ড্রোনের বহুমুখী ব্যবহার

রাস্তার ফাটল শনাক্তকরণে ড্রোনের ব্যবহার। ছবি: সংগৃহীত
রাস্তার ফাটল শনাক্তকরণে ড্রোনের ব্যবহার। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বে ড্রোন নিয়ে চলছে উদ্ভাবনী গবেষণা। সঙ্গে বাড়ছে এই শিল্পের বাজারদর। পিডব্লিউসির মে ২০১৮–এর তথ্যমতে, বিশ্ববাজারে ড্রোনের ব্যবসা ১২৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে। আজ আমি আলোচনা করব ড্রোনের বহুমুখী ব্যবহার নিয়ে।

সেতু ও ভবনের ফাটল শনাক্তকরণ ও মেরামত

যোগাযোগ ব্যবস্থায় সেতু একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতিবছর সেতুর গুণগত মান নির্ণয়ের জন্য প্রচুর অর্থ ও সময় ব্যয় হয়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি দুই বছর পর পর সেতুর কাঠামোগত মান নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী বাজেট নির্ধারণ করা হয়।

ড্রোনের সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে সেতুর বাইরে কাঠামোগত মান নির্ণয় করা যায়। একই সঙ্গে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে মরিচসহ বিভিন্ন ছোট ফাটল মেরামত করা যায়। ড্রোনের এই যুগোপযোগী ব্যবহার সময়, খরচ ও মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারে। একই পদ্ধতিতে বড় বড় ভবন ও রাস্তার কাঠামোগত মান নির্ণয় ও মেরামত করা যায়।

পাহাড়ধসের আগাম সতর্কতা 

যেসব রাস্তা পাহাড় কেটে করা হয়, সেসব রাস্তায় পাহাড়ধস ও বেয়ে আসা বড় পাথর পরিবহন চালকদের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ। শুকনা মৌসুমে ড্রোন ব্যবহার করে এসব পাহাড়ের ছবি তুলে তা তুলনা করে প্রকৌশলীরা সম্ভাব্য পাহাড়ধস ও বেয়ে আসা পাথর পড়ার আশঙ্কা আগে থেকে বলতে পারেন।

যানবাহন শনাক্তকরণ ও গণনায় ড্রোনের ব্যবহার। ছবি: সংগৃহীত
যানবাহন শনাক্তকরণ ও গণনায় ড্রোনের ব্যবহার। ছবি: সংগৃহীত

যানবাহন শনাক্তকরণ ও গণনা 

নতুন রাস্তা তৈরি করা, রাস্তার লেন, সংখ্যা বাড়ানো, ট্রাফিক জ্যাম নিরসন ও পরিবহন খাতে বাজেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে প্রকৌশলীদের যানবাহনের সংখ্যা গণনার দরকার হয়। ড্রোনের সঙ্গে আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অন্তর্ভুক্ত করে এই কাজ খুব অল্প সময়ে সঠিকভাবে করা যায়। পরিকল্পক ও প্রকৌশলীরা জানতে পারেন যানবাহনের সংখ্যা ও প্রকারভেদ অর্থাৎ বাস, ট্রাক ইত্যাদি। এ ছাড়াও গবেষকেরা ড্রোন দিয়ে বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নিরাপদ সড়ক নির্মাণে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সিসিটিভি ক্যামেরার উচ্চতা নির্ধারণ 

দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণের জন্য রাস্তার বিভিন্ন সংযোগ পয়েন্টে সিসিটিভি ব্যবহার করা হয়। সিসিটিভির উচ্চতা যত বেশি হবে রাস্তার সংযোগ স্থান তত বেশি দেখা যাবে। কিন্তু একই সঙ্গে ভিডিওচিত্রের মান কমে যাবে। বিভিন্ন উচ্চতায় ড্রোন উড়িয়ে প্রকৌশলীরা উচ্চতা নির্ধারণ করতে পারবেন অনায়াসে।

ড্রোনভিত্তিক জমি পরিমাপ 

যেখানে বড় কোনো প্রজেক্টের জন্য জমি ভরাট ও কাটা–বিষয়ক ইঞ্জিনিয়ারিং তথ্য পেতে সময় নেয় কমপক্ষে সাত দিন অথবা তার চেয়ে বেশি, সেখানে ড্রোনের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত সেনসর ও Aerial Photogammetry ভিত্তিক সফটওয়্যার ব্যবহার এক ঘণ্টায় তৈরি করছে জমি পরিমাপক রিপোর্ট। এই রিপোর্ট থেকে প্রকৌশলী ও পরিকল্পকেরা জানতে পারবেন জমির ক্ষেত্রফল, জমির বিভিন্ন স্থানের উচ্চতা, জমি কতটুকু কাটতে হবে ও ভরাট করতে হবে, জমির পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ অন্য ইঞ্জিনিয়ারিং তথ্য। এ ছাড়া ডিজাইনের সুবিধার্থে Virtual Reality মাধ্যমে ওই জমিকে বিভিন্ন আঙ্গিকে দেখতে পারেন।

যন্ত্রপাতিতে তাপ–বিষয়ক ত্রুটি ও নদীতে পানির গুণগত মান নির্ধারণ করা 

বড় বড় শিল্প ও গ্যাস খনির যন্ত্রপাতিতে তাপ–বিষয়ক ত্রুটি, ড্রোনের সঙ্গে ইনফ্রারেড থার্মাল ক্যামেরা ব্যবহার করে নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী আগাম বিপদ এড়াতে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। এ ছাড়া নদীতে পানির রং পর্যবেক্ষণ করে ড্রোন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে পানির বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা যায়। শৌখিন আমেরিকানরা ড্রোনের সঙ্গে মাছ ধরার বড়শি ব্যবহার করে সমুদ্রে মাছ ধরে থাকেন।

লেখক
লেখক

কৃষিকাজে ড্রোন

আধুনিক বিশ্বের কৃষকেরা বড় খেত ও বাগানে পানি ও কীটনাশক প্রয়োগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন উদ্ভিদের রোগ নির্ণয়, বীজ বপন ও ফলের সংখ্যা গণনায় ড্রোনের ব্যবহার শুরু করেছেন। এতে তাঁরা কম সময়ে ও খরচে ফসলের দ্বিগুণ উৎপাদন পাচ্ছেন।

মানুষ, রক্ত ও পণ্য পরিবহন 

শহরের ব্যস্ততম ট্রাফিক জ্যাম এড়িয়ে ড্রোন আপনার প্রিয়জনের দুঃসময়ে এক ব্যাগ রক্ত পৌঁছে দিতে পারে মাত্র কয়েক মিনিটে। যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ব্লাডব্যাংক কোম্পানিগুলো ড্রোনের মাধ্যমে হাসপাতালে রক্ত পরিবহনের ব্যবস্থা রাখে। এ ছাড়া আমাজন অচিরেই ড্রোনের মাধ্যমে ক্রেতার হাতে পণ্য পৌঁছে দেবে। শিগগিরই নিউইয়র্কে ড্রোনভিত্তিক মানুষ পরিবহন ব্যবস্থা চালু করবে।

সামরিক ব্যবহার 

রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ড্রোনের সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে শত্রু ঘাঁটিতে আক্রমণের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় ইসরায়েল ও সিরিয়াযুদ্ধে। এ ছাড়া ড্রোনের সঙ্গে ইনফ্রারেড নাইট ভিশন ক্যামেরা ব্যবহার করে রাতে সীমান্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা করা যায়।
...

মুরাদ আল কোরাইশী: সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ও ড্রোন গবেষক। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম, টেনিসিতে কর্মরত। এই বিষয়ে লেখক তার মাস্টার্স গবেষণাপত্র সম্পাদন করেন। তার গবেষণাপত্রটি আইইইই (IEEE) জার্নালে প্রকাশিত হয়।