পুরোনো মানুষ

.
.

সিঙ্গাপুরে বিভিন্ন স্থানে প্রায় কিছু বয়স্ক নারী-পুরুষকে দেখা যায় সাইকেল চালিয়ে এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করতে। তাঁদের সাইকেলের সামনের দিকে ঝুলে থাকে কিছু পলিথিনের থলে আর পেছনের দিকে থাকে ভাঁজ করা কাগজের খালি বাক্স। তাঁরা কখনো পায়ে হেঁটে, কখনো চালিয়ে নিয়ে যান সাইকেল। ধীরগতিতে চলে সাইকেল। পুরুষদের পরনে থাকে টি-শার্ট ও হাফপ্যান্ট।

তাঁরা পরিত্যক্ত পানীয়র খালি কৌটা ও কাগজের খালি বাক্স কুড়িয়ে বিক্রি করে উপার্জন করেন। সিঙ্গাপুরে কাগজের খালি বাক্সের তুলনায় পানীয়র খালি কৌটা পাওয়া যায় বেশি। এগুলো প্রতিদিনই পাওয়া যায়। তবে অন্য দিনের তুলনায় শনি ও রোববার বেশি পাওয়া যায়।

কয়েক দিন আগে ক্লেমার্টি মার্কেটের পাশে এমন একজন বয়স্ক লোককে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার নাম কী? তিনি আমার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে বললেন, ইয়ো চুন কিয়ান। তারপর তাঁর সঙ্গে নানা বিষয়ে আলাপ হলো। জানালেন, তাঁর বয়স সত্তর বছর এবং স্ত্রী দুই বছর আগে মারা গেছেন। দুই ছেলে আর এক মেয়ে, তারা তাদের নিজ সংসারে বসবাস করছে। তিনি পাশের একটি স্কুলের সিঁড়ির পাশে কাঠের ঘরে থাকেন। প্রতিদিন স্কুলের বারান্দা ঝাড়ু দেন। এভাবেই তাঁর প্রতিদিন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয়।

সিঙ্গাপুরে স্থানীয় যাঁদের বয়স হয়েছে কিন্তু ভারী কোনো কাজ করতে পারেন না, তাঁরা অনেকে এই কাজগুলো করেন। তাঁরা কেউ পরনির্ভরশীল নন। বাংলাদেশেও বৃদ্ধরা বেঁচে থাকার তাগিদে উপার্জন করেন। কী অদ্ভুত পৃথিবীর খেলা! পৃথিবীতে এ রকম হাজারো বৃদ্ধ শুধু সিঙ্গাপুর বা বাংলাদেশে নন কোনো না কোনো কারণে পরিবার ছাড়া আলাদা জীবনযাপন করছেন। কেউ পরিস্থিতির কারণে, কেউ বা প্রিয়জনদের সুখী করে নিজেরাই থাকেন অগোচরে। কখনো কখনো অতি সুখের আশায় পরিবারের প্রিয় মানুষগুলোও একটা সময় তাঁদের বোঝা ভেবে রেখে আসেন বৃদ্ধাশ্রমের চার দেয়ালের মধ্যে। কেউ বা সবকিছু থাকার পরও জীবনের শেষ দিনগুলো বৃদ্ধাশ্রমের নরকযন্ত্রণা ভোগ করেন।

একদিন যে বোঝার ওজন ছিল তিলের সমপরিমাণ, পরবর্তী সময়ে সে বোঝার ওজন হয়ে যায় বিশালাকৃতির পাথরের সমান। বয়স্ক গাছ যদি ফল না–ও দেয় তবে শীতল ছায়া দেয় অবিরাম। পুরোনো ভেবে সহজে ফেলে দেওয়া যায় অনেক কিছু। কিন্তু হাজারো কষ্টেও ফেলে দেওয়া যায় না পুরোনো মানুষকে (বৃদ্ধ-বৃদ্ধা)। তাঁরা সামান্য সহানুভূতি আর ভালোবাসার প্রার্থী হয়ে নিভৃতে চোখের জল ঝরান নিশ্বাস ত্যাগের আগমুহূর্ত পর্যন্ত।