয়েছে, যোগীদের যোগসাধনার সুগভীর তত্ত্বের স্রোত। শিল্পসৌকর্যে উৎকর্ষ হয়ে দেয়ালে দেয়ালে সেসব তত্ত্ব দৃশ্যচিত্র হয়ে ফুটেছে। কোথাও সরোবরের জলে প্রস্ফুটিত পদ্মফুলে শ্রীময়ী লক্ষ্মী দেবী পা রেখে স্নান করছেন। কোনো চিত্রে নীল পদ্মের কুঁড়ি ঠোঁটে নিয়ে উড়ন্ত বলাকার মালা অসীম শূন্যতায় ধাবমান। কোথাও হিংস্র সিংহ কিংবা উন্মাদ বুনো ষাঁড়ের পিছে তাড়া করে চলেছে এক ঝাঁক উদ্দীপ্ত বালক। কোথাও আবার রহস্যময়ী নারী চার ঘোড়ার রথ চালিয়ে উল্কাবেগে ঘোড়া ছুটিয়েছে নিরুদ্দেশের পথে। দুরন্ত হাওয়ায় উড়ে যাচ্ছে তার দীর্ঘ কেশ ভার। বসন উড়ছে নৌকোর পালের মতো।

অম্বরীশের মুখের নিটোলতা কখন মিলিয়ে গিয়েছিল, জানা নেই বহ্নিদের। বহু সময় পরে কথা বলতে গিয়ে নজরে এল, তার ভাবনা থেকে বর্তমান যেন হারিয়ে গেছে। গাইড বললেন, এগুলোর সবই প্রতীকী দৃশ্যচিত্র। এই সিংহ আর ষাঁড় হচ্ছে মানব মনের উদ্দাম কামনা-বাসনার রূপকল্প। তাদের সংযম করতে হলে দৃঢ়তার সঙ্গে বলিষ্ঠ মনে ওই বালকদের মতো বিশ্বাস নিয়ে দমন করতে হবে! বহ্নি কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল, আর ঘোড়ার রথে চড়া ওই রমণী? উনি ধাবমান জগতের প্রতীক। সৃষ্টিশীল জগৎ কখনো স্থির হয়ে থাকে না। ভারতের প্রাচীন পণ্ডিতেরা তাই বলেছিলেন, যা নিরন্তর ঘুরছে, তা-ই জগৎ। এ যুগের পণ্ডিতেরাও বলছেন, পৃথিবী নিজ অক্ষপথে থেকে সূর্যের চারদিকে অবিরাম ঘুরছে। আর উড়ন্ত হাঁসগুলো? ওরা সত্যের সন্ধানী। যোগীদের কাছে বলাকা ও নীল পদ্ম শান্তি আর পবিত্রতার প্রতীকী রূপ। নোংরামি এদের ছুঁতে পারে না। হাঁস ও পদ্ম পাঁকে ডুবেও নোংরা হয় না কখনো। মানুষের জীবনও যখন বিশুদ্ধ হয়, সত্যের সন্ধান খুঁজে পায় মানুষ। আর সত্যের সন্ধান পেলে ওই শ্রীময়ী লক্ষ্মী দেবীর মতোই সুন্দর হয়ে ওঠে মানবজীবন।

একটি গুহায় মানুষের ফিগারের ওপর ঘোড়ার মুখ দেখে কৌতূহলী হলো বহ্নি। আধ্যাত্মিক দর্শনের তীর্থভূমি হিসেবে ভারতীয় উপমহাদেশে হাজার হাজার বছর ধরে লালিত হয়েছে জানা-অজানা অনেক ধর্মমত। সত্যের অন্বেষণে, মানসিকতার ভিন্ন রুচিতে, চিন্তার বৈচিত্র্যে শিল্পচেতনাও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকেনি। বহু ধরনের শিল্প সৃষ্টি হয়েছে ধর্মসাধনাকে কেন্দ্র করেও। কিন্তু মানবদেহের ওপর পশুর মুখ স্থাপনের চিন্তা কী ভারতবর্ষের নিজস্ব ভাবনা ছিল? বহ্নি তাই নিছক কৌতূহল থেকেই জানতে চাইল, এখানে মানুষের শরীরে ঘোড়ার মুখ বসানো হয়েছে কেন? গাইড এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে বললেন, রাজা দক্ষের ছাগমুণ্ড হয়েছিল। হিরণ্যকশিপুর সামনে বিষ্ণুদেব নরসিংহরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। পার্বতীপুত্র গণেশেরও হাতির মাথা রয়েছে। হ্যাঁ, জানি। তার কারণ হিসেবে গল্পও রয়েছে। কিন্তু আমি জানতে চাইছি, এই শিল্পভাবনা ভারতেই জন্মেছিল, নাকি মিসর থেকে...।

খণ্ডগিরির গুহাগুলোতে পেইন্টিং ও খোদিত—দুই ধরনের চিত্রশিল্পেই চলমান সমাজ-আলেখ্যের চেয়ে নান্দনিক ভাবনার বিভাস ঘটেছে বেশি
খণ্ডগিরির গুহাগুলোতে পেইন্টিং ও খোদিত—দুই ধরনের চিত্রশিল্পেই চলমান সমাজ-আলেখ্যের চেয়ে নান্দনিক ভাবনার বিভাস ঘটেছে বেশি

বহ্নির জিজ্ঞাসার জবাবে সুচরিত হঠাৎই বলে উঠল, স্টুডেন্ট লাইফে অ্যাডলফ আরম্যানের লেখা একটা বই পড়েছিলাম। নাম, Life of Ancient Egypt. তাতে পড়েছিলাম, খ্রিষ্টজন্মের অনেক আগে থেকে মিসর আর ভারতের মধ্যে সব ধরনের যোগাযোগ ছিল। কিন্তু সেখানে এও বলা হয়েছিল, গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের অনেক আগে থেকেই মিসরের উন্নত সভ্যতার ওপর ভারতের সরাসরি প্রভাব ছিল। তার সম্পর্ক আফ্রিকার সঙ্গে যতটা নিবিড় ছিল, তার চেয়ে ঢের বেশি ছিল দ্রাবিড়িয়ান সভ্যতার সঙ্গে। অতএব...।

এক সভ্যতার ওপর আরেক সভ্যতার প্রভাব পড়ে শত সহস্র বছর ধরে। এভাবেই গড়ে উঠেছে নতুন সভ্যতা ও সংস্কৃতি। রূপ নিয়েছে শিল্প, ঐতিহ্য, নানা ধর্মমত। এভাবেই এক জনস্রোতের সঙ্গে আরেক জনস্রোতের মহামিলনে জন্ম নিয়েছে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ধারা। কিন্তু তারপরও সভ্যতা, ধর্ম, সংস্কৃতি, কৃষ্টি কিংবা জাতি নিয়ে দেশে দেশে, জাতিতে জাতিতে, ধর্মে ধর্মে মিথ্যে ভেদরেখা রচনা করে নিজের ঐতিহ্য কিংবা অতীতের অস্তিত্ব নিয়ে গর্ববোধ করতে মানুষ ভালোবাসে। সংঘর্ষ সৃষ্টি করে সহিংস হয়ে ওঠে বারবার। অথচ বাস্তবতা হলো, অনাদিকাল ধরে অভিজ্ঞতা সঞ্জাত হয়ে মানুষ জ্ঞান অর্জন করেছে পরস্পরকে দেখেশুনে। সমাজসভ্যতা এগিয়ে নেওয়ার জন্য কখনো তা গ্রহণ করেছে জীবন কল্যাণের কথা ভেবে। কখনো তার অপপ্রয়োগ ঘটিয়েছে, চিন্তার কলুষতা দিয়ে।

কংক্রিটের ধুলো পথ ধরে বাঁশের চুবড়িতে ফলমূল নিয়ে নিচে নেমে আসছে এক কিশোর। দূর থেকেও চোখে পড়ল বহ্নির। তার পেছনে দ্রুত পায়ে হেঁটে আসছে ফড়িয়া গোছের একজন মানুষ। তার ঘাড়ের ওপর বসে রয়েছে মস্ত জাম্বুবানের মতো দেখতে এক লোমশ হনুমান। হঠাৎই মানুষটি কিছু না বলে কিশোরের চুবড়ি থেকে একটি কলা তুলে নিল। খেতে দিল হনুমানকে। তারপর লম্বা লম্বা পা ফেলে ওপরের দিকে উঠতে উঠতেই আড়াল হয়ে গেল। ছেলেটি নিষ্পলক চোখে বিহ্বল হয়ে তার চলে যাওয়া দেখল কিছুক্ষণ ধরে। তারপর বিমর্ষ মুখে ফের নামতে লাগল নিচের দিকে।

বহ্নি হেসে ফিসফিস করল স্বামীর কানের কাছে, দেখলে তো, দাম না দিয়েই কেটে পড়ল! অম্বরীশও লক্ষ করেছিলেন দৃশ্যটা। বিরক্ত হয়ে বললেন, পয়লা নম্বরের টাউট। এদের থেকে সাবধান থাকবেন। খণ্ডগিরিতে এখনো পর্যন্ত জৈন তীর্থংকরদের চোখে না পড়ায় অবাক হচ্ছিল সুচরিতরা। তাদের ধারণা ছিল, ইলোরার অজন্তা গুহায় যেমন জাতক কাহিনির বুদ্ধের বিস্তারিত চিত্র রয়েছে, এখানেও তেমনি থাকবে জৈন অবতারদের উপস্থিতি। সে সম্বন্ধে সুচরিত প্রশ্ন করতেই অম্বরীশ বললেন, সেসব নবমুনি গুম্ফে। পেছনের দেয়ালে রয়েছেন নয় তীর্থংকর। আর সব শেষের গুহায় ২৪ জন তীর্থংকরই রয়েছেন। প্রতীক চিহ্নগুলোও রয়েছে সেখানে। পবিত্র তীর্থ ভূমে তাঁদের উপস্থিতি না থাকলে চলে?

বহ্নির মন আবারও হাজার হাজার বছরের অতীত ইতিহাসের তলায় নিমগ্ন এখন। সামনেই পদ্মাসনে ধ্যানমগ্ন তীর্থংকরদের খোদাই করা পাথরের শরীর। অথচ অধ্যাত্ম অনুভূতির শান্ত আবেশ প্রত্যেকের মুখের ওপরেই প্রশান্তির মতো ছড়ানো। জীবনের কোন পর্যায়ে পৌঁছতে পারলে অধ্যাত্ম শিল্পের এতটা অম্লান পরশ ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হয়, সেটা কখনো ব্যাখ্যা করে বোঝানো যায় না বলেই অম্বরীশ প্রধানও সেই চেষ্টা করলেন না। কেবল ধ্যানমগ্ন পবিত্র মানুষগুলোর সামনে নীরব অনুভূতিতে দাঁড়িয়ে রইলেন।

কখন আড়াই ঘণ্টা সময় পেরিয়ে গেল, কে জানে। সুরেশের ট্যাক্সি পুরি শহরের দিকে ধাবমান। বহ্নি এক ফাঁকে প্রশ্ন করল, কোনার্ক মন্দিরের সঙ্গে এর পার্থক্য বুঝতে পারলে? সুচরিত শান্ত ছেলের মতো বলল, আমি আমার মতো করে বুঝেছি। সূর্যমন্দিরের মেসেজ হলো শক্তির তেজ। আর এখানে নিশুতি রাতের চাঁদের নিজর্নতা। বহ্নি এমন মন্তব্যে অবাক হয়ে শান্ত হাসল, বাঃ চমৎকার বললে তো! আমারও কিন্তু সেটাই মনে হলো। সূর্যমন্দিরের সবখানেই জীবনের গতিময়তা। মুখর জীবনের উদ্দামতা। মহাজীবনের আহ্বান দুর্দান্ত উল্লাসে ফেটে পড়ছে। কিন্তু এখানে ধ্যানের অতলে সবকিছু সমাহিত। ওই ২৪ জন পবিত্র তীর্থংকরের মতোই! (চলবে)

ধারাবাহিক এ ভ্রমণকাহিনির আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন: