বাংলাদেশে বিনিয়োগ আকর্ষণে কানাডার উইন্ডসরে সেমিনার

বাংলাদেশে বিনিয়োগ আকর্ষণে কানাডার উইন্ডসরে সেমিনার
বাংলাদেশে বিনিয়োগ আকর্ষণে কানাডার উইন্ডসরে সেমিনার

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি ও বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে বাংলাদেশ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে রয়েছে স্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা, উৎপাদিত পণ্যের বিশাল বাজার ও উৎপাদনের জন্য নিম্ন শ্রম মজুরি। সর্বোপরি সরকারের পক্ষ থেকে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ প্রণোদনা প্যাকেজ। কানাডার ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য আয়োজিত এক সেমিনারে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজানুর রহমান এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশে বিনিয়োগ আকর্ষণে কানাডার উইন্ডসরে সেমিনার
বাংলাদেশে বিনিয়োগ আকর্ষণে কানাডার উইন্ডসরে সেমিনার

দেশটির বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগে ওন্টারিও প্রদেশের মোটরযান নির্মাণশিল্পের রাজধানী হিসেবে খ্যাত উইন্ডসরে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। উইন্ডসর ইউনিভার্সিটির অডিট স্কুল অব বিজনেস অনুষদের সেমিনার কক্ষে ১২ জুন উইন্ডসর-এসেক্স রিজওনাল চেম্বার অব কমার্স ও অডিট স্কুল অব বিজনেসের সহযোগিতায় এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র, বিনিয়োগের পরিবেশ, বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্র এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরা হয়।

সেমিনারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘বাংলাদেশ ইউর ডেস্টিনেশন ফর ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট’। উইন্ডসর ইউনিভার্সিটির অডিট স্কুল অব বিজনেস অনুষদের অ্যাসোসিয়েট ডিন প্রফেসর ড. ফজলে বাকীর সঞ্চালনায় আমন্ত্রিত অতিথিদের উপস্থাপনা, বাংলাদেশের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্য ভিডিও চিত্রের প্রদর্শনী, পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন ও প্যানেল ডিসকাশন এবং সর্বশেষে ইন্টারঅ্যাকটিভ প্রশ্নোত্তর পর্ব সেমিনারটিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।

উইন্ডসর ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ডগলাস ক্নেইলকে স্মারক উপহার দিচ্ছেন মিজানুর রহমান
উইন্ডসর ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ডগলাস ক্নেইলকে স্মারক উপহার দিচ্ছেন মিজানুর রহমান

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন মিজানুর রহমান। উইন্ডসর-এসেক্স রিজওনাল চেম্বার অব কমার্সের ৩০ জন কানাডীয় ব্যবসায়ী এতে অংশ নেন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন উইন্ডসর ইউনিভার্সিটির অডিট স্কুল অব বিজনেস অনুষদ ও প্রকৌশল অনুষদের শিক্ষকবৃন্দ, ব্যাংক কর্মকর্তা, উদ্যোক্তা, বিভিন্ন পেশাজীবী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বিশেষ অতিথি ছিলেন উইন্ডসর ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ডগলাস ক্নেইল, অডিট স্কুল অব বিজনেস অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মিতচেল ফিল্ডস, উইন্ডসর-এসেক্স রিজওনাল চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট ও সিইও রাকেশ নাইডু, উইন্ডসর-এসেক্স কানাডা-বাংলাদেশ সংগঠনের প্রেসিডেন্ট সাইফুল ভূঁইয়া।

শুরুতেই বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও উন্নয়নের চিত্র, বিনিয়োগ ইত্যাদির ওপর একটি প্রামাণ্য ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়। এর পরই সূচনা বক্তব্য দেন ডগলাস ক্নেইল। তিনি তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের দ্রুত উন্নতির প্রশংসা করেন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা ও অন্য ক্ষেত্রে কানাডার সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগের ধারা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অডিট স্কুল অব বিজনেস অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মিতচেল ফিল্ডসের সঙ্গে মিজানুর রহমান
অডিট স্কুল অব বিজনেস অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মিতচেল ফিল্ডসের সঙ্গে মিজানুর রহমান

মিজানুর রহমান তাঁর স্বাগত বক্তব্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণে এবং বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ২০২১ ও ভিশন ২০৪১ সম্পর্কে এবং বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র ব্যবসায়ীদের কাছে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যে একটি চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিদ্যমান। দুই দেশের বাণিজ্য ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুই দেশের এ সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের অনেক ভূমিকা রয়েছে। তিনি তাঁর উপস্থাপনায় আইটি ও সেবা খাতে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনাময় বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে আইটি ও দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (এসইজেড) কানাডিয়ান শিল্পাঞ্চল স্থাপনের গুরুত্বারোপ করেন। এ ছাড়া বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্র হিসেবে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যাল, তথ্যপ্রযুক্তি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, সিরামিকস, নবায়নযোগ্য শক্তি, ব্লু-ইকোনমি, ট্যুরিজম প্রভৃতিতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরে বিদ্যমান সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে বাণিজ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি তিনি কানাডার ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর উদাত্ত আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সেলর কমার্স মো. শাকিল মাহমুদ ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিস’ শিরোনামে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন। কানাডার সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের সামগ্রিক চিত্র এখানে তুলে ধরা হয়। মোটরযান নির্মাণশিল্পে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্য হতে কীভাবে মোটর গাড়ির প্যানেল, ড্যাশ বোর্ড কভার, গাড়ির সিট ইত্যাদি স্পেয়ার পার্টস নির্মিত হচ্ছে, তা তুলে ধরা হয়। কানাডার মোটরযান শিল্পে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় পাটজাত পণ্যের ব্যবহারের বিষয়টি গুরুত্বারোপ করা হয়। এ ছাড়া হাইটেক পার্ক ও নির্ধারিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে বরাদ্দ নিয়ে বিনিয়োগ করার সুযোগসহ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্রও তুলে ধরা হয়।

উইন্ডসর শহরের মেয়র ড্রিউ ডিলকেনসের সঙ্গে মিজানুর রহমান
উইন্ডসর শহরের মেয়র ড্রিউ ডিলকেনসের সঙ্গে মিজানুর রহমান

কাউন্সেলর রাজনৈতিক মিয়া মো. মাইনুল কবির পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে সংক্ষিপ্তভাবে বাংলাদেশের ইতিহাস, বিরাজমান স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ ও ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। এরপর তিনি বাংলাদেশের এমডিজি বাস্তবায়নের সাফল্য এবং এসডিজি বাস্তবায়নে বর্তমান অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি বিভিন্ন আঞ্চলিক জোটে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের এলডিসি থেকে এমআইসিতে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন, সুসংগঠিত ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান, সুবিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার ও কানেকটিভিটি বৃদ্ধিতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয়ে আলোকপাত করেন।

প্যানেল ডিসকাশন পর্বে অংশগ্রহণ করেন ড. মিতচেল ফিল্ডস, রাকেশ নাইডু, সাইফুল ভূঁইয়া, মো. মাইনুল কবির ও মো. শাকিল মাহমুদ প্রমুখ। তারা কানাডা ও বাংলাদেশের মধ্যকার বিদ্যমান ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে নিজ নিজ অবস্থান থেকে বক্তব্য পেশ করেন।

প্যানেল ডিসকাশন পর্ব শেষে প্রশ্নোত্তর ও মুক্ত আলোচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। বিপুল আগ্রহ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রশ্নোত্তর ও মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন আলোচক ও ব্যবসায়ী, শিক্ষক, ব্যাংক কর্মকর্তা, উদ্যোক্তা ও বিভিন্ন পেশাজীবী ব্যক্তিরা। অংশগ্রহণকারীদের পক্ষ থেকে হাইকমিশনের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানো হয়। কানাডা ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এ ধরনের উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সবাই আশা প্রকাশ করেন।

এ সেমিনার আয়োজনের পাশাপাশি উইন্ডসরে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে প্রবাসীদের জন্য গত ৯ থেকে ১১ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী কনস্যুলার সেবা প্রদান করা হয়। এতে বিপুলসংখ্যক কনস্যুলার সেবা প্রত্যাশীর সমাগম ঘটে।

এ ছাড়া সেমিনার শেষে হাইকমিশনার পর্যায়ক্রমে উইন্ডসর শহরের মেয়র ড্রিউ ডিলকেনস, উইন্ডসর-এসেক্স রিজওনাল চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট ও সিইও রাকেশ নাইডু, উইন্ডসর ইউনিভার্সিটির অডিট স্কুল অব বিজনেস অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মিতচেল ফিল্ডস এবং উইন্ডসরে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতা ও সদস্যদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে পৃথক পৃথক বৈঠকে মিলিত হন।

উল্লেখ্য, কানাডার বাংলাদেশ হাইকমিশন দেশটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে বিশেষ করে টরন্টো, মন্ট্রিয়ল, ক্যালগেরি, ভ্যানকুভার, ম্যানিটোবা, রেজিনা ও হ্যালিফ্যাক্স প্রভৃতি শহরে কনস্যুলার সেবা প্রদানের পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণে ও বিনিয়োগ আকর্ষণে প্রবাসীদের সম্পৃক্ত করে ধারাবাহিকভাবে পর্যায়ক্রমে এ ধরনের সেমিনার আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। বিজ্ঞপ্তি