ভূমিকম্প স্মৃতি জাদুঘর

জাদুঘরের প্রদর্শনী
জাদুঘরের প্রদর্শনী

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে জাপান পৃথিবীর অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হওয়ায় এ দেশের সঙ্গে ভূমিকম্প শব্দটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় জাপানিদের প্রস্তুতির কমতি নেই। আর এই প্রস্তুতির প্রতিফলন রয়েছে তাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা, নগরায়ণ ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ সর্বত্র। ভূমিকম্প মোকাবিলায় জনসাধারণকে তাদের করণীয় সম্পর্কে সচেতন ও প্রশিক্ষিত করার জন্যও রয়েছে নানা রকম প্রয়াস।

তবে ভূমিকম্পসংক্রান্তে ব্যতিক্রমধর্মী একটি উদ্যোগ হলো কোবে শহরের ভূমিকম্প স্মৃতি জাদুঘর। ১৯৯৫ সালের ১৭ জানুয়ারি ভোর ৫টা ৪৬ মিনিটে রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প কোবে শহরে আঘাত হানে, যা জাপানের ভূমিকম্পের ইতিহাসে দ্য গ্রেট হানশিন বা আওয়াজি ভূমিকম্প নামে পরিচিত।

জাপানের ইতিহাসে এটিই বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। যাতে ৬ হাজার ৪০০ জনের বেশি লোক প্রাণ হারায়। মুহূর্তেই লন্ডভন্ড হয়ে যায় সবকিছু। পুরো শহর এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।

জাদুঘরের প্রদর্শনী
জাদুঘরের প্রদর্শনী

১৯৯৫ সালের সেই ভূমিকম্পের দুঃসহ স্মৃতিকে স্মরণ ও জনসাধারণকে ভূমিকম্পের ব্যাপারে সচেতন করার নিমিত্তেই প্রতিষ্ঠা করা হয় এই জাদুঘর। ২০০২ সালে এটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। জাদুঘরটি ১৯৯৫ সালের ভূমিকম্পের ধ্বংসাবশেষ, ছবি, ভিডিও, ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া মানুষের সাক্ষাৎকার, ডকুমেন্টারি, থ্রিডি মুভি ও সিম্যুলেশন দিয়ে অত্যন্ত সুন্দরভাবে সাজানো।

জাদুঘর ভবন
জাদুঘর ভবন

এখানে ভূমিকম্পসংক্রান্ত খুঁটিনাটি সব তথ্যই আছে। গবেষক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবীসহ সব ধরনের মানুষের জন্যই এটি একটি চমৎকার তথ্যভান্ডার। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পুরো জাদুঘরটি এমনভাবে সাজানো, এটি যে কাউকেই দুর্যোগকালে মানুষের সেবায় এগিয়ে আসার ব্রতে উদ্বুদ্ধ করবে। ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি প্রশমন ও দ্রুততম সময়ে পুনর্বাসনের জন্য অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ব্যক্তি ও পারিবারিক পর্যায়ে সক্ষমতা বৃদ্ধিতেও এই জাদুঘরটি সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।

এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষা ও গবেষণার বিষয় এবং মহৎ পেশা হিসেবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরার ক্ষেত্রেও এ জাদুঘরটি নিঃসন্দেহে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।