বাবা

বাবা,

আজ থেকে অনেক বছর আগে তুমি আমাদের ছেড়ে চলে গেছ অনেক দূরে না-ফেরার দেশে। জানি না তুমি কেমন আছ। তোমার লাহিড়ী মোহনপুর এখন অনেক উন্নত। সেখানে পাকা রাস্তা, বিদ্যুৎবাতি সবই হয়েছে। তুমি শুধু দেখে যেতে পারলে না। যে লাহিড়ী মোহনপুরকে তুমি এত ভালোবাসতে, তার উন্নতিই ছিল তোমার মনের একান্ত কামনা। তুমি যখন কেবলই বলতে, একদিন লাহিড়ী মোহনপুরের উন্নতি হবেই, তখন আমরা শুধু হাসতাম। কিন্তু বাবা, আজ তোমার কথা, তোমার আশাই সত্যি হয়েছে। সেখানকার লোকজন এখনো তোমাকে অনেক ভালোবাসে। তোমার নামে ফুটবল প্রতিযোগিতা হয়—পুরস্কার দেওয়া হয়।

তুমি চলে যাওয়ার পর মা-ও আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। তুমি তোমার সন্তানদের তোমার আদর্শেই মানুষ করেছিলে, যাদের ওপরে জমিদারি মনোভাবের এতটুকুও ছায়া পড়তে দাওনি। তোমার কাছ থেকেই শিখেছি মানুষকে ভালোবাসতে আর আপন করে নিতে। আমরা তোমার ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন জায়গায় থাকলেও সবার সঙ্গে যোগাযোগ আর সুসম্পর্ক রেখেই চলেছি। তোমার নাতি-নাতনিরা সবাই বড় হয়ে নিজের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত। শুধু আমাদের মধ্যে নেই ছোড়দা, বউদি আর তোমার আদরের প্রণব এবং রাহুল। ওরা সবাই আমাদের ছেড়ে তোমার কাছে চলে গেছে। ওদের জন্য আমাদের খুব কষ্ট হয়।

বাবা, তোমার বারবার জেলে যাওয়া দেখে আমি ছোটবেলায় তোমাকে ‘জেলের মানুষ’ বলেই জানতাম। সিরাজগঞ্জের অমূল্যনাথ লাহিড়ী যে অন্য এক মানুষ, সেটা জানলাম বড় হয়ে। জানলাম, তুমি আমার গর্ব করার মতো বাবা, যে কিনা দেশের সাধারণ মানুষের জন্য কথা বলে, অন্যায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে দেশের মঙ্গলের জন্য বিপ্লব করে বারবার জেলে গেছে। তোমাকে দেখেছি টাকাপয়সা দিয়েও তোমার পার্টিকে সহায়তা করতে। বাবা, তুমি তো ছিলে মুক্তিযোদ্ধা। বহু ত্যাগ আর রক্ত দিয়ে পাওয়া সুন্দর স্বাধীন বাংলাদেশে আজ কেবলই গন্ডগোল আর রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব। স্বাধীনতার পর তুমি বলেছিলে, এ দেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। কিন্তু যখনই মাথা উঁচু করতে যায়, তখনই ঝড় আসে। তোমরা মুক্তিযোদ্ধারা তো চেয়েছিলে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে। জানি না তোমরা দেখে বুঝতে পারছ কি না দেশের বর্তমান অবস্থা।

বাবা, আমার যে তোমার কাছে যেতে ইচ্ছে করে। কেমন করে যাব বাবা? পারলে আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও। আশীর্বাদ  কোরো আমাদের আর এই দেশটাকে।

তোমার আদরের ছোট মেয়ে

শিপ্রা