পাস্তুরিত দুধে কেন অ্যান্টিবায়োটিক থাকবে?

বাংলাদেশের অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে, পাস্তুরিত দুধে অ্যান্টিবায়োটিক কেন থাকবে? তাদের প্রশ্ন হলো, অ্যান্টিবায়োটিক তো পাস্তুরাইজেশন প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা হয় না।

হ্যাঁ, পাস্তুরাইজেশন প্রক্রিয়ায় অবশ্যই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় না। পাস্তুরাইজেশনে মূলত তাপ প্রয়োগ করে ক্ষতিকর মাইক্রোব ধ্বংস করা হয়। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুধে অ্যান্টিবায়োটিক সংক্রমণ হতে পারে না। তারপরেও দুধে অ্যান্টিবায়োটিক রেসিডিউ থাকতে পারে।

আমরা সাধারণভাবে অ্যান্টিবায়োটিক বললেও আসলে আমাদের বলা উচিত অ্যান্টিবায়োটিক রেসিডিউ। সাধারণত যেসব পশু মাংস ও দুধ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়, তাদের জন্য এফডিএ নীতিমালা রয়েছে। খুব দরকার না হলে সাধারণত এসব পশু পালনে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার নিষিদ্ধ। তবে যদি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়, তবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। পশুকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানোর পর যে অংশ পশুর মাংস ও দুধে চলে যায়, তা হলো অ্যান্টিবায়োটিক রেসিডিউ। অ্যান্টিবায়োটিক রেসিডিউকে বলা যায় ড্রাগ মেটাবলিজমের পর অ্যান্টিবায়োটিকের অবশিষ্টাংশ।

ডেইরি শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের দায়িত্ব হলো দুধ পাস্তুরাইজেশনের আগে ভালোমতো পরীক্ষা করে নেওয়া, দুধে ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক আছে কি না। যদি থাকে তবে তা অবশ্যই আলাদা করতে হবে। এমনকি দেখা যায় অ্যান্টিবায়োটিক সংক্রমিত দুধ আলাদা করার পরেও অ্যান্টিবায়োটিক ফ্রি দুধ সংক্রমিত হয় অসাবধানবশত। খুব সাবধান না হলে দুধে অ্যান্টিবায়োটিক রেসিডিউ সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে।

এখান থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার, যে কোম্পানিগুলো পাস্তুরিত দুধ বাজারে আনছে, তারা যদি অ্যান্টিবায়োটিক পরীক্ষা না করে, তাহলে কৃষকের কাছ থেকে তারা পাস্তুরাইজেশনের জন্য যে দুধ কিনছে, তার সব কটিতেই অ্যান্টিবায়োটিক রেসিডিউ থাকতে পারে। তাই বলা যায়, অ্যান্টিবায়োটিক সংক্রমণ একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। আমাদের দেশে খামারিসহ যাঁরা পশু পালন করেন, তাঁরা নানা কারণে পশুকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ান। তাঁরা বেশির ভাগই জানেন না, মাংস ও দুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত পশুকে কী ধরনের ওষুধ খাওয়ানো যাবে।

আমরা দুধ নিয়ে হইচই করছি। কিন্তু আমার ধারণা, আমাদের প্রায় সব মাংস পরীক্ষা করলে অ্যান্টিবায়োটিক রেসিডিউ পাওয়া যাবে। সত্যি বলতে, আমাদের দেশে মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক রেসিডিউ থাকতে পারে, এ ধারণাই হয়তো বেশির ভাগ মানুষের নেই।

দুধে অ্যান্টিবায়োটিক রেসিডিউ উপস্থিতি ধরা পড়ার পর আমরা আশা করছি, বাংলাদেশ সরকার গুরুত্বসহকারে এ বিষয়ে ভাববে। দ্রুত এ–সম্পর্কিত নীতিমালা প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি।
---

ড. মো. ফজলুল করিম: পোস্টডক্টোরাল রিসার্চ ফেলো, ফার্মাকোলোজি অ্যান্ড কেমিক্যাল বায়োলজি বিভাগ, স্কুল অব মেডিসিন, পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র।