বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রতীক

এথেন্সে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভা
এথেন্সে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভা

প্রবাসী বাংলাদেশির অংশগ্রহণে বিনম্র শ্রদ্ধা, যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে পালিত হয়েছে জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী। দেশটির বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে গত বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) দিবসটি পালন করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও তিতিক্ষার জীবনাদর্শ ও কর্মের ওপর আলোচনায় বক্তারা বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার কার্যকর করার দাবি জানান। তাঁরা জাতির পিতার ঐতিহাসিক অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তাঁর আদর্শ ও দর্শনকে হত্যা করতে পারেনি। তাঁরা বর্তমান সরকারের অধীনে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিন তাঁর বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ও আদর্শ বাস্তবায়নে নতুন প্রজন্মসহ সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রতীক। তিনি শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টাই নন, স্বাধীনতা–উত্তর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের জন্য স্বীকৃতি আদায়ে তাঁর প্রাজ্ঞ রাষ্ট্রনীতি ও কূটনীতি তাঁকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতার মর্যাদায় আসীন করেছে।

রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প-২০২১ ও রূপকল্প-২০৪১-এর লক্ষ্য অর্জনের মধ্য দিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সোনার বাংলার গড়ার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। বাংলাদেশের অব্যাহত উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি গ্রিসে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যোগ দেওয়ারও আহ্বান জানান।

মো. জসীম উদ্দিন ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় পালন করতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই জন্মবার্ষিকী পালনে দূতাবাস বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তাতে সর্বস্তরের প্রবাসী নেতাদের অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি।

আলোচনার পর মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। মাহফিলে বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

আলোচনা অনুষ্ঠান শুরু হয় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রেরিত বাণী পাঠের মধ্য দিয়ে। বাণী পাঠের পর বঙ্গবন্ধুর গৌরবোজ্জ্বল কর্মময় জীবনের ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। এরপর বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে দূতাবাসের প্রথম সচিব সুজন দেবনাথের সঞ্চালনায় জাতির পিতার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ থেকে অংশবিশেষ পাঠ করেন প্রবাসী নেতারা।

বক্তব্য দিচ্ছেন মো. জসীম উদ্দিন
বক্তব্য দিচ্ছেন মো. জসীম উদ্দিন

এর আগে সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গণে রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিন কর্তৃক জাতীয় পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে অর্ধনমিতকরণের মধ্য দিয়ে শোক দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রদূত। প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন সংগঠনও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। পরে বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত এবং দেশ ও জাতির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এ ছাড়া দূতাবাস প্রাঙ্গণে সকাল থেকেই পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করা হয়।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দূতাবাস চত্বরে বঙ্গবন্ধুর মহতী কর্মময় জীবনের আলোকচিত্র ও বঙ্গবন্ধুর অমূল্য বাণীর সপ্তাহব্যাপী প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রদূত। প্রদর্শনীতে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময় থেকে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক জীবনের, বিশেষত যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন ও বিশ্ব অঙ্গনে বঙ্গবন্ধুর সক্রিয় কূটনৈতিক উদ্যোগ ও কর্ম তৎপরতার চিত্র তুলে ধরা হয়।

এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের গ্রিক অনুবাদও প্রদর্শন করা হয় এই প্রদর্শনীতে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণসমূহ থেকে তাঁর স্মরণীয় কিছু বাণীও প্রদর্শন করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং তাঁর অমূল্য বাণীর সংযোজন অনুষ্ঠানে যোগদানকারী দর্শকের প্রশংসা অর্জন করে। প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোররা এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর মহতী জীবন ও কর্ম সম্পর্কে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দূতাবাস চত্বরে আয়োজিত এই প্রদর্শনী আগামী এক সপ্তাহ দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচিতে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের নেতারাসহ বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি ও দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি