সন্তানের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেই নিন

ছবিটি প্রতীকী। ফাইল ছবি
ছবিটি প্রতীকী। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ এখন একটি অস্থির সময় পার করছে। প্রতিদিন পত্রিকা খুললে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এলে ধর্ষণের খবর। ধর্ষণ মহামারি আকার ধারণ করেছে। এসব ঘটনা ও খবর আগে যে ছিল না, তা নয়। আগেও ছিল, এখনো আছে। অদূরভবিষ্যতেও হয়তো থাকবে। কিন্তু ইদানীং খুব প্রকট হয়ে গেছে।

ছোট ছেলেমেয়েরা কোথাও নিরাপদ নয়। মাদ্রাসায় ছেলেরা বলাৎকারের শিকার ও মেয়েরা ধর্ষিত হচ্ছে। স্কুলগুলোতেও শিক্ষকেরা যৌন নির্যাতন করছেন। যেটা আমি নিজে দেখেছি ও মেয়েদের কাছে শুনতাম। এই মেয়েরা বাসায় গিয়েও কারও কাছে বলত না, শুধু বান্ধবীদের সঙ্গে শেয়ার করত। আবার অনেক অন্তর্মুখী মেয়ে আছে, যারা বান্ধবীদের সঙ্গেও শেয়ার করে না।

পাশের বাসার ছোট মেয়ে সকালবেলা প্রাইভেট পড়তে যাচ্ছে। তাকে একলা পেয়ে এক তরুণ যৌন নির্যাতন করেছে। নির্জন দুপুরে ছোট বাচ্চা বাসার সামনে খেলছে। তরকারি বিক্রেতা হাঁকডাক দিয়ে দিয়ে তরকারি বিক্রি করছে। সেই বাচ্চাকে একলা পেয়ে যৌন নির্যাতন করেছে। আপন আত্মীয়স্বজনদের হাত থেকেও রেহাই পাচ্ছে না এই অবুঝ শিশুরা। বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আদর করার নামেও কেউ কেউ করে থাকে যৌন নির্যাতন।

লেখিকা
লেখিকা

একটা বয়স হলে ছেলেমেয়েরা নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে পারে। কিন্তু ছোট ছোট বাচ্চারা যখন বলাৎকারের শিকার বা ধর্ষিত হয়, তখন এই নিষ্পাপ মায়াবী ফুটফুটে বাচ্চাগুলো কী বোঝে! এরা দেশ-দুনিয়া সম্পর্কে কিছুই জানে না, বোঝে না। এখন এই পরিস্থিতিতে সারা দেশে যখন এই সব ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে গেছে, কোনোভাবেই এটাকে দমন করা যাচ্ছে না, তখন প্রতিটা বাবা-মাকে আরও অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। আমাদের দেশে যেহেতু অধিকাংশ নারীই গৃহিণী, তাই এই দায়িত্ব মায়েদের আগে নিতে হবে।

সন্তানদের বাবা–মায়ের প্রতি আমার আবেদন, আপনার সন্তানের পাশে সর্বক্ষণ আপনি ছায়ার মতো থাকুন। তাকে আপনার পাশে পাশে রাখুন। আপনার সন্তান খেলতে গেলেও খেলা শেষ হওয়া অবধি দাঁড়িয়ে থাকুন। খেলা শেষে তাকে নিয়ে বাড়ি ফিরুন। মাদ্রাসা ও স্কুল থেকে ফিরলে আপনার শিশুকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সবকিছু জিজ্ঞেস করুন। বাচ্চা যেন নির্ভয়ে সবকিছু বলতে পারে, সেই সম্পর্ক তৈরি করুন। কারও সঙ্গে একা একা বাচ্চাকে ছেড়ে দেবেন না। কারও কাছে পড়তে দিলে কিছুক্ষণ পরপর তদারকি করুন। সম্ভব হলে বাচ্চা যাদের সঙ্গে খেলাধুলা করে, তাদের সঙ্গেও মিশুন, তাদের সম্পর্কেও জানুন। বাচ্চার ওপর পূর্ণ নজর রাখুন। আপনার সন্তানের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার দায়িত্ব আপনিই নিন।