ঈদ পুনর্মিলনীতে কল্যাণ কামনা

ঈদ পুনর্মিলনীতে সমবেতদের একাংশ
ঈদ পুনর্মিলনীতে সমবেতদের একাংশ

একটি ফোন। ঈদ শুভেচ্ছা। জানালেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। আমি বিনিময় শ্রদ্ধা জানাই। আমন্ত্রণ ওপাশ থেকে। ঈদ পুনর্মিলনীর। আনন্দ আমার। যথারীতি শামিল হলাম আবুধাবির বাংলাদেশ ভবনে। উৎসবে আয়োজনে প্রাণের সুখ অনুভবে।

ঈদের অর্থ খুশি বা উৎসব। তবে আভিধানিক অর্থ পুনরাগমন বা বারবার ফিরে আসা। ঈদ শব্দটির অর্থের সঙ্গে অনেকের আনন্দের অর্থের কোনো যোগাযোগ নেই। তবে সামাজিক উৎসবের প্রকৃতিকে অর্থবহ করে তোলে তার আদি অর্থ। সামাজিক উৎসব বারবার ফিরে আসে। আবার ঈদ শব্দের আদি অর্থেও আছে তার ইঙ্গিত।

ঈদ পুনর্মিলনীতে সমবেতদের একাংশ
ঈদ পুনর্মিলনীতে সমবেতদের একাংশ

সেদিন কথাটা শুরু হয় কোলাকুলি নিয়ে। কোথা থেকে এল কিংবা কীভাবে তার ব্যাপ্তি, এমন একটি প্রশ্ন ওঠে। ঈদ পুনর্মিলনীতে আমন্ত্রণ করা হয়েছে আবুধাবির বাংলাদেশ ভবনে। রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন সবাইকে। কোলাকুলি করছেন তাঁরা। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ।

দরবার হলে বসার সূচনালগ্নেই শব্দটির হাত বোলানো। বাংলাদেশ সমিতির সভাপতির প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেন উপস্থাপন করলেন বিষয়টি। সামনে শেখ যায়েদ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হাবিব উল হক খোন্দকার। রাষ্ট্রদূত কেন্দ্রে। পাশে শহিদুল হক খান, হামিদুর রহমান। একটু আগে সবাই কোলাকুলি করেছেন। সুতরাং শব্দটির অর্থ খুঁজবেন না কেন!

ঈদ পুনর্মিলনীতে সমবেতদের একাংশ
ঈদ পুনর্মিলনীতে সমবেতদের একাংশ

অক্সফোর্ড অ্যাডভান্সড লার্নারস ডিকশনারি থেকে মিলিয়ে নিই। সমর্থক ক্রিয়া। বাহুতে ধরে নেওয়া। যেমন করে মা তাঁর সন্তানকে কোলে নেন। জড়িয়ে ধরেন আর মৃদু হাসেন। কিংবা আগ্রহের সঙ্গে গ্রহণ করা। হৃদয়ের উষ্ণতা অনুভব করেন। প্রকৃতি নিয়ে বাংলাদেশ। নদী, পাহাড় সমতল আর সাগর ধরে এর পরিচয়। ভালোবাসা তার অনুষঙ্গ। আলিঙ্গন সে ভাষা। শঙ্খ আর মাতামুহুরী কোথা থেকে এসেছে কিংবা অন্য সব নদী! ‘পাহাড় দেশের জংলি মেয়ে কর্ণফুলী’ কবির দেওয়া এই বর্ণনা থেকে তা বোঝা যায়। ছলছল খলখল বেশে এ নদী মিশেছে অনন্ত বিস্তার বঙ্গোপসাগরের বারিরাশির সঙ্গে। একে অন্যকে আলিঙ্গন করেছে তারা। সৃষ্টি হয়েছে ছন্দময় পরিবেশের। অনাবৃত চোখে সুখের এই সময়টিকে ধারণ করেন তাঁরা। সাগর প্রকৃতির অংশ হন। আহ্, কী শান্তি!

আগমন নয়, গমনকালেও শুভেচ্ছার প্রকাশ। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পথে বন্ধুজন বলেন, সাবধানে থাকবে আর শুভ সংবাদ পাঠাবে। আলিঙ্গন, অভিবাদন, রীতি হয়ে দাঁড়ায়; সংস্কৃতিও তাই।

ঈদ পুনর্মিলনীতে সমবেতদের একাংশ
ঈদ পুনর্মিলনীতে সমবেতদের একাংশ

স্বাগত জানিয়ে জড়িয়ে ধরা। একজন আরেকজনকে পাওয়া। কেমন ছিলে এত দিন! স্বাগতাদি প্রশ্ন। সে যদি হয় মুক্তিযুদ্ধ থেকে প্রেমিকার কাছে ফিরে আসা। কিংবা জীবনানন্দের বনলতা সেন, যে দাঁড়িয়ে থাকে কবির জন্য। হাজার বছর ভ্রমণের পর পথিক ফেরে। নাবিক হাল ভেঙে দিল। হারিয়ে অবশেষে যে দারুচিনি দ্বীপে। অন্ধকারে বলেছে ‘এত দিনে কোথায় ছিলেন?’ পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন। এ যে কাব্যিক—আলিঙ্গন।

নারী মহল উদ্দীপ্ত নিজ গুণে। লম্বা করে টেবিল সাজানো। অনায়াস আসর। কথা বলছেন মহিলা সমিতির সভাপতি জাকিয়া হাসনাত ইমরান। এরই মধ্যে স্বেচ্ছাসেবীর প্রবেশ। মনোযোগী হন ক্যামেরায়। ক্লিক, ক্লিক! মৃদু হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে হল। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পপি রহমান আলোচনা এগিয়ে নিচ্ছেন। বিনোদনের পর্বটি কেমন হতে পারে, তারই পুনর্ভাবনা চলছে। স্বাস্থ্যকর আড্ডা।

ঈদ পুনর্মিলনীতে সমবেতদের একাংশ
ঈদ পুনর্মিলনীতে সমবেতদের একাংশ

ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর প্রার্থনা করেছেন। আমার সন্তান যেন থাকে দুধে–ভাতে। এরই সংস্করণ প্রতিধ্বনিত হয়। সাংস্কৃতিক সম্পাদক আঞ্জুমান আরা শিল্পী চূড়ান্ত সমাপ্ত টানেন। আমার সন্তানের সময় কাটুক নিরোগে নিশ্চিন্তে।

মা-বাবা আমাদের এতটা ভালোবেসেছেন, যা আজকে আমরা উজাড় করে দিচ্ছি সন্তানদের। এই উজাড় করা মা-বাবাদেরও যথাযোগ্য সম্মান দিতে হয়। তা না হলে মানুষ হিসেবে আমাদের মূল্য কী। হ্যাঁ, তাই তো শুনি, ভালোবাসায় বাঁধি মন, ভালোবাসায় বাঁধি সারাক্ষণ।

ঈদ পুনর্মিলনীতে সমবেতদের একাংশ
ঈদ পুনর্মিলনীতে সমবেতদের একাংশ

শুভেচ্ছা বিনিময় হয় চন্দ্রমুখ মনি হাসানের সঙ্গে। নিঃশব্দ জলের ধারার সঙ্গে তার চলা। জগতের সবার জন্য তার মঙ্গল কামনা। সর্বে ভবন্তু সুখিন, সর্বে সন্তু নিরাময়া। স্থান পরিবর্তিত হয়। জীবন যেখানে যেমন তিনিও তাই। সফল অভিযোজন। নূপুর ঝুমুর তালে চলেন। পূর্ণা শবনম এগিয়ে নেন সে বহর। আলোকময় হয়ে ওঠে চরাচর। নাজনীন এজাজ এলেন একটু পরে। তারও আলোকচিত্রে ভালোবাসা ষোলো আনা। ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লেখো। নির্ভাবনায় প্রতিধ্বনি। ছোটদের খবরাখবর বিনিময় হলো। সুখ ছড়ালেন তাবৎ বন্ধুমহলে। পুনর্মিলনীর তাৎপর্য অনুধাবন করি হৃদয়ে। মনে মনে ধন্যবাদ জানাই বন্ধুদের। যাঁদের সান্নিধ্য পাই আয়োজনে, তাঁরা গুণে–মানে সেরা। শ্রদ্ধা তাঁদের জন্য প্রাপ্য, যাঁরা দেশের কল্যাণ কামনা করেন। তাঁদের সঙ্গে আনন্দের মুহূর্তগুলো বুকে ধারণ করে ফিরি আপন গৃহে।