ঈদের খুশিতে ভরে উঠুক সবার জীবন

প্রথম আলোর ফাইল ছবি
প্রথম আলোর ফাইল ছবি

প্রবাসীদের ঈদ অভিজ্ঞতা কম-বেশি সবারই সমান। প্রিয়-আপনজনদের জন্য হৃদয়ে শুধুই নির্মম হাহাকার। আঁকাবাঁকা মেঠো পথ ধরে রঙিন আবেশে ঈদগাহে নামাজ শেষে কোলাকুলিতে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়, প্রতিবেশী ধনী-গরিব সবাই যেন একাকার। ঈদ এলে সেই স্মৃতি যেন প্রবাসীর হৃদয়ে এক বিষাক্ত তীর হয়ে তীব্র আঘাত হানে।

ঈদ সব সময় আনন্দের হয়, এটাই সব সময় জেনে এসেছি। অনেক ভুলত্রুটি, মান-অভিমান মিটিয়ে সবাই নাড়ির টানে ছুটে যান আপন ঠিকানায় পরম প্রিয়জনদের কাছে। প্রতিবারই লক্ষ করি, সম্পর্কের টানে সুন্দর ঈদ আনন্দের জন্য বিপুলসংখ্যক মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস, ট্রেন, লঞ্চে গ্রামের বাড়ি যান। এমনকি অনেকে ঢাকা থেকে ফিরতি কোরবানির গরু বহনকারী ট্রাকেও চরম ঝুঁকি নিয়ে যান।

ঈদে যান্ত্রিক-অযান্ত্রিক অনেক গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয় মানুষ। তাই ঈদের আনন্দ, হাসিখুশি অনেক পরিবারের জন্য কান্নার রোলে পরিণত হয়। পরিবার শুধু নয়, সমাজেও নেমে আসে বিষাদ। বয়ে বেড়াতে হয় সারা জীবনের কান্না। এ জন্য দরকার সামাজিক সচেতনতা। আর এটা তৈরি করতে হবে সরকারকে। সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য চাই রাজনৈতিক সদিচ্ছা আর যথাযথ পদক্ষেপ।

মানুষ সামাজিক জীব। সেই ছোটবেলা থেকে আমরা পড়ে অথবা শুনে এসেছি। সমাজবদ্ধ ছাড়া মানুষ থাকতে পারে না। কিন্তু বর্তমানে সমাজ তো দূরে থাকুক, যৌথ পরিবারই খুঁজে পাওয়া ভার।

লেখক
লেখক

আমি আমার দেশ নিয়ে ভীষণ গর্ববোধ করি। তেমনি আমার সমাজ (নিজ এলাকা) নিয়েও করি। আমাদের সমাজ অনেক বড় একটি সমাজ। আমরা একে অপরের বিপদে-আপদে সব সময় পাশে দাঁড়াই। বিশেষ করে ঈদের সময় আমরা সবাই একাকার হয়ে যাই। কর্মসূত্রে যারা পরিবার পরিজন নিয়ে দূরে থাকেন অথবা কর্মক্ষেত্রে একা মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর বিদেশ-বিভুঁইয়ে থাকেন, তারা অপেক্ষার প্রহর গোনেন ঈদের এই মিলনমেলার জন্য।

ঈদের দিন নামাজ শেষে যথারীতি চলে কর্মযজ্ঞ। আমাদের এলাকায় যত মানুষ কোরবানি দিতে সক্ষম, সবার পশু মাদ্রাসার মাঠে এনে একে একে জবাই করা হয়। খুবই সুশৃঙ্খলভাবে এ কাজটা করা হয়। এ সময় ছোট-বড় সবাই পরম আনন্দে মেতে ওঠে। মাংস ছাড়ানোর পর তিন ভাগের এক ভাগ সেখানে জমা করা হয় এলাকার দরিদ্র মানুষের জন্য। পরে জমা করা মাংস তাদের মধ্যে মাথাপিছু হিসেবে বণ্টন করা হয়।

কিন্তু এত সুন্দর কাজের মধ্যেও একটি বৈষম্যমূলক পদ্ধতি উত্তরাধিকার সূত্রে আমাদের এলাকার সমাজ বহন করে আসছিল। আর তা হলো জমা করা মাংস শুধু পুরুষদেরই মাথাপিছু হিসেবে ভাগ করে দেওয়া হতো। এ ক্ষেত্রে নারীরা কোনো ভাগ পেতেন না। পুরুষের ভাগের মধ্যেই নারীদের অংশ ছিল। কিন্তু অসংগতি হলো একটি পরিবারে যদি একজন পুরুষ থাকে আর পাঁচজন নারী থাকে তাহলে সেই পরিবার কিন্তু বিরাট বৈষম্যের শিকার হলো।

এটা একটা সময় আমাকে এবং আরও কয়েকজনকে খুব পীড়া দিত। আমাদের সবার দীর্ঘ চেষ্টার ফলে প্রায় পাঁচ বছর আগে এই বৈষম্য দূর করা সম্ভব হয়েছে, বিশেষত তরুণদের প্রচেষ্টায়। ওই বছর আমি দেশেই ঈদ করেছিলাম। আমার মনে হয় সেই ঈদটা ছিল আমাদের সমাজের সবচেয়ে আনন্দের ঈদ। কারণ আমরা কুসংস্কার পরিত্যাগ করে ইতিবাচক সংস্কারের অগ্রসর হয়েছি।

জীবনের তাগিদে পরবাসী হয়ে সারাক্ষণ দেশে ফেরার আকুলতায় কাতর হয়ে থাকি। বাস্তবতার নিরিখে সাধ আর সাধ্য সবই বিসর্জন দিতে হয়। কিন্তু থেকে যায় দেশ, সমাজ ও আপনজনের সঙ্গে মধুর মিলনের আকুতি। প্রবাসে থেকেও সব সময় দেশের দশের কল্যাণ কামনা করি। চেষ্টা করি সমাজের কল্যাণে কিঞ্চিৎ হলেও অবদান রাখতে। সবাই ভেদাভেদ ভুলে ‘সকলের তরে সকলে’ কাজ করে যাবে এই বাসনা অবিরত। সবার ঈদ সুন্দর ও নিরাপদ হোক। ঈদ মোবারক।