মায়ের আগমনী

ছবি: প্রথম আলো
ছবি: প্রথম আলো

সিডনিতে এখন বসন্ত ছুঁইছুঁই করছে আর বাংলাদেশে শরৎকাল। শরৎকালে যখন সাদা কাশফুল আর আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভেসে বেড়ায়, জানান দেয় দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। আর কিছুদিন বাকি দুর্গাপূজার। আগামী ৪ অক্টোবর দুর্গাপূজা শুরু।

এখানে বিভিন্ন সংগঠন তাদের মতো করে দেবী দুর্গাকে বরণ করার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। সিডনিতে মাসব্যাপী শনি–রোববার ছুটির দিনে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। মহালয়ার পর থেকে দুর্গাপূজা শুরু হয়ে যায়। সিডনিতে এবার ১৪টি দুর্গাপূজা হচ্ছে।

সিডনিতে অন্য সব সংগঠনের মতো বাংলাদেশ সোসাইটি: পূজা ও সংস্কৃতি (বিএসপিসি) তাদের দুর্গাপূজা প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। সেই হিসাবে বাচ্চাদের নাচ ও গানের রিহার্সাল হচ্ছে প্রতি রোববার বাংলা স্কুলে। আগামী ৫ অক্টোবর শনিবার ওয়েন্টওয়ার্থভিল রেডগাম ফাংশন সেন্টারে বিএসপিসির দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।

শরৎকালে এই পূজা হয় বলে এর নাম শারদীয় দুর্গাপূজা। শরৎকালে দুর্গাপূজার সূচনা হয় মূলত রামায়ণের কাহিনিকে অবলম্বন করে। ত্রেতা যুগে রাক্ষস রাজা রাবণকে বধ ও সীতাকে উদ্ধারের জন্য রামচন্দ্র শরৎকালে (অকালে) দেবী দুর্গার পূজা করেছিলেন। অকালে হয়েছিল বলেই এর আরেক নাম অকালবোধন।

শারদীয় দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দুধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব। দুর্গাপূজা অনেক ব্যয়বহুল। তাই অনেকে মিলে একসঙ্গে করেন বলে একে সর্বজনীন দুর্গাপূজা বা বারোয়ারি দুর্গাপূজাও বলা হয়। বারো মাসে তেরো পার্বণ বাঙালির একটার পর একটা অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। ভাদ্রের শেষ আর আশ্বিন মাস শুরু হলেই পূজার তোড়জোড় আর মায়ের আগমনী বার্তা আকাশে-বাতাসে প্রতিধ্বনিত হয়।

‘বাজল তোমার আলোর বেণু, মাতল রে ভুবন
আজ প্রভাতে সে সুর শুনে খুলে দিনু মন।।’

সুপ্রীতি ঘোষের এই গানের সুরে ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র মহাশয়ের কণ্ঠে ‘আজ দেবীপক্ষের প্রাক্‌-প্রত্যুষে জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতা মহাশক্তির শুভ আগমনবার্তা আকাশ-বাতাসে বিঘোষিত’— মহিষাসুর মর্দিনী গীতি-আলেখ্যের মাধ্যমে শুরু হয়ে যায় দেবী দুর্গার আবাহনবার্তা।

এ বছর সিডনিতে বাংলাদেশি দুটি সংগঠন তাদের দুর্গাপূজা পাঁচ দিনব্যাপী করবে। আগমনী সংগঠন প্রতিবছরের মতো শাস্ত্রীয় নিয়ম ও সময় মেনে তাদের পূজা করবে গ্ল্যানফিল্ড কমিউনিটি হলে। নতুন আরেকটি সংগঠন শঙ্খনাদও পাঁচ দিনব্যাপী পূজা করবে ক্যাম্বেলটাউনে। এবার শনি–রোববার পূজার সময়ে পড়ে যাওয়ায় সুবিধা হয়েছে। বেশির ভাগ সংগঠন শনি–রোববার করেই পূজার আয়োজন করবে।

মা দুর্গা জগজ্জননী শক্তির দেবী। তিনি দশভুজা। দশ হাত দিয়ে তিনি তাঁর ভক্তদের রক্ষা করেন। দুর্গাপূজা শুধু ধর্মীয় দিক নয়, এটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের এক অনন্য উৎসব। জগজ্জননী মা দুর্গা পৃথিবীর সবার দুঃখ, দুর্দশা ও হতাশা লাঘব করে বিশ্বের বুকে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন।

জগজ্জননী দেবী দুর্গার আগমনে আমাদের সবার দুঃখ, কষ্ট, হিংসা, দ্বেষ দূর হোক। পরাজিত হোক সব অশুভ শক্তির। সবার দেহ ও মনে ছড়িয়ে পড়ুক পবিত্রতা। সবখানে ছড়িয়ে পড়ুক শান্তি ও সুখের বারতা। সত্য-সুন্দরের আলোয় আলোকিত হোক পৃথিবী। এই হোক আমাদের সবার কামনা।