পরিবারহীন আরেকটি ঈদ ও আমাদের ভালো থাকা

সিঙ্গাপুরে ঈদের জামাত
সিঙ্গাপুরে ঈদের জামাত

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি। তাদের বেশির ভাগই পরিবার-পরিজন ছাড়া আরেকটি ঈদ উদ্‌যাপন করেছেন। প্রবাসীর ঈদ মানেই শুধু ঈদের নামাজ। এরপর অনেকে বিছানায় শুয়ে লম্বা ঘুম দেন। কেউবা মোবাইলে প্রিয়জনদের সঙ্গে কথায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আবার অনেক প্রবাসী ঈদের দিনেও কাজ করেন। এটাই বাস্তবতা।

সিঙ্গাপুরে ঈদুল আজহা উদ্‌যাপিত হয়েছে ১১ আগস্ট রোববার। আগের দিন সারা রাত ডিউটি শেষে সকালে ঈদের জামাতে যোগ দেন আকরাম খান ও আমিনুল ইসলাম। ঘুমে তাঁদের চোখের পাতা বুজে আসছিল। ঈদ উদ্‌যাপন সম্পর্কে তাঁদের কাছে জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, ভাই গতকাল সারা রাত ডিউটি করেছি। এখন নামাজ শেষে খাওয়া-দাওয়া করে ঘুম দিতে হবে। ঘুম থেকে উঠে আবারও রাতে ডিউটিতে যেতে হবে। নিজের ইচ্ছেমতো ডিউটি অফ দেওয়া যায় না।

ঈদের নামাজ শেষে কয়েকজন প্রবাসী
ঈদের নামাজ শেষে কয়েকজন প্রবাসী

তাঁদের কথা সত্য। সিঙ্গাপুরে ঈদ উপলক্ষে ছুটি থাকে না। এবার অবশ্য ঈদুল আজহা উদ্‌যাপিত হয়েছে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে। সিঙ্গাপুরে অনেকে শিফট ভিত্তিতে কাজ করেন। ছুটির দিনে কাজের শিডিউল থাকলে অবশ্যই কাজে যেতে হবে। নিজের ইচ্ছেমতো অফ নিলে তার ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

আমি একজন প্রবাসী হিসেবেই নিজের এবং প্রবাসের কাছের ও পাশের মানুষগুলো দেখে যা উপলব্ধি করছি, আসলে আমাদের মতো প্রবাসীদের ঈদের আনন্দ বলতে দেশের আপনজনদের মুখের হাসি। তবে অনেকের পক্ষে পরিবারের সবার মুখে হাসি ফোটানো সম্ভব হয় না। আর এ কারণেই অনেক প্রবাসী মানসিক হীনম্মন্যতায় ভোগেন। অনেকেই পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে ব্যর্থ হয়ে অন্য পথ বেছে নেন।

ঈদের দিন কয়েকজন
ঈদের দিন কয়েকজন

প্রবাসী শরিফ উদ্দিন বলেন, প্রবাসের মাঝে আরেকটি ঈদ করলাম বুকে চরম ব্যথা নিয়ে। যে ব্যথা পরিবার-পরিজন থেকে দূরে থাকার ব্যথা। প্রিয় সন্তানের সঙ্গে ঈদের জামাত আদায় করতে না পারার ব্যথা। পরিবার ছেড়ে ঈদ করতে অনেক কষ্ট হয়। তবুও পরিবারের সবার মুখে হাসি ফোটাতে সব হাসিমুখে মেনে নিয়েছি। মাঝেমধ্যে নিজের অজান্তেই কেন জানি চোখের পাতা বুজে আসে।

প্রবাসীদের বাড়ি থেকে ফোনে কেউ যখন জিজ্ঞেস করেন, ঈদ কেমন কাটল? তখন হাসিমুখে সবাই জবাব দেন, বেশ ভালো। এভাবেই সাদামাটাভাবে কেটে যায় প্রবাসীদের ঈদ ও বিভিন্ন উৎসবের দিন। তবুও বলব আমরা আছি বেশ ভালো।