সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা

বাংলাদেশি ইপিএস কর্মীদের সমস্যা ও সম্ভাবনা এবং কর্মীসংখ্যা বৃদ্ধির উপায় নিয়ে আলোচনা সভায় অতিথিরা
বাংলাদেশি ইপিএস কর্মীদের সমস্যা ও সম্ভাবনা এবং কর্মীসংখ্যা বৃদ্ধির উপায় নিয়ে আলোচনা সভায় অতিথিরা

দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশি ইপিএস কর্মীদের সমস্যা ও সম্ভাবনা এবং কর্মীসংখ্যা বৃদ্ধির উপায় নিয়ে এক বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া দেশটিতে যাতে আরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী যেতে পারেন, সে বিষয়েও আলোচনা করা হয়। এতে অংশ নেন বাংলাদেশি ইপিএস কর্মী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার প্রবাসীরা।

দেশটির বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় গোপালগঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ কোরিয়া (জিএএসকে) গতকাল রোববার (২৮ জুলাই) আনসান সিটিতে এ সভার আয়োজন করে। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মকিমা বেগম।

সভায় বিভিন্ন সমস্যা ও উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়। প্রথম পর্বে ছিল সমস্যা নিয়ে আলোচনা। অর্থাৎ কী কী কারণে বাংলাদেশ অন্য দেশের চেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পিছিয়ে আছে তা অনুসন্ধান করা। দ্বিতীয় পর্বে ছিল সমস্যাসমূহ সমাধানের উপায় বা পদক্ষেপ কী হওয়া উচিত তা নিয়ে আলোচনা। তৃতীয় পর্বে পদক্ষেপগুলো কীভাবে ফলপ্রসূভাবে কার্যকর করা যাবে সে বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্তে গ্রহণ।

কারণ অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে নানা সমস্যার কথা। যেমন অনেক বাংলাদেশি ইপিএস কর্মী আছেন, যাঁদের সঙ্গে কোরীয় মালিকেরা কাজ করতে সহজ বোধ করেন না। আবার অনেক বাংলাদেশি ইপিএস কর্মীদের আছে আত্মসন্তুষ্টির অভাব। তাঁরা যা পান তার চেয়ে আরও বেশি পেতে চান। অনেকে কোরীয় খাবারে অভ্যস্ত নন। অনেকে ছোটখাটো ত্যাগ স্বীকার করেন না। নিজের স্বার্থ ছাড়া বোঝেন না। মালিকদের কাছে একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করেন। মালিকের বিশ্বাস অর্জনে ব্যর্থ হন। কোম্পানি পরিবর্তন করেন। কোম্পানি পরিবর্তন করার জন্য মিথ্যা অজুহাত তৈরি করেন। এ ছাড়া পরিচ্ছন্নতার অভাব, কাজের দক্ষতা ও সহকর্মীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের অভাব, নিজেদের মধ্যে গন্ডগোল করা ইত্যাদি।

বাংলাদেশি ইপিএস কর্মীদের সমস্যা ও সম্ভাবনা এবং কর্মীসংখ্যা বৃদ্ধির উপায় নিয়ে আলোচনা সভা
বাংলাদেশি ইপিএস কর্মীদের সমস্যা ও সম্ভাবনা এবং কর্মীসংখ্যা বৃদ্ধির উপায় নিয়ে আলোচনা সভা

সমস্যা বিষয়ে অভিমত ব্যক্ত করেন সিনিয়র ইপিএস সদস্য রবিউল ইসলাম, এমডি ডালিম, রাকিবুল আলম, মনোজ সুভাকর, রাকিবুল, আমিনুল মোগল, শেখ রিপন, শেখ ওমর, খন্দকার রুবেল, জালাল আহমেদ, নাজমুল হাসান ও মাইনুর সুলতান প্রমুখ। তাঁরা বলেন, এমন একটা উদ্যোগ প্রয়োজন ছিল। কর্মীদের এসব মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন।

ইপিএস নারী সদস্য ইশরাত জাহান বলেন, কোরীয় কালচারের সঙ্গে বাঙালি মেয়েদের খাপ খাওয়াতে কষ্ট হয়। বাংলাদেশি নারী কর্মীরা যদি নিজের কালচার নিজেরা রেখে কোরীয় কালচারের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারেন, তবে কোরিয়াতে বাংলাদেশি নারী কর্মীর চাহিদা বাড়তে পারে।

বাংলাদেশ দূতাবাসের লেবার উইংয়ের শেখ নিজামুল হক বলেন, বাংলাদেশি কর্মীদের অনেকে ডরমিটরিতে রান্না করার ব্যবস্থা না থাকলেও রান্না করতে চান। এটা কোরীয় মালিকদের জন্য একটা বাড়তি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়া মামলা-মোকদ্দমার কারণে কোরীয় মালিকেরা অনেক সময় খুব ঝামেলায় পড়ে যান। থানা-পুলিশ করার সময় তাঁদের থাকে না।

মকিমা বেগম বাংলাদেশি ইপিএস কর্মীদের কর্মদক্ষতাসহ বিভিন্ন গুণাগুণের কথা উল্লেখ করে বলেন, তাঁরা যদি আরও একটু পরিচ্ছন্ন থাকেন, চুক্তির মেয়াদ পূর্ণ করে দেশে যান এবং তুচ্ছ বিষয়ে একে অপরের বিরুদ্ধ অভিযোগ তথা মালিকদের বিরুদ্ধে শ্রম মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ না করেন, তবে কোরীয় মালিকদের সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব।

অংশগ্রহণকারীরা
অংশগ্রহণকারীরা

রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম সময় উপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আলোচনায় যে সমস্যাগুলো উঠে এসেছে, তা যদি আমরা পরিহার ও শোধরাতে না পারি, তবে ইপিএস পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত অন্য ১৫টা দেশের সঙ্গে আমরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ব। কোরীয় কোম্পানি কিন্তু খালি থাকবে না। অন্য দেশের কর্মী এসে সেখানে ভরে যাবে। অতিরিক্ত প্রত্যাশা না করে যে কোম্পানিতে প্রথম এসেছেন, সেখানেই যদি পুরো সময় থাকেন, তাতেই বেশি লাভবান হবেন। বাংলাদেশে রেমিট্যান্স বেশি যাবে।’ তিনি বাংলাদেশি সব ইপিএস কর্মীকে তাঁদের মালিকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার পরামর্শ দেন।

আলোচনা পরিচালনা করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি শেখ মুরাদ হোসেন। সঞ্চালনায় ছিলেন এমডি নাজমুল হুদা পিএইচডি। স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক ডেভিড একরাম।

এ ছাড়া আবদুল মতিন, রফিকুল ইসলাম ও মুন্সী রফিকুল ইসলাম ব্যবসা প্রতিনিধি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন। তাঁরা কোরীয় মালিকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, বিশেষ পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করা, সর্বদা ভালো সার্ভিস দেওয়া, আচরণে সত্যিকার দেশপ্রেম প্রকাশ করা, কাজে কোরীয়দের চেয়ে বেশি দক্ষতা অর্জন করার পরামর্শ দেন।

অনুষ্ঠান আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করে কোরিয়ার রেমিট্যান্স কোম্পানি জি-মানি ট্রান্স। বিজ্ঞপ্তি