বাংলাদেশের নারীদের অর্জন নিয়ে ইস্তাম্বুলে আলোচনা

বাংলাদেশের নারীদের অর্জন নিয়ে ইস্তাম্বুলে আলোচনা
বাংলাদেশের নারীদের অর্জন নিয়ে ইস্তাম্বুলে আলোচনা

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে গেদিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক এক আলোচনা সভায় তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের নারীদের ক্ষমতায়নের প্রেক্ষাপট, অবস্থা ও অর্জনের কথা। ইস্তাম্বুলে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম এই অর্জনের কথা তুলে ধরেন।

গত বুধবার (৭ আগস্ট) AIESEC–এর উদ্যোগে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অন্যদের মধ্যে তুরস্ক, জাপান, ইউক্রেন, মরক্কো, তাঞ্জানিয়া, তিউনিসিয়া, সার্বিয়া, পাকিস্তান ও আলজেরিয়া প্রভৃতি দেশের AIESEC-এর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

AIESEC তরুণ নেতৃত্ব গঠনের জন্য অত্যন্ত সুপরিচিত একটি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম। যার রয়েছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক তরুণ সদস্য। যাঁদের মধ্যে অনেকেই এখন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।

বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে আজ সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে যে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটেছে তার পেছনে রয়েছে নারীদের বলিষ্ঠ ভূমিকা। তিনি বলেন, নারীর বর্তমান অবস্থা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি উজ্জ্বল। নারীরা এখন তাঁদের মায়েদের চেয়ে অধিকতর শিক্ষিত ও অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম। যা তাঁদের অধিকতর আত্মবিশ্বাসী ও স্বাবলম্বী করে তুলেছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ সঞ্চার করে যে তৈরি পোশাক খাত, সেখানে নিয়োজিত রয়েছে বিপুলসংখ্যক নারী। যাঁদের মেধা, পরিশ্রম ও দক্ষতায় বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে আজ দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনসহ নির্বাচিত আসন মিলিয়ে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী সাংসদ রয়েছেন। যা নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের স্বাক্ষর বহন করে।

বাংলাদেশের নারীরা এখন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি রক্ষায় অবদান রেখে চলেছেন। যা বিশ্ব দরবারে বহুলভাবে প্রশংসিত। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশে রূপান্তরের পথে অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে নারীর কার্যকর ও অর্থবহ অংশগ্রহণ। নারীকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার ফলে বাংলাদেশ আজ এ সুফল ভোগ করছে।

নারীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে কনসাল জেনারেল সরকারের গৃহীত বিভিন্ন নীতি, কার্যক্রমের কথা বিশদভাবে বর্ণনা করেন। ১২ গ্রেড পর্যন্ত মেয়েদের বিনা বেতনে পাঠদান, শিক্ষা উপবৃত্তিসহ বিভিন্ন স্কিমের কথা তুলে ধরেন যা জ্ঞাননির্ভর সমাজ গঠনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে বলে দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যক্ত করেন। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ, শিশু-ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে।

ড. ইসলাম উল্লেখ করেন, নারীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী আরও বিস্তৃত করেছে সরকার। বিধবা, বয়স্ক ও দুস্থ মহিলাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশ মানব পাচার ও গৃহকর্মী নির্যাতনসহ নারীর বিরুদ্ধে অন্যান্য নির্যাতন ও নিপীড়ন রোধে রয়েছে উপযুক্ত প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা।

আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারীদের একাংশ
আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারীদের একাংশ

তিনি বলেন, লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ প্রথম স্থানে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের বিশ্ব স্বীকৃতির উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে নারীর শিক্ষা ও নারী উদ্যোগের জন্য গ্লোবাল উইমেন্স লিডারশিপ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

কনসাল জেনারেল বাংলাদেশ-তুরস্ক ভ্রাতৃপ্রতিম দুই দেশের মধ্যেকার দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতাকে আরও গভীর ও প্রসারিত করার তাগিদ দিয়ে উপস্থিত তুর্কি নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণ ও পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য উৎসাহিত করেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের নারীর ব্যাপক অগ্রগতি ও সাফল্যের গল্প জানতে পেরে উপস্থিত সবাই প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিজ্ঞপ্তি