কাশ্মীর, ডেঙ্গু আতঙ্ক আর ঈদ

লেখিকা
লেখিকা

নিউইয়র্কে একটা হাসপাতালে অল্প কিছুদিন আমার একসঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল শাবানা আপার সঙ্গে। অসাধারণ একজন মানুষ। তিনি জম্মু–কাশ্মীরের। নিজের চারটা বাচ্চা। বড় বাচ্চাটাকে রেখে এসেছেন কাশ্মীরে মায়ের কাছে। এত পড়াশোনা আর কাজ নিয়ে বাচ্চাটাকে কাছে রাখতে পারেননি। তাঁর সঙ্গে এখনো আমার যোগাযোগ রয়েছে।

এই ঈদে হাসপাতালে কাজ করতে হয়েছে শাবানা আপাকে। আর আমার ছিল ছুটি। কাশ্মীরে মিলিটারি ফোর্স বাড়ানো আর অটোনমি কমানোর পর তিনি তাঁর মা আর বাচ্চার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। পাহাড় আর মেঘের মাঝে ছোট্ট স্বর্গে এখন কালো মেঘের আনাগোনা। তাঁর কান্না শুনলাম অনেকক্ষণ। এত লক্ষ্মী একটা মানুষের এতটা কষ্ট পাওয়া কি উচিত?

অন্যদিকে দেশে দেখছি ডেঙ্গু (এডিস মশাবাহিত ভাইরাল জ্বর) আক্রান্তের খবর প্রতিদিন। জ্বরটা মাথাব্যথা, হাড়, জয়েন্টে ব্যথা, র‌্যাশ নিয়ে আসছে। জ্বরে প্যারাসিটামল ছাড়া অ্যাসপিরিন/আইবোপ্রোফেন/ন্যাপ্রোক্সেন জাতীয় ওষুধ কিছুতেই খাওয়া চলবে না।

জ্বর কমে গিয়ে পেটব্যথা, বমি, রক্ত পড়া শুরু হলে কিংবা নেতিয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিতে হবে ফ্লুইড বা ব্লাড প্রোডাক্ট দিতে অথবা আইসিইউ সাপোর্ট নিতে। এতে ফুসফুস বা পেটে পানি এলেও শক কেটে গেলে এগুলো দ্রুত অ্যাবজর্ব হবে। ২৪ বা ৪৮ ঘণ্টা পরে রোগী বাসায় এলেও অন্তত সাত দিন মশারি বা রিপেলেন্ট দিয়ে রোগীকে যাতে মশা না কামড়াতে পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। নয়তো সুস্থ মানুষ ওই মশার কামড় খেলে ডেঙ্গু আক্রান্ত হবে। বৃদ্ধ, শিশু, ডায়াবেটিস, ক্যানসার বা অন্য ক্রনিক রোগে আক্রান্ত মানুষের এ রোগে ভয়াবহতা বেশি।

ঈদুল আজহা বা আত্মত্যাগের ঈদ এ দেশে একটু অন্য রকম। পশু কোরবানি দিয়ে গরিবের বা আত্মীয়ের অংশ বিতরণে সমস্যা থাকায় সবাই মোটামুটি দেশে দেন কোরবানি। ছুটি থাকলে অনেকে দেশে বাচ্চা নিয়ে চলে যান বেড়াতে। হজে যেতে পারলে তো কথাই নেই।

স্যানডিয়াগোতে আমরা ঈদের নামাজ পড়ি বিভিন্ন মসজিদে। নামাজের পরপর আমাদের সবার দাওয়াত থাকে বিভিন্ন বাসায়। নিজের কাছের মানুষগুলো না থাকলেও ভাবিদের আদর আপ্যায়নে কখনো মনে হয় না এত দূরে আছি।

সাগরের কাছাকাছি ওশান সাইডে তিন ভাবি মিলে কয়েক শ মানুষের ঈদ আয়োজন করেন অনেক বছর ধরে। মানুষের প্রতিভা দেখে আমি মুগ্ধ হই। এটা নতুন কিছু না। পাহাড়ের মাথায় বাসা। ব্যাকইয়ার্ডে কয়েক শ মানুষের আয়োজন। ঈদের দিন গল্পে গল্পে দুপুর। শেষ বিকেলের আলোয় সবার চোখে আনন্দ ছটা দেখে বাসায় ফিরলাম। বাসায় ফিরে রাতে আরেক বন্ধুর বাসায়।

সবাই সুস্থ থাকুন এই কামনা।