১০ হাজার স্টেপ
জার্মানির সব ডাক্তারই বলেন, প্রতিদিন ১০ হাজার স্টেপ হাঁটবে। তাহলে আর কোনো রোগ হবে না। ১০ হাজার স্টেপ মানে ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার।
তাঁদের সব কথাকেই কি বিশ্বাস করতে হবে? সত্যিই কি তা–ই!
ছোটবেলায় আম্মা জোর করে আমাকে পালংশাক খাওয়াতেন। বলতেন, খা বাবা, শরীরে আয়রন বাড়বে।
বড় হয়ে জানলাম, কোনো এক পুষ্টিবিজ্ঞানী তাঁর রিসার্চে দশমিক পজিশনটি ঠিক জায়গায় বসাননি। তাই পালংশাকে আয়রনের পরিমাণ বেশি দেখাচ্ছিল। সমস্ত পৃথিবী তাঁকে বিশ্বাস করেছিল। আর তাঁর ভুলে আমার বাল্যকাল এমন কষ্টে কেটেছিল।
এরপর যখন জিমে যাওয়া শুরু করলাম, ট্রেইনার বলতেন, প্রতিদিন নুডলস খাবে।
এক বছরের মধ্যেই থিওরিটি পাল্টে গেল। নুডলস খাবে না, ওটা জঘন্য, প্রচুর স্টার্চ।
আমাদের মতো স্বল্পজ্ঞানী, গুগলবিশ্বাসী লোকেরা কোথায় যাবে, বলুন তো?
যা হোক, পুষ্টিবিজ্ঞানীদের দুটো গালি দিয়ে গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করলাম। শপিংয়ে যেতে হবে। দোকানটি বেশি দূরে নয়। হেঁটে গেলেও পারতাম, তবু যাব না।
এমন সময় হঠাৎ দেখা হলো আমার প্রতিবেশী ফেলিক্স আর মারিয়ার সঙ্গে। দুজনের বয়স আশির বেশি। তবে সুঠাম দেহ, শরীরে একবিন্দুও মেদ নেই। ফেলিক্স যেন রণবীর সিং আর মারিয়া দীপিকা পাড়ুকোন।
জিজ্ঞেস করলাম তাঁদের, সঙ্গে নেব কি না।
মারিয়া বললেন, না না, আমরা প্রতিদিন ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার হাঁটি।
আমি বললাম, ওহ! এটাই হলো আপনাদের ইয়ং থাকার রহস্য। তো, কত দিন ধরে এই অভ্যাস?
ফেলিক্স উত্তর দিলেন, ৫০ বছর।
আমার চোখ ছানাবড়া। আচ্ছা, এত মোটিভেশন পান কোথা থেকে?
ফেলিক্স আমতা-আমতা করে উত্তর দিলেন, মোটিভেশন তো নয়, বাধ্য হয়ে।
: তার মানে?
: জানেন, মারিয়াকে বিয়ে করার পর থেকে আমাদের প্রায়ই ঝগড়া হতো। প্রায় বিচ্ছেদ হয় হয় আর কী। গেলাম আমরা সাইকোলজিস্টের কাছে। তিনি সব শুনে উপদেশ দিলেন, আপনারা সিলি বিষয় নিয়ে ঝগড়া করেন। এখন থেকে নিয়ম, যে ঝগড়া শুরু করবে, তার শাস্তি ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার হাঁটা।
: তো?
ফেলিক্স বলতে থাকলেন, আমি প্রায়ই ঝগড়া করতাম। ফলে, আমাকে প্রায়ই ১০ হাজার স্টেপ হাঁটতে হতো। আমি স্লিম হয়ে গেলাম।
তা তো বুঝলাম, তো মারিয়া এত স্লিম কেন?
মারিয়া উত্তর দিলেন, আর আমি ওকে ফলো করতাম। ও ঠিকমতো হাঁটছে কি না।
আমি তাঁদের এই সক্রেটিসের মতো বাণী শুনে গাড়ি আবার গ্যারেজে ঢোকালাম। হেঁটে রওনা হলাম শপিং করতে।
পুষ্টিবিদদের গালি তুলে এনে নিজেকে গালি দিলাম।