গ্যালারি কাহন: লর্ডস
বাংলাদেশের শেষ খেলা লর্ডসে পাকিস্তানের সঙ্গে। দুই দলেরই সেমিফাইনাল খেলার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। শেষ ম্যাচ, তাই মর্যাদার লড়াই বলা চলে। আর দর্শক হিসেবে আমাদের ক্রিকেটের মক্কাখ্যাত লর্ডসে ক্রিকেট ম্যাচ দেখার এক অসাধারণ অনুভূতি নিয়ে ফেরার দিন।
এই ম্যাচ দেখার জন্য নিউইয়র্ক থেকে স্কুলবন্ধু শাহেদ, বাংলাদেশ থেকে আমার মেডিকেল কলেজের বন্ধু অনিমেষ আর লন্ডন থেকে মান্না ও সামিসহ আরও কয়েকজন এসেছে। নিউইয়র্ক থেকে আরেক বন্ধু ফারহান আসার কথা ছিল। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে তার মা হঠাৎ না ফেরার দেশে চলে যাওয়ায় তাকে বাংলাদেশে যেতে হয়েছে।
বার্মিংহামে ভারতের সঙ্গে ম্যাচ দেখে এসেছি তিন দিন আগে। গ্যালারিতে আমরা টাইগার সমর্থকেরা কিছুটা কম ছিলাম। কিন্তু লর্ডসে ঢুকতেই বাংলাদেশি সমর্থকের আধিক্য চোখে পড়ল। কিছুক্ষণ পরপরই চলছিল বাংলাদেশ-বাংলাদেশ স্লোগান। লর্ডস স্টেডিয়াম ইংল্যান্ডের অন্য স্টেডিয়ামগুলো থেকে আলাদা। প্রবেশের পরই ছোট ট্রেনিং গ্রাউন্ড, স্পনসরদের স্টল, আইসিসির স্টল ও বিশাল ফুডকোর্ট। মনে হয় যেন একটি ক্রিকেট পার্কে প্রবেশ করলাম।
অনিমেষকে তার হোটেল থেকে নিয়ে অনেক আগেই চলে এসেছি। অফিশিয়াল ফটো বুথে ফ্রি ছবি তুলে প্রিন্ট করে দিচ্ছে। ব্যাকগ্রাউন্ডে লর্ডসের ঐতিহাসিক প্রেস বক্স! হাসিমুখে সবার ছবি তুলে দিচ্ছে আর লর্ডসে সুন্দর সময় কাটানোর উইশ করছে।
বাংলাদেশের টস ভাগ্য আবারও খারাপ। বোলিংয়ে প্রথম দিকের একটা উইকেট নিলেও এরপর আর উইকেট পড়েনি। তারপরও শেষের দিকে ভালো বোলিং হওয়ায় পাকিস্তান ৩১৫ করতে পেরেছে। ভারতের সঙ্গে ৩১৫ রানের টার্গেটে ভালো ফাইট দেওয়ায় এই ম্যাচে একটু আশা ছিল।
এই ম্যাচ দেখতে বাংলাদেশ থেকে অনেকেই এসেছিলেন। সঙ্গে অনেক সেলিব্রিটি। বন্ধু সামিকে তো খেলার চেয়ে তারকাদের সঙ্গে সেলফি তুলতে ব্যস্ত সময় পার করতে হয়েছে।
আমাদের পেছনেই ছিল এক বাংলাদেশি পরিবার। তারা থাকে সৌদি আরবের দাম্মামে। দুই সপ্তাহের জন্য লন্ডনে এসেছে এই খেলা দেখার জন্য। পরে আলাপ হলো আরেক ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি এসেছেন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে। পুরো লর্ডস যেন ছিল সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশিদের মিলনমেলা।
সাকিবের ব্যাট যথারীতি আলো ছড়াচ্ছিল। কিন্তু বড় কোনো জুটি হচ্ছিল না। একে একে মুশফিক, লিটন দাস, মাহমুদউল্লাহ ফিরে যাওয়ার পর ম্যাচটা বাংলাদেশের হাত থেকে চলে যায়।
ক্রিকেটে বাংলাদেশের উন্নতি অভাবনীয়। ইংল্যান্ডের পিচে সফল হওয়া সহজ নয়। তার পরও বাংলাদেশ সাউথ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তানের সঙ্গে সহজ জয় পেয়েছে। বৃষ্টির জন্য শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ম্যাচে পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হয়েছে। নইলে হয়তো আরেকটি জয় পেত। কিন্তু তাতে কী আসে-যায়। হারি জিতি আমরা সব সময়ই বাংলাদেশের সঙ্গে।
এই এক মাসে বিভিন্ন স্টেডিয়ামে পরিচিত হয়েছি দারুণ কিছু মানুষের সঙ্গে। টিম টাইগারদের জন্য অফুরান যাদের ভালোবাসা। টাইগার আলী ভাই, টনি, লুঙ্গি পরে খেলা দেখতে আসা রব্বানী ভাই, স্টেডিয়াম কাঁপানো স্লোগান দেওয়া এমডি শাহিন ভাইসহ আরও অনেকে। নিশ্চয়ই তাদের সঙ্গে আবার দেখা হবে বাংলাদেশের অন্য কোনো খেলায়।
অসাধারণ আনন্দময় কিছু মুহূর্ত উপহার দেওয়ার জন্য টিম টাইগারদের অভিনন্দন। আমরা সব সময় তোমাদের সঙ্গে আছি।
লেখকের ইমেইল: <[email protected]>