বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি প্যানোরোমা জাদুঘর স্থাপনে অভিজ্ঞতা অর্জনে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ কনস্যুলেটের আয়োজনে গত মঙ্গলবার (১১ জুন) সকালে ইস্তাম্বুলের প্যানোরোমা ১৪৫৩ ঐতিহাসিক জাদুঘরে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় বাংলাদেশ থেকে আসা আট সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এস এম আরিফুর রহমান। এ সময় কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ও কনসাল বিদোষ চন্দ্র বর্মন উপস্থিত ছিলেন। প্যানোরোমা জাদুঘরের পক্ষে জেনারেল ম্যানেজার কেমাল কাপ্টানার, পরিচালক সালিহ ডোগান, প্রকল্প সমন্বয়ক হাশিম ভাটান্ডাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সফররত প্রতিনিধিদল পুরো জাদুঘরটি পরিদর্শন করে।
বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে কেমাল কাপ্টানার প্যানোরোমা ১৪৫৩ ঐতিহাসিক জাদুঘরের ওপর সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করেন। ১৪৫৩ সালে সুলতান মেহমুত কর্তৃক কনস্টান্টিনোপল জয়ের কাহিনিনির্ভর জাদুঘরটি ২০০৯ সালে স্থাপিত হয়। এ জাদুঘরটিকে বিশ্বের প্রথম পূর্ণ প্যানোরোমা জাদুঘর হিসেবে উল্লেখ করে তিনি অবহিত করেন, জাদুঘরের অভ্যন্তরে চারপাশে ঘিরে থাকা বিশাল ক্যানভাসে চিত্রটি আঁকেন শিল্পী ও প্রকল্প সমন্বয়ক হাশিম ভাটান্ডাসের নেতৃত্বে আটজন বোদ্ধাশিল্পী।
বিশালাকৃতির গম্বুজটি ৩৬০ ডিগ্রি কোণে এমনভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে, দর্শকেরা জাদুঘরের নিম্ন প্রকোষ্ঠে অবস্থান করার পরও মনে করেন, তাঁরা খোলা আকাশের নিচে বিশাল যুদ্ধ ময়দানে দাঁড়িয়ে আছেন। চিত্রটি ২ হাজার ৩৫০ বর্গমিটার আয়তনজুড়ে রয়েছে এবং ৩৮ মিটার ব্যাসবিশিষ্ট বৃত্তাকার। এ জাদুঘর নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করতে লেগেছে প্রায় তিন বছর। তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর প্রায় ৮ লাখ দর্শনার্থী ঘুরতে আসেন এ জাদুঘরে।
প্রসঙ্গক্রমে কেমাল কাপ্টানার তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যকার পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে বলেন, ভ্রাতৃত্বপূর্ণ দুই দেশ সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশেষত জাদুঘর স্থাপন ও তার ব্যবস্থাপনায় পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এক নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।
বাংলাদেশ ও তুরস্কের বিদ্যমান সম্পর্ককে বন্ধুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক হিসেবে আখ্যায়িত করে এস এম আরিফুর রহমান বলেন, জাদুঘরের নয়নাভিরাম আলোকচ্ছটা ও শৈল্পিক ছোঁয়া আমাদের সবাইকে মুগ্ধ করেছে। এ রকম নান্দনিক জাদুঘর স্থাপনের জন্য তিনি সাধুবাদ জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। সফরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস চিত্রায়িত করে উপস্থাপনের জন্য এ রকম একটি প্যানোরোমা জাদুঘর স্থাপনে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনার কথা ব্যক্ত করেন।
এ প্রসঙ্গে এস এম আরিফুর রহমান জাদুঘরের কাঠামো, স্থাপত্যের নকশা, নান্দনিকতা ইত্যাদি বিষয়ে কেমাল কাপ্টানারের কাছে বিস্তারিত জানতে চান। বাংলাদেশে এ রকম পূর্ণ প্যানোরোমা জাদুঘর স্থাপনে তিনি তাঁদের কাছে প্রয়োজনীয় সহযোগিতাও কামনা করেন।
কেমাল কাপ্টানার বাংলাদেশে প্যানোরোমা জাদুঘর স্থাপনে কারিগরি সব সহযোগিতা বিশেষ করে কাঠামো ও স্থাপত্য বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতার পূর্ণ আশ্বাস ব্যক্ত করেন।
সভা শেষে দুই দেশের বিদ্যমান সহযোগিতার সম্পর্ক আরও শক্তিশালী ও গভীর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশে প্যানোরোমা জাদুঘর স্থাপনে তুরস্কের সহযোগিতা বিশেষ করে, বিশেষজ্ঞ, শিল্পী, প্রযুক্তি ও জ্ঞান বিনিময়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। প্যানোরোমা জাদুঘর স্থাপনের বিষয়ে সহযোগিতা শুধু জ্ঞান ও প্রযুক্তি হস্তান্তরে সহায়তা করবে না, দুই দেশের বিদ্যমান সম্পর্ককে এক নতুন উচ্চতায় আসীন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, প্যানোরোমা স্থাপনার আদলে মহান মুক্তিযুদ্ধনির্ভর জাদুঘর স্থাপন করা হলে দর্শনার্থীরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করবেন এবং তা আনন্দচিত্তে ধারণ করতে পারবেন। একই সঙ্গে তাঁদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের মহান আত্মত্যাগ সম্পর্কে আগ্রহ আরও উদ্রেক করার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শাণিত করতে অবদান রাখবে। বিজ্ঞপ্তি