প্রশান্তির শীতল আশ্রয় বাবা
শুধু বাবা দিবসে নয়, প্রতিদিনই বাবাকে খুব মনে পড়ে। এতিম সন্তানেরা বাবার না পাওয়া আদর-ভালোবাসার নিরন্তর হাহাকার সব সময় বয়ে বেড়ায় হৃদয়ের গহিনে। হয়তো কখনো কখনো নীরবে-নিভৃতে অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরায় বৃথা হালকা হওয়ার চেষ্টায়। জীবনের ব্যর্থতা, সফলতা—সব ক্ষেত্রেই বাবা নামক বটবৃক্ষের শীতল ছায়ার অভাব যেন দুর্ভিক্ষ, মহামারি, তার চেয়েও কঠিনে পতিত করে।
ব্যর্থতায় মনে হয় বাবা থাকলে হয়তো সঠিক কোনো নির্দেশনা দিতেন। এতে ব্যর্থতার সমস্ত গ্লানি মুছে নতুন শক্তি সঞ্চারিত হতো। আবার সফলতার সময় আরও নির্মমতা গ্রাস করে। হয়তো বাবা তাঁর ছেলের সফলতায় গর্বে বুক স্ফীত করে বলতেন, জানি তুমি পারবে। আমার ছেলে বলে কথা! ঘটা করে সব আত্মীয়স্বজন, পাড়া–প্রতিবেশী আর গরিব-দুঃখী মানুষকে দাওয়াত করে খাওয়াতেন এবং ছেলের আরও অনেক সফলতার জন্য দোয়া চাইতেন।
বাবা দিবস এলে আমাকে খুব কাতর করে। নিজের ভেতরটা গুমরে কেঁদে ওঠে নিজের অজান্তেই। আমার অনেক কবি-লেখক বন্ধু বাবা দিবস নিয়ে অনেক স্মৃতিকথা, কবিতা, গল্প লেখেন বিভিন্ন পত্রিকায় অথবা ব্লগে বাবার সঙ্গে নিজের ছবি দিয়ে প্রকাশ করেন। লেখাগুলো পড়ি আর সেই স্মৃতিমূলক ছবি দেখে নিজের হৃদয়ে সবার অগোচরে কষ্ট পরমাণু বিস্ফোরিত হয়। অবারিত হাহাকার নিয়ে অসহায় জীবনে জ্যান্ত পথিক যেন পথহারা হয়ে যায়। মনে হয় যেন কষ্টের কৃষ্ণগহ্বরে অতলে হারিয়ে গেলাম চিরতরে।
আফসোস, বাবার সঙ্গে স্মৃতিস্বরূপ একটি ছবিও নেই! জীবন তো আর থেমে থাকার নয়। জীবন বহমান অবিরাম; শুধু স্থান বদলায়। শূন্য থেকে ধরণি আবার ধরণি থেকে শূন্যে অথবা মহাশূন্যে! ভালোবাসা না পাওয়ার বেদনা হয়তো সব সময়ের সঙ্গী। একালে, সেকালে, পরকালে—হয়তো সব কালে। বাবা থাকলে যেমন শাসন–অনুশাসন করতেন, তেমনি হৃদয়ের সর্বস্ব দিয়ে সন্তানকে আগলে রাখতেন। তবে এ জগতে কারও বাবা না থাকলে পিতৃতুল্য আদরের অভাব হলেও শাসন করার নামে শোষণ করার লোকের অভাব হয় না। আদর করতে অনেক কিছু দেওয়া লাগে। কিন্তু শাসন করতে তেমন কিছু দেওয়া লাগে না। শুধু চড়–থাপ্পড় আর ঝাড়ি দিলেই চলে। সেটা মাথা, কান আর মুখমণ্ডলের ওপর দিয়েই যায়।
আমার মাথায় চুল নেই। কিছুদিন আগে একজন আমাকে কথা প্রসঙ্গে বললেন টাক দুই রকম। সুখটাক আর টুকটাক। বললেন, ভাই আপনার তো সুখটাক! ইচ্ছে করলেই তো চুল লাগাতে পারেন। আমি ঠাট্টা করে বলি, আমার মাথায় চুল লাগানো যাবে না। বললেন কেন? আমি বলি, আমি এতিম, আমার মাথা বরকতময় তাই!
জীবনে চলার বন্ধুর পথে প্রতিটি মুহূর্ত শুধু বাবাকেই মিস করেছি। কি সাফল্যে, কি ব্যর্থতায়। এখনো মনে হয়, বাবা থাকলে হয়তো জীবনটা আরও অনেক সুন্দর হতো। জাগতিক বিষয়ে যদিও বাবার শূন্যতা মা কখনো বুঝতে দেননি, কিন্তু দিন শেষে বাবা তো বাবাই। সেই বটবৃক্ষের শীতল আশ্রয় কি পাওয়া যায়? বাবা, পরপারে তুমি পরম শান্তিতে থাকো—মহান মাবুদের কাছে এই প্রার্থনা করি। বাবা দিবসে সব বাবার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা রইল।