লিডসে তিন দিনব্যাপী রাধারমণ লোক উৎসব

অষ্টম উৎসবের ফাইল ছবি। ধামাইল নৃত্য পরিবেশনা। ছবি: পাবলো খালেদ
অষ্টম উৎসবের ফাইল ছবি। ধামাইল নৃত্য পরিবেশনা। ছবি: পাবলো খালেদ

যুক্তরাজ্যের লিডস শহরে কাল শুক্রবার (২৬ জুলাই) থেকে নবমবারের মতো শুরু হতে যাচ্ছে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী রাধারমণ লোক উৎসব। উৎসবের অন্যতম অতিথি বক্তা হিসেবে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে উপস্থিত হয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ মুহিবুর রহমান মানিক।

আরও যোগ দেবেন ক্যামেন আইল্যান্ডের সাবেক গভর্নর ও ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা আনোয়ার চৌধুরী, শ্যাডো আইনমন্ত্রী রিচার্ড বার্গন, শ্যাডো প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্যাবিয়ান হামিলটন এবং লিডস সিটি কাউন্সিলের নগর উন্নয়ন বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা সাইদ মাহমুদ।

এবারের উৎসবে প্রথমবারের মতো গাইতে আসছেন প্রতীচ্যে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের শীর্ষ শিল্পী ও অন্যতম প্রচারক বিদুষী চন্দ্রা চক্রবর্তী। লন্ডন থেকে গাইতে আসছেন ব্রিটেনে বাংলা লোকসংগীতের রাজকুমারী গৌরি চৌধুরী, সুফি আমির মোহাম্মদ, অমিত দে, লাবণী বড়ুয়া, জেসি বড়ুয়া, নন্দিতা মুখার্জি, শাহ ইয়াওর মিয়া, সাজ্জাদ মিয়া ও রাহেল চৌধুরী প্রমুখ।

রবীন্দ্রনাথ ও বাংলা লোকসংগীত–বিষয়ক পরিবেশনা নিয়ে আসছেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। বাংলা লোকনৃত্যের বিচিত্র ও বর্ণিল সব পরিবেশনা নিয়ে আমেরিকা থেকে আসছেন সৃষ্টি নৃত্যাঙ্গনের প্রতিষ্ঠাতা রোজমেরি মিতু রিবেইরো ও আরও দুজন নৃত্যশিল্পী।

লন্ডন থেকে যোগ দিচ্ছেন জনপ্রিয় লোকনৃত্যশিল্পী সোহেল আহমেদ ও সোনিয়া সুলতানা। কথা ও কবিতা পাঠে অংশ নিচ্ছেন কবি ডেভিড লি মরগ্যান, গাবি সাম্বুসিটি, জেনুমজ নাকভি, মাইক শেরিফ, আবদুল কুদ্দুস, জাহাঙ্গীর রানা, রব স্মিথ, রেভারেন্ড এমোস কাসবান্তে, নিশাত আফজা, মিলি বসু, ড. তপতী মুখার্জি ও তার দল দিগন্তিকা, কাউন্সিলর আসগর খান, কাউন্সিলর জেন ডাউসন, কবি তাহিরা রেহমান, নাদিম রাথুর, লোরা পট, শাহিন মিতুলি প্রমুখ।

অষ্টম উৎসবের ফাইল ছবি। অটলি শেভিনে বারবিকিউ উইথ মিউজিক সেশন। ছবি: পাবলো খালেদ
অষ্টম উৎসবের ফাইল ছবি। অটলি শেভিনে বারবিকিউ উইথ মিউজিক সেশন। ছবি: পাবলো খালেদ

প্রাচীন ইউরোপীয় সংগীতের এক অভিনব পরিবেশনা নিয়ে আসছেন এরিক শিলান্ডার। প্রথিতযশা শিল্পীদের পাশাপাশি গাইবে জায়না ও অনন্যার মতো শিশু শিল্পীও। এবারের উৎসবে রাধারমণের গানের পাশাপাশি থাকছে রেজিনাল্ড সেন্টারে দুরবিন শাহের গান ও মুরটাউন চার্চে বিলাতের প্রখ্যাত গীতিকবিদের লেখা গানের উপস্থাপনা।

কাল শুক্রবার বিকেল পাঁচটায় লিডসের সেন্ট আগ্নেস চার্চে আধ্যাত্মিক কবিতা, গান ও প্রাচীন ইউরোপীয় সংগীত দিয়ে উৎসবের সূচনা হওয়ার পর সন্ধ্যা আটটায় মুরটাউন চার্চে চলবে রবীন্দ্রনাথের লোকসংগীত ভাবনা ও অন্যান্য পরিবেশনা। পরে রাত দশটা থেকে হ্যালিফ্যাক্সের গভীর অরণ্য ও অপরূপ স্কামোন্ডন লেকের ওপর স্কামোন্ডন সেন্টারে চলতে থাকবে গান, কবিতা ও নৃত্যের মোহ-মধুর পরিবেশনা।

পরদিন শনিবার রেজনাল্ড সেন্টারে দুপর ১২টা থেকে তিনটা পর্যন্ত দুরবিন শাহ সেশনের পর বিকেল চারটা থেকে সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত অটলি শেভিন অরণ্যে চলবে বারবিকিউ উইথ মিউজিক সেশন। তারপর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় সেভেন আর্টসে বিদুষী চন্দ্রা চক্রবর্তী গাইবেন ভজন, শাবাত ও টপ্পাসহ আরও হিন্দুস্তানি উপশাস্ত্রীয় সংগীত। পরে নয়নাভিরাম স্কামোন্ডনে রাতব্যাপী বিভিন্ন রকমের পরিবেশনার পর ২৮ জুলাই রোববার লিডস বাংলাদেশ কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে উৎসবের সমাপনী পর্ব। এতে ব্রিটেনের বিভিন্ন শহর থেকে বিপুলসংখ্যক দর্শক যোগ দিতে পারেন বলে আয়োজকেরা আশা করছেন।

অমিত দে। ছবি: পাবলো খালেদ
অমিত দে। ছবি: পাবলো খালেদ

বাংলাদেশ থেকে যোগ দেওয়া সাংসদ মুহিবুর রহমান বলেন, ‘আমি যারপরনাই অভিভূত এটা দেখে যে, আমাদের লোকসংগীত আজ বিশ্ব-দরবারেও সমানভাবে সমাদৃত হয়ে উঠছে। বাংলার লোক-সংস্কৃতিই আসলে আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার উৎসবিন্দু। ফলে ৯ বছর ধরে চলমান এ রকম কোনো লোক উৎসব বহির্বিশ্বে আমাদের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করছে বলে আমি মনে করি।’

উৎসবের কিউরেটর টি এম আহমেদ কায়সার বলেন, ইয়র্কশায়ারডেলসের নয়নাভিরাম প্রকৃতির কোলে, হয় লেকের পারে বা অরণ্যের ভেতর বারবিকিউ করতে করতে একটা প্রাণোচ্ছল পরিবেশে বাংলা লোকগান পরিবেশনার ধারণা মূলত আমাদের এই মধুর সংগীতকে দূর–দূরান্তের দর্শক, বিশেষ করে এ দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার একটা অভিনব প্রচেষ্টার অংশ। প্রেমে ভক্তিতে টইটম্বুর আমাদের এই হৃদয়স্পর্শী লোকগান শুনে, আমাদের বর্ণময় লোকনৃত্য আর ইয়র্কশায়ারডেলসের প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য দেখে যদি বাড়ি ফেরার পথে মনে হয় বাহ, জীবন কী আনন্দময়, জীবন কত মহান, তাতেই সমস্ত প্রচেষ্টা একটা অর্থ খুঁজে পাবে।