বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক উদ্যোগের স্বীকৃতি

রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান প্রস্তাবটি পরিষদে উপস্থাপন করেন
রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান প্রস্তাবটি পরিষদে উপস্থাপন করেন

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের সদ্য সমাপ্ত ৪১তম সাধারণ অধিবেশনের একটি সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের উদ্যোগে ঢাকায় আয়োজিত প্রতিবন্ধিতা ও দুর্যোগঝুঁকি ব্যবস্থাপনাবিষয়ক দুটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত ঢাকা ঘোষণা ২০১৫ ও ২০১৫+ এর স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। পরিষদের চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত সদস্য বাংলাদেশের নেতৃত্বে তিনটি দেশের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত মানবাধিকারের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাববিষয়ক প্রস্তাবটি গতকাল শুক্রবার (১২ জুলাই) সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

মানবাধিকার পরিষদে ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে গৃহীত ‘মানবাধিকার ও জলবায়ু পরিবর্তন’ শীর্ষক এ প্রস্তাবের মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার যোগসূত্র নির্ণয় এবং এর প্রতিকারে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে করণীয় বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে। এ প্রস্তাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হ্রাসের প্রয়াসকে প্রাধান্য দিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে ২০১৫ ও ২০১৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘প্রতিবন্ধিতা ও দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক দুটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পর্যালোচনার বিশেষ প্রতিফলন ঘটে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক অ্যাডভাইজরি প্যানেলের বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশের অটিজমবিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততায় ২০১৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাসমূহ ছাড়াও ৩৩টি দেশের শতাধিক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।

মানবাধিকার পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত ও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত প্রস্তাবটিতে ঢাকা ঘোষণাসমূহের আলোকে একটি অনুচ্ছেদ যুক্ত হয়েছে। এতে স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে দুর্যোগঝুঁকি হ্রাসের লক্ষ্যে সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ড গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও নেতৃত্ব প্রদানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তাদের প্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

গতকাল শুক্রবার জেনেভায় জাতিসংঘের দপ্তরে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান প্রস্তাবটি পরিষদে উপস্থাপন করেন। জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশ ও জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্যে বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নে উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশগুলো কোনোভাবে দায়ী নয়। তা সত্ত্বেও এ দেশগুলোতেই এর বিরূপ প্রভাব বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে, স্বল্পোন্নত ও ক্ষুদ্র-দ্বীপরাষ্ট্রগুলোয় দারিদ্র্য, লিঙ্গ, বয়স ও প্রতিবন্ধিতা প্রভৃতি কারণে নাজুক অবস্থায় পতিত জনগোষ্ঠী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

প্রস্তাবটিতে ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তিতে বিবৃত অঙ্গীকারের আলোকে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রাক্‌-শিল্পযুগের তুলনায় অনধিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখার পাশাপাশি অনধিক ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। এ ছাড়া উন্নয়নশীল, স্বল্পোন্নত ও ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রসমূহের স্বার্থে জলবায়ু পরিবর্তন নিরোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং সক্ষমতা ও উন্নয়নের মাত্রাভেদে ‘সাধারণ কিন্তু পৃথক দায়িত্ব’ (সিবিডিআর) নীতির প্রতিফলন নিশ্চিত করায় প্রস্তাবটি প্রশংসিত হয়। বিজ্ঞপ্তি