ইস্তাম্বুলে বিনম্র শ্রদ্ধায় জাতীয় শোক দিবস

ইস্তাম্বুলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়
ইস্তাম্বুলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বিনম্র শ্রদ্ধায় পালন করা হয়েছে জাতীয় শোক দিবস ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী। এ উপলক্ষে ইস্তাম্বুলের বাংলাদেশ কনস্যুলেট দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। দিনের প্রথম ভাগে মিশন প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়।

দিনের দ্বিতীয় ভাগে ইস্তাম্বুলভিত্তিক ইসলামিক কো-অপারেশন ইয়ুথ ফোরামের (আইসিওয়াইএফ) সহযোগিতায় তাদের কনফারেন্স হলে ‘একজন নেতা ও একটি জাতির জন্ম’ শীর্ষক গোলটেবিল সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় বক্তারা বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে সব ধরনের শোষণ, বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে অভিহিত করেন। সভায় ইস্তাম্বুলের থিঙ্কট্যাংক, শিক্ষাবিদ, প্রবাসী বাংলাদেশিসহ অনেক অতিথি উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে ইস্তাম্বুলে নিয়োজিত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য ভূমিকা ও অবদানের কথা স্মরণ করেন। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত জাতির পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর দৃঢ়তা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কথাও স্মরণ করেন। তিনি বলেন, আগামী বছর ইস্তাম্বুলসহ গোটা বিশ্বে যথাযথ মর্যাদায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন করা হবে।

তিনি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক খাতে অব্যাহত প্রবৃদ্ধি ও অর্জন এবং সমসাময়িক বিশ্বে বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক তাৎপর্যের কথা তুলে ধরেন। বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যকার ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি উল্লেখ করেন, ভ্রাতৃপ্রতিম দুই দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষ করে অর্থনীতি, বাণিজ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও পর্যটন খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা ও উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে।

ইস্তাম্বুলভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক ‘GASAM’-এর সভাপতি জেমাল দেমির বলেন, বাংলাদেশের জনগণ অনেক ভাগ্যবান যে বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা পেয়েছে, যাঁর সাহসী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, দর্শন ও দূরদর্শিতা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে চিরদিনের জন্য বেঁচে থাকবে এবং তাদের আলো ও পথ দেখাবে। তিনি বাংলাদেশ ও তুরস্কের জনগণের পারস্পরিক স্বার্থ বাস্তবায়নে ও উপকারী দুই দেশের মধ্যকার বিরাজমান অফুরন্ত সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন।

‘একজন নেতা ও একটি জাতির জন্ম’ শীর্ষক গোলটেবিল সভা
‘একজন নেতা ও একটি জাতির জন্ম’ শীর্ষক গোলটেবিল সভা

বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্যে ইসলামিক কো-অপারেশন ইয়ুথ ফোরামের পরিচালক মোহাম্মদ মালিক থাইলান বলেন, এমন অনুষ্ঠান তুর্কি জনগণকে বাংলাদেশের সত্যিকারের ইতিহাস জানতে সুযোগ করে দেবে, যা দুই দেশের জনগণের মধ্যে বোঝাপড়া ও সহযোগিতার পর্যায়কে আরও গভীর ও শক্তিশালী করবে।

আরও বক্তব্য দেন মালতেপে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস রেক্টর বেতুল চতোখসুলেন ও সাংবাদিক আহমেত চস্কুনাইদিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কনস্যুলেটের দূতালয় প্রধান ও কনসাল বিদোষ চন্দ্র বর্মণ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার মধ্যে তুর্কি ভাষায় অনুবাদকৃত বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের কপি বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া বিশেষ অতিথিদের তুর্কি ভাষায় বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত জীবনী’ বই এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতি-সংবলিত ক্রেস্ট উপহার দেওয়া হয়।

এর আগে দিনের প্রথম ভাগে অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে কনস্যুলেটে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর এক উন্মুক্ত আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। পরে বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদেরসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদের আত্মার মাগফিরাত এবং দেশের ও জনগণের শান্তি, প্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করে প্রার্থনা করা হয়। এরপর দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি