নারীর মন বোঝার চেষ্টা

নারীর মন নাকি কোনো পুরুষের পক্ষেই বোঝা সম্ভব নয়। ছোটবেলা থেকেই এ কথা বহুবার বহুজনের কাছে শুনেছি। কিন্তু বিশ্বাস করিনি। আমার বিশ্বাস ছিল, আমি ঠিকই বুঝতে পারব। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। কিছু ঘটনা বললেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

ঘটনা-এক 

মনোযোগ দিয়ে পত্রিকা পড়ছিলাম।

স্ত্রী এসে বলল, শোনো, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাবার বাড়ি বেড়াতে যাব।

: ভেরি গুড।

: আর পুরা এক মাস থাকব।

: ভেরি ভেরি গুড। তা কবে যাচ্ছ? হাসিমুখে বললাম।

আমার কথা শুনে ভুরু কুঁচকে বউ বলল, কী ব্যাপার। তুমি এত খুশি কেন? আমাকে তাড়াতে পারলে মনে হয় বাঁচো। এক মাস স্বাধীন জীবন। আহা কী আনন্দ আকাশে-বাতাসে! তাই না?

: এটা কী বললা?

: শোনো, ভাবছিলাম যাব, কিন্তু তোমার এত উৎসাহ দেখে আমি এইমাত্র সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলাম। আমি কোথাও যাচ্ছি না। বজ্জাত বেটা কোথাকার। কোথায় আমি আরও ভাবলাম, আমার যাওয়ার কথা শুনে বলবে, তুমি যেয়ো না, তোমাকে ছাড়া আমি কীভাবে থাকব, তা না। বলে কী কবে যাচ্ছ।

: দেখো, আমি তো তোমাকে যেতে বলিনি। তুমিই তো যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছ। আমি শুধু তোমার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছি।

: খবরদার, আমার সঙ্গে চালাকি করবে না। তোমারে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি।

আমি বোকার মতো বউয়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমি বুঝলাম না, কেন সে আমারে এভাবে বাজে বাজে শব্দ ব্যবহার করে বকছে। এখানে আমার দোষটা কোথায়?

বিপরীত দৃশ্য 

বেশ কিছুদিন পরের ঘটনা। অফিস থেকে বাসায় ঢুকতেই বউ এসে বলল, আজ মা ফোন করেছিল। মায়ের শরীরটা ভালো না, আমাকে যেতে বলেছে। তুমি কী বলো?

হঠাৎ করে মনে পড়ল, এর আগেরবার যাওয়ার ব্যাপারে সায় দিয়েছিলাম বলে উল্টোটা বুঝেছিল। তাই এবার মুখটাকে মলিন করে একটু দুঃখ দুঃখ ভাব নিয়ে বললাম, না গেলে হয় না?

: কেন? আমারে কি দাসী-বান্দি পাইছ যে সারা জীবন শুধু তোমার সংসারে কাজ করে করে মরব? আমার কি কোনো শখ–আহ্লাদ নাই? বউ চিৎকার করে বলতে থাকে।

: সেটা না। আসলে বলছিলাম, তুমি চলে গেলে আমি কীভাবে একা থাকব।

: ঢং করবা না। তোমার ঢং দেখলে আমার গা জ্বলে। আমি তো জানি, আমার সুখ তোমার সহ্য হয় না। কোথায় বেড়াতে গিয়ে আমি একটু আনন্দ করব, একটু আরামে থাকব, সেটা তোমার সহ্য হচ্ছে না, তাই না?

আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। আর মনে মনে বললাম, হে আল্লাহ, তুমি আমারে উঠায়ে নাও। এ কেমন সমস্যা? হ্যাঁ বললেও দোষ, না বললেও দোষ। তাহলে বলবটা কী?

ঘটনা-দুই 

বউকে নিয়ে জুয়েলারির দোকানে ঢুকেছি। উদ্দেশ্য, বউ কানের দুল কিনবে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর এক জোড়া দুল তার পছন্দ হলো।

বউ দুলটা দেখিয়ে বলল, দেখো দুলটা কত সুন্দর! আমার খুবই পছন্দ হয়েছে।

: ওকে, পছন্দ যখন হয়েছে এসো কিনে ফেলি।

: কিন্তু দামটা একটু বেশি না?

: টাকা কোনো সমস্যা না।

: মানে কী? টাকা কি বেশি হয়ে গেছে? বড় লোক হয়ে গেছ? তোমার তো দেখি ভবিষ্যতের কোনো চিন্তা নাই। আমি খেয়াল করে দেখেছি, সব সময় তুমি অপচয়ের ধান্দায় থাকো। তোমার মতো অপচয়কারী স্বামী যার আছে, তার ভবিষ্যৎ তো অন্ধকার। আল্লাহ কেন যে আমার কপালে এমন একটা ফালতু স্বামী দিল বুঝলাম না।

অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। কী কারণে আমাকে বকছে, তা–ই তো বুঝলাম না। আমি তো তার পক্ষেই বলেছিলাম।

বিপরীত দৃশ্য 

কিছুদিন পর বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে বউকে নিয়ে গেলাম মার্কেটে। উদ্দেশ্য, কিছু একটা কিনে দেব।

হঠাৎ করেই একটা নেকলেস দেখিয়ে বউ বলল, দেখ নেকলেসটা কত সুন্দর! এটা আমি কিনব।

মনে পড়ল গতবার দামি কানের দুল কিনতে সমর্থন করেছিলাম বলে অপচয়কারী হিসেবে ঝাড়ি মেরেছিল। আর এই নেকলেসের দাম তো কানের দুলের চার গুণ বেশি। তাই এবার বললাম, এটা অনেক দামি। খামাখা এত টাকা খরচ না করে অন্য কিছু দেখো।

স্ত্রী উত্তেজিত হয়ে বলল, আমার শখের থেকে তোমার কাছে টাকা বড় হলো! টাকাপয়সা কি সব কবরে নিয়ে যাবে? তোমার মতো কিপটে লোককে যে কী কারণে বিয়ে করেছিলাম, আল্লাহ মালুম।

স্ত্রীর কথা শুনে মনে মনে বললাম, হে আল্লাহ, তুমি কেন আমারে মেয়ে বানালে না। তাহলে তো আমিও কোনো পোলারে বিয়া করে এভাবে পাগল বানাতে পারতাম।

ঘটনা-তিন 

অফিস থেকে এসে খেতে বসেছি।

খাওয়ার মাঝখানে বউ জিজ্ঞেস করল, আজকের রান্না কেমন হয়েছে?

: অসাধারণ! পুরাই অমৃত। মনে হচ্ছে ফাইভ স্টার হোটেলের খাবার খাচ্ছি।

: তুমি কি আমাকে অপমান করছ? ভুরু কুঁচকে বউ বলল।

: অপমান করছি কোথায়! আমি তো তোমার প্রশংসা করছি। অবাক হয়ে বললাম।

: এটা প্রশংসা? তুমি তো আমারে টিটকারি মারতেছ। আমার রান্না ফাইভ স্টার হোটেলের রান্না? তোমার কী ধারণা, আমার রান্না কেমন আমি জানি না? রান্না ভালো হয়নি বললেই তো পারো।

: না, না, রান্না আসলেই ভালো হয়েছে। দেখো, আমি কত মজা করে খাচ্ছি।

: থাক, তোমার আর মজা করে খেতে হবে না।

বলেই আমার প্লেটের মধ্যে এক গ্লাস পানি ঠেলে দিল। তারপর হনহন করে বেডরুমের দিকে চলে গেল। আমি হতাশ হয়ে বোকার মতো বসে রইলাম। বুঝলাম না ঘটনাটা কী হলো। আমি তো প্রশংসাই করেছিলাম।

বিপরীত দৃশ্য 

একদিন সকাল থেকেই একটানা বৃষ্টি হচ্ছে দেখে বউকে বললাম খিচুড়ি রান্না করতে। বউ ভুনা খিচুড়ি রান্না করল। মনের সুখে খিচুড়ি খাচ্ছিলাম।

এ সময় বউ প্রশ্ন করল, খিচুড়ি কেমন হয়েছে বললে না তো।

মনে পড়ল আগেরবার রান্নার প্রশংসা করে ঝাড়ি খেতে হয়েছে। তাই খেতে খেতেই মলিন মুখে উত্তর দিলাম, তেমন একটা ভালো হয়নি।

স্ত্রী তেলেবেগুনে উত্তেজিত হয়ে বলল, মানে কী? আমি এত কষ্ট করে রান্না করলাম আর তুমি বলছ ভালো হয়নি! কেন বাইরে থেকে কার রান্না খেয়ে আসো যে আমার রান্না এখন আর ভালো লাগে না?

: না, না ভালো হয়েছে। এই দেখো আমি কত মজা করে খাচ্ছি।

: তাই? আমার সঙ্গে গেম খেল?

বলেই প্লেটটি সামনে থেকে নিয়ে খিচুড়িগুলো ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিল। আমি হতভম্ব হয়ে বসে রইলাম। তারপর সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, হে মাবুদ তুমি কই? তুমি কি কিছুই দেখবা না?

ঘটনা-চার 

আমি আর আমার স্ত্রী বসে গল্প করছিলাম।

হঠাৎ স্ত্রী বলল, এই শোনো, ভাবছি চুলে বব কাট দেব। কেমন হবে বলো তো?

: অবশ্যই ভালো হবে। আমি শিওর, তোমাকে বব কাটেই বেশি স্মার্ট লাগবে।

: কী বললা! তার মানে আমাকে লম্বা চুলে স্মার্ট লাগে না?

: আমি কি তাই বলেছি?

: তুমি তাই মিন করেছ। নিশ্চয় অফিসে বব কাটওয়ালি কেউ আছে। যার কারণে নিজের বউরে এখন আনস্মার্ট লাগে। ভাবছিলাম চুল কাটব। এখন আর কাটব না। এই আনস্মার্ট বউ নিয়েই তোমার সংসার করতে হবে।

: আনস্মার্ট বউ নিয়ে সংসার করতে আমার কোনোই সমস্যা নাই।

: তার মানে, আমি আসলেই আনস্মার্ট! যা, তোর মতো খারাপ লোকের সংসারই আমি করব না।

বলেই টেবিল থেকে কাচের গ্লাসটা নিয়ে ফ্লোরে আছাড় মারল। তারপর হনহন করে বেডরুমে চলে গেল। আমি বোকার মতো চুপ মেরে বসে রইলাম। কী বলব বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে নিজের মাথা নিজেই লাঠি দিয়ে ফাটিয়ে ফেলি।

বিপরীত দৃশ্য

বেশ কিছুদিন আগে এক বিয়ের দাওয়াত পেলাম।

অনুষ্ঠানের আগের দিন বিকেলে বউ এসে বলল, শোনো, আমি পারলারে যাচ্ছি? আজ চুল কেটে ফেলব। বব কাট দেব। তুমি কী বলো?

বব কাট নিয়ে যেহেতু একবার লঙ্কাকাণ্ড হয়ে গেছে, তাই আজ আর ও পথে গেলাম না।

বললাম, দরকার নাই চুল কাটার। লম্বা চুলই ভালো।

: তা তো বলবাই। তুমি তো চাও না তোমার বউকে স্মার্ট লাগুক। বউ আনস্মার্ট থাকলেই তো সুবিধা। তাহলে কেউ তোমার বউয়ের দিকে তাকাবে না। আসলে আমার ভাগ্যটাই খারাপ। না হলে এমন শয়তান স্বামী কারও কপালে জোটে। বলেই কাঁদতে শুরু করল।

মুখে কিছু না বলে মনে মনে বললাম, ভাগ্য তোমার খারাপ না, ভাগ্য আমার খারাপ। আল্লাহ কেন যে আমারে বোবা বানাইল না। তাহলে তো আর আমাকে তোমার উল্টাপাল্টা প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো না।

ঘটনা-পাঁচ 

একদিন অফিস থেকে ফিরে দেখি, বউ চাদর গায়ে মুড়িয়ে শুয়ে আছে।

কাছে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বললাম, জান, শুয়ে আছ কেন? তোমার কি শরীর খারাপ?

: খবরদার, ঢং করবা না।

: আমি তো ঢং করছি না। আমি তোমার কুশল জিজ্ঞেস করছি।

: কুশলও জিজ্ঞেস করবা না। আমাকে একটু একা থাকতে দাও।

: একা থাকবা কেন? কথা বলো, দেখবে ভালো লাগছে।

: তোমার সমস্যা কী? কেন জ্বালাচ্ছ? বিয়ে করেছি বলে কি একটু একাও থাকতে পারব না? আমার কি কোনো স্বাধীনতা নাই? আমি কি স্বৈরশাসকের হাতে বন্দী?

চিৎকার করে কথাগুলো বলল। বুঝলাম, এখন বসে থাকাটা নিরাপদ নয়। তাই চুপচাপ রুম থেকে চলে আসলাম। কিন্তু একটা কথা আমার মাথায় ঢুকল না, আমাকে স্বৈরশাসক কেন বলল। আর আমি কীভাবেই–বা তার স্বাধীনতা হরণ করলাম।

বিপরীত দৃশ্য 

একদিন অফিস থেকে বাসায় এসেছি। মেয়ে দরজা খুলে দিয়ে বলল, আম্মুর মন খারাপ, তাই শুয়ে আছে। আমি অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে আর বেডরুমে ঢুকলাম না। ড্রয়িংরুমে বসে ডেস্কটপ কম্পিউটার চালু করলাম। তারপর কানে হেডফোন দিয়ে ইউটিউবে মাই নেম ইজ শিলা গানটি ছাড়লাম। কিছুক্ষণ পর বউ রুমে ঢুকল।

: তোমার সমস্যা কী?

: কোনো সমস্যা নাই, আমি কুল।

: তুমি কুল? তা অফিস থেকে এসে একবার খোঁজও তো নিলা না?

: নিয়েছি তো। মেয়ে বলল তোমার নাকি মন খারাপ।

: মানে কী! আমার মন খারাপ শুনেও একবার দেখার প্রয়োজন মনে করলে না। আমি কি এতই ফেলনা হয়ে গেছি? ব্যাটা স্বৈরশাসক।

: আচ্ছা, সত্যি করে বলো তো, তুমি কি স্বৈরশাসক কথার মানে জানো?

: সেটা নিয়ে তোমার মাথা ঘামাতে হবে না। আর তুমি ইউটিউবে এটা কী দেখছ?

: মাই নেম ইজ শিলা, শিলা কি জওয়ানি গানটি দেখছি। এখানে ক্যাটরিনাকে যা হট লাগছে না!

: মাই গড, বদমাশ ব্যাটা বলে কী! বউয়ের মন খারাপ, আর বেটা ব্যস্ত ক্যাটরিনার জওয়ানি নিয়ে। দাঁড়াও, তোমারে আমি বেগানা মহিলার জাওয়ানি দেখাচ্ছি।

বলেই কম্পিউটারের পাওয়ার অফ করে দিয়ে চলে গেল। আমি অবাক হয়ে বসে রইলাম। বুঝলাম না আসলে সমস্যা কার—আমার নাকি আমার কপালের। শুধু মনে মনে বললাম, মাবুদ, তুমি কি কিছুই দেখবা না।

ঘটনা-ছয় 

একবার বউয়ের ভীষণ জ্বর হলো। তিন দিনেও ভালো হলো না দেখে সে খুব হতাশ হয়ে বলল, কী ব্যাপার, আমার জ্বর তো ভালো হচ্ছে না। শোনো, আমার মনে হয় আমার সময় শেষ। আমি বোধ হয় আর বেশি দিন বাঁচব না।

: কী যে বলো, তুমি সহজে মরবা না। আমি শিওর, তুমি আরও দুই শ বছর বাঁচবা।

: এ্যাই ব্যাটা, আমি কি ভূত যে মরব না। তুই কি আমার সঙ্গে মশকরা করোছ?

: তুই–তুকারি করছ কেন? আমি তো তোমার ফেবারেই দোয়া করলাম।

: তোর দোয়ার গুল্লি মারি। আমি অসুখে মরি আর তুই ব্যাটা আমার সঙ্গে ঢং করোছ।

মাই গড, এ তো দেখি ডেঞ্জারাস মহিলা। আমি তো তার দীর্ঘ জীবন কামনা করেছিলাম, সেখানেও এই মহিলার সমস্যা!

বিপরীত দৃশ্য 

বেশ কিছুদিন পর বউ আবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ল। যার কারণে তাকে হাসপাতালে নিতে হলো। হাসপাতালে তার বেডের পাশে তার হাত ধরে বসে আছি।

বউ বলল, জান, আমার মনে হয় আমি আর বাঁচব না। তোমার কী মনে হয়?

খাইছে আমারে, আবারও প্রশ্ন। আল্লাহ জানে আজ আবার কপালে কী আছে। কী উত্তর দিয়ে আবার বিপদে পড়ি। পূর্বের বাজে অভিজ্ঞতার কথা মনে করে তাই এবার বললাম, আমারও কেন জানি মনে হয়, তুমি এবার আর ফিরবা না।

: তুমি এটা কী বললা! তুমি এটা কী ব-ল-লা? তার মানে তুমি আমার মৃত্যুর অপেক্ষায় আছ। আরেকটা বিয়ে করবা, না? দাঁড়াও, তোমারে আমি বিয়ে করাচ্ছি। আমি এখনই বাবাকে ফোন করে সব বলছি।

: শোনো, এটা হাসপাতাল। এখানে চিৎকার করো না, সিনক্রিয়েট করো না।

: তোমার হাসপাতালের গুল্লি মারি। আমার স্বামী আমার মৃত্যুর জন্য দোয়া করবে আর আমি কাঁদতেও পারব না?

বলেই কান্না জুড়ে দিল। নিজেকে কেন জানি বেকুব বেকুব মনে হচ্ছে। চোখ বন্ধ করে মনে মনে বললাম, মাবুদ আর কত চুপ থাকবা। দুনিয়ায় এত লোক পাঠাইছ, আমার মতো একজনকে না পাঠাইলে কি তোমার চলত না।

ঘটনা-সাত 

আজ আমাদের বিবাহবার্ষিকী। আমি আর বউ একটু পর ঘুরতে বের হব। দীর্ঘ সাজের পর বউ সামনে এসে দাঁড়াল।

আদুরে গলায় বলল, জান, দেখো তো আমাকে কেমন লাগছে।

: ফাটাফাটি। মনে হচ্ছে মধুবালা।

: প্লিজ, তেল দিবা না।

: বিশ্বাস করো, আমি তেল দিচ্ছি না।

: না, তুমি মিথ্যে বলছ। সিরিয়াসলি বলো, আমাকে কেমন লাগছে।

ভাবলাম যেহেতু এত করে সুন্দর বলার পরও মানছে না, তাই সমস্যা এড়াতে বললাম, সত্য বলতে কী, তেমন একটুও সুন্দর লাগছে না। আর তোমাকে মধুবালার মতোও লাগছে না।

: তা আমাকে কার মতো লাগছে? আমাকে কি রহিমার মার মতো লাগছে? ভুরু কুঁচকে চোখ দুটো ছোট করে প্রশ্ন করল।

: ঠিক বলেছ, তোমাকে রহিমার মা মতো লাগছে।

: কী বললা! আমাকে বুয়ার মতো লাগছে?

: আমি কখন বললাম, তোমাকে বুয়ার মতো লাগছে! আমি বলেছি রহিমার মার মতো লাগছে।

: রহিমার মা আর বুয়া একই কথা।

: তাই নাকি? এই তথ্য আমার জানা ছিল না। আসলে খোদার দুনিয়ায় এখনো অনেক কিছু জানার বাকি আছে। তা বুয়ারা অসুন্দর হয়, তোমাকে এ কথা কে বলেছে?

: খবরদার, তুই আমার সঙ্গে কথা বলবি না। তুই একটা চরিত্রহীন, তাই এখন আর নিজের বউকে সুন্দর লাগে না, অন্য মেয়েদের সুন্দর লাগে। একটা মানুষ কতটা খারাপ হলে নিজের বউকে বলে রহিমার মা।

: থামো, তোমার সমস্যা কী? প্রথমে আমি তোমারে বললাম সুন্দর লাগছে, মধুবালার মতো লাগছে সেটা তোমার পছন্দ হলো না। আমারে দিয়া জোর করে বলাইলা রহিমার মার মতো লাগছে। আর এখন আমারে বলছ চরিত্রহীন? শোনো, তোমার মাথায় সমস্যা আছে। আজ আর বেড়াতে যাব না। আজ তোমারে নিয়া আমি ডাক্তারের কাছে যাব।

: কী বললা, তুমি আমারে ডাক্তারের কাছে নিবা! তার মানে আমি পাগল? আমার মাথায় সমস্যা আছে?

: তোমার আল্লাহর দোহাই লাগে, চুপ করো। যাও, সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলাম। ডাক্তারের কাছে যাব। তবে তোমার জন্য না। আমি আমারে দেখাব। আসলে আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত থ্রো চেকআপ দরকার। আমার ধারণা, আমার অবশ্যই কোনো না কোনো সমস্যা আছে। না হলে আমি এখনো বেঁচে আছি কীভাবে? কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে তো তোমার মতো পাগলের সঙ্গে সংসার করে বেঁচে থাকার কথা না।

: তুমি আমাকে আবারও পাগল বললা!

: প্লিজ, চুপ করো। এবার থামো, আর কথা বাড়িয়ো না।

: তোর এত বড় সাহস, তুই আমারে চুপ করতে বলিস? যা, তোর সংসার আমি আর করব না। আমি এই সংসারের মুখে ঝাঁটা মারি।

বলেই কান্না জুড়ে দিল। মানুষ নাকি অধিক শোকে পাথর হয়ে যায়। কিন্তু আমি অধিক শোকে লোহা হয়ে গেছি। আজব, এত সুন্দর রোমান্টিক একটা দিনকে এই মহিলা কীভাবে তছনছ করে দিল।

ঘটনা-আট 

না, আজ আর না, বাকিটা অন্য আরেক দিন...।

বি. দ্রষ্টব্য: ওপরের সব ঘটনাই কাল্পনিক। শুধু মজা করার জন্য লেখা। এর সঙ্গে বাস্তবের কারও মিল নাই। আমার বউয়ের সঙ্গে তো বিন্দুমাত্রও মিল নাই।

বি. দ্রষ্টব্যের দ্রষ্টব্য: বি. দ্রষ্টব্যে যা বলেছি তা সংসারের শান্তির জন্য বলেছি। এই দুনিয়ায় শান্তি খুবই জরুরি।