ডেইরি শিল্পে অতিমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কুফল

লাইভ স্টক ইন্ডাস্ট্রিতে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বহু বছর ধরেই। পশুর ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ প্রতিরোধ করার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। বিশ্বে বছরে প্রায় ১২ মিলিয়ন কেজি ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে ৯ মিলিয়ন কেজি ব্যবহার করা হয় পশুর ম্যাসটাইটিসসহ অন্য রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য। বাকি ওষুধ ব্যবহার করা হয় পশুর গ্রোথ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।

পশুর খাদ্যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার ছাড়াও ডেইরি শিল্পে পাস্তুরিত দুধে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধ ব্যবহার করা হয় দুধের গুণগত মান বজায় রাখার জন্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো তাহলে অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের দুধে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া নিয়ে এত হইচই কেন?

অ্যান্টিবায়োটিক যেমন জীবন বাঁচায়, তেমনি অধিক মাত্রা ও ঘন ঘন ব্যবহার মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর। বিভিন্ন গবেষণা থেকে দেখা গেছে, অ্যান্টিবায়োটিকের কারণে অ্যালার্জিক্যাল প্রতিক্রিয়া ছাড়াও ক্যানসারের মতো মরণব্যাধি অসুখ হয় মানবশরীরে। এ ছাড়া বেশি অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারে বায়োলজিক্যাল ড্রাগ রেজিস্টেন্স তৈরি করে।

তাই দুধে আদর্শ মানের চেয়ে বেশি পরিমাণ ও খারাপ অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। এ জন্যই অনেক দেশেই এফডিএ ও নিজস্ব এথনিসিটির প্রয়োজন অনুযায়ী কী পরিমাণ এবং কী কী অ্যান্টিবায়োটিক দুধে থাকতে পারবে তার একটা আদর্শ মানের তালিকা আছে। ওই সব দেশে ডেইরি শিল্প সেই তালিকা অনুযায়ী চলে।

ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন আর্টিকেল ৭-এ ‘Multicriteria-based Ranking Model for Risk Management of Animal Drug Residues in Milk and Milk Products’ শিরোনামে দুধে ড্রাগ ব্যবহার নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছে। অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের আগে বাংলাদেশে এ রকম কোনো রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে কিনা জানি না। জনস্বার্থে তিনি যে কাজ করেছেন তা ভূয়সী প্রশংসার দাবি রাখে। এ জন্য সরকারের উচিত ছিল তাঁকে ধন্যবাদ দেওয়া।

অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের গবেষণালব্ধ ফল বাংলাদেশের ডেইরি শিল্পকে সামনে দিকে এগিয়ে নিতে বিশাল ভূমিকা পালন করতে পারে। সরকার এই সুযোগে দুধের গুণগত মানের একটা স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করতে পারে। যেখানে কী কী অ্যান্টিবায়োটিক কতটুকু থাকতে পারবে তার সুস্পষ্ট চার্ট থাকবে। আমাদের মনে রাখা উচিত এই দুধের বেশির ভাগ ভোক্তা হলো আমাদের শিশুরা। আর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
–––

ড. মো. ফজলুল করিম: পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ ফেলো, ফার্মাকোলোজি অ্যান্ড কেমিক্যাল বায়োলজি বিভাগ, স্কুল অব মেডিসিন, পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, পেনসিলভানিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।