নতুন ভিসায় আবেদন করতে কী লাগবে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

পৃথিবীর শীর্ষ শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় অস্ট্রেলিয়া অন্যতম। সমৃদ্ধ অর্থনীতি ও সামগ্রিক নিরাপত্তার এ দেশটিতে স্থায়ী বসবাসের স্বপ্ন দেখেন বহু মানুষ। আর তাই দেশটির ভিসা লাভের কোনো সুযোগ এলে অনেকের মাঝে অনেকটা হুমড়ি খাওয়ার অবস্থা হয়। তবে মনে রাখতে হবে, অস্ট্রেলিয়ার ভিসা সম্পর্কে সঠিক ও সাম্প্রতিক তথ্য স্পষ্ট জানা না থাকলে ভিসা প্রাপ্তির সম্ভাবনা কমে যায়। সাধারণ চোখে যেমনটি দেখা যায়, বাস্তবে এত সহজ নয় ভিসা প্রাপ্তি। সব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে সর্বোচ্চ।

অস্ট্রেলিয়ায় আগামী নভেম্বরে চালু হচ্ছে নতুন আরও দুটি ভিসা। এর মধ্যে একটি হচ্ছে স্কিলড ওয়ার্ক রিজিওনাল সাবক্লাস ৪৯১ ভিসা। অন্যটি স্কিলড এমপ্লয়ার স্পনসরড সাবক্লাস ৪৯৪ ভিসা। আগামী ১৬ নভেম্বর থেকে এ ভিসার জন্য আবেদন নেওয়া শুরু করবে দেশটির অভিবাসন বিভাগ। এ লেখায় সাবক্লাস ৪৯১ ভিসাটির মূল বিষয়গুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে।

সাবক্লাস ৪৯১ ভিসাটি নতুন হলেও এর ধরন যে একেবারেই নতুন, তা নয়। ভিসাটি প্রচলিত স্কিলড রিজিওনাল সাবক্লাস ৪৮৯ ভিসাটির বদলে আসবে। এ বছরের ১৯ নভেম্বর ৪৮৯ ভিসাটি পুরোপুরি বিলোপ করে দেওয়ার কথা জানিয়েছে অভিবাসন বিভাগ। ৪৮৯ ভিসার আবশ্যিক শর্তে বেশ কিছু পরিবর্তন ও নতুনত্ব এনে ৪৯১ ভিসা নামে নতুন ভিসাটি চালু হবে।

৪৯১ ভিসার ধরন

স্কিলড ওয়ার্ক রিজওনাল সাবক্লাস ৪৯১ ভিসাটি একটি আঞ্চলিক বা রাজ্যভিত্তিক ভিসা। অর্থাৎ এ ভিসা অস্ট্রেলিয়ার নির্দিষ্ট অঞ্চলের জন্য। বড় মহানগর সিডনি, মেলবোর্ন, পার্থ, ব্রিসবেন ও গোল্ড কোস্ট ছাড়া দেশটির যেকোনো জায়গার জন্য প্রযোজ্য। পাশাপাশি ৪৯১ ভিসা একটি স্পনসরড ভিসা। অর্থাৎ এ ভিসায় আবেদন করতে অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার যেকোনো রাজ্য সরকার কর্তৃক অথবা সে রাজ্যে বসবাসকারী নিকট আত্মীয় কর্তৃক মনোনীত হতে হবে। তবে এ ভিসায় কোনো প্রতিষ্ঠানের স্পনসরড করার সুযোগ নেই। প্রতিষ্ঠান স্পনসর করতে চাইলে সাবক্লাস ৪৯৪ ভিসায় যেতে হবে। ৪৯১ ভিসাধারীরা নিজের ইচ্ছানুযায়ী মনোনীত পেশায় যেকোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারেন।

এ ছাড়া ৪৯১ ভিসাটি একটি পয়েন্ট টেস্টভিত্তিক ভিসা। এ ধরনের ভিসায় সরাসরি ভিসা পেতে আবেদন করা যায় না। প্রথমে অনলাইনে ‘এ ভিসা পেতে ইচ্ছুক’—এ কথা জানাতে হবে অভিবাসন বিভাগের কাছে। অভিবাসন বিভাগ প্রার্থীর শিক্ষা, বয়স, অভিজ্ঞতা, ইংরেজি দক্ষতা ও বৈবাহিক অবস্থা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে পয়েন্ট প্রদান করবে। সাধারণত বেশি পয়েন্ট অর্জনকারীদের ভিসা আবেদনের জন্য আমন্ত্রণ জানাবে অভিবাসন বিভাগ।

৪৯১ ভিসার আবশ্যিক শর্ত

প্রচলিত ৪৮৯ ভিসার মতোই আবশ্যিক শর্ত রাখা হয়েছে ৪৯১ ভিসায়। নতুন ভিসার সব তথ্য এখনো পুরোপুরি প্রকাশ করেনি অভিবাসন বিভাগ। ৪৯১ ভিসার প্রকাশিত তথ্যের ওপর নির্ভর করে বলা যায়, আবশ্যিক শর্তের মধ্যে রয়েছে:

ক. ভিসায় আবেদন করার ইচ্ছার কথা জানিয়ে আবেদনপত্র জমা দেওয়া।
খ. সর্বনিম্ন নির্দিষ্ট পয়েন্ট অর্জন করা।
গ. রাজ্য সরকার কিংবা নিকট আত্মীয় কর্তৃক মনোনীত হওয়া।
ঘ. অস্ট্রেলিয়ার স্কিল অ্যাসেসমেন্ট থাকতে হবে।
ঙ. বয়সসীমা ১৮ থেকে ৪৫ বছর।
চ. ইংরেজি ভাষা দক্ষতায় কমপক্ষে আইইএলটিএস ৬ বা সমমানের হওয়া।
ছ. নির্দিষ্ট পেশা তালিকার পেশাদার হতে হবে।
জ. ভিসা মঞ্জুর হলে মনোনীত অঞ্চলে কমপক্ষে তিন বছর বসবাস করতে হবে স্থায়ী ভিসায় আবেদন জন্য।
ঝ. ভিসার মেয়াদকালে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা অর্থাৎ নির্দিষ্ট আয়ের কাজ করতে হবে। কিন্তু পরিমাণ কত, সেটা এখনো জানা যায়নি।

পয়েন্ট টেস্ট

সাধারণত অস্ট্রেলিয়ার স্কিলড মাইগ্রেশন (জিএসএম) ভিসাগুলো পয়েন্ট টেস্টভিত্তিক হয়। এ ধরনের ভিসায় ব্যক্তির দক্ষতাকে মূল্যায়ন করা হয়। আর দক্ষতা বা যোগ্যতা প্রমাণের উপায় হলো বিভিন্ন বিষয়ে পয়েন্টভিত্তিক স্কোর করা। এ ধরনের ভিসায় সরাসরি আবেদনের সুযোগ নেই। বয়স, অভিজ্ঞতা, শিক্ষা প্রভৃতি নানা বিষয়ের ওপর সর্বনিম্ন আবশ্যিক পয়েন্ট করতে পারলে আবেদনের সুযোগ পাওয়া যায়। এ জন্য অনলাইনভিত্তিক এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্টে (ইওআই) অংশ নিতে হয়। নির্বাচিত হলে অভিবাসন বিভাগ মূল ভিসায় আবেদনের আমন্ত্রণ জানাবে।

একজন প্রার্থী যে বিষয়গুলোতে পয়েন্ট পাবেন সেগুলো হলো: বয়স, ইংরেজি ভাষা দক্ষতা, কাজের অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা। যেমন—প্রার্থীর বয়স ১৮ থেকে ২৪ বছর হলে ২৫ পয়েন্ট পাবেন। ২৫ থেকে ৩২ বছর হলে ৩০ পয়েন্ট। আবার ৩ থেকে ৪ বছর কাজের অভিজ্ঞতার জন্য ৫ পয়েন্ট, ৫ থেকে ৭ বছরের জন্য ১০ পয়েন্ট।

এ ছাড়া আগত ৪৯১ ভিসায় আরও বেশ কিছু বিষয়ের ওপর পয়েন্ট দেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে: রাজ্য সরকার কিংবা নিকট আত্মীয় কর্তৃক মনোনীত হলে ১৫ পয়েন্ট, আবেদনকারী অবিবাহিত হলে ১০ পয়েন্ট, বিবাহিত ও স্বামী/স্ত্রী দক্ষ হলে মিলবে ১০ পয়েন্ট, স্বামী/স্ত্রীর শুধু ইংরেজির দক্ষতা থাকলে ৫ পয়েন্ট এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত বিষয়ে পেশাদার হলে আরও ১০ পয়েন্ট পাওয়া যাবে।

স্কিল অ্যাসেসমেন্ট

ভিসায় আবেদনের আগেই যেমন ইংরেজি ভাষা দক্ষতার পরীক্ষা দিয়ে সনদ অর্জন করতে হয়, তেমনই ৪৯১ ভিসার ইওআই-এ অংশ নেওয়ার আবশ্যিক শর্ত হচ্ছে উপযুক্ত স্কিল অ্যাসেসমেন্ট। এটিও একটি সনদ। ভিসা প্রার্থী যে পেশায় কাজ করেন, সে পেশায় তিনি আসলেই দক্ষ কি না, তা যাচাই করা হয় স্কিল অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে। অভিবাসন বিভাগ কর্তৃক নিয়োজিত নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানই এ দক্ষতার প্রমাণপত্র প্রদান করতে পারে। প্রার্থীকে তাঁর পেশার অভিজ্ঞতা ও শিক্ষার কাগজপত্র পাঠাতে হয় নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে। সেগুলো যাচাই করে প্রতিষ্ঠান জানাবে প্রার্থী তাঁর পেশায় অস্ট্রেলিয়ার কোনো ভিসায় আবেদনের যোগ্যতা রাখেন কি না।

ভিসার প্রক্রিয়া

সাবক্লাস ৪৯১ ভিসায় প্রায় ৫০৪টি পেশায় আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। আগামী ১৬ নভেম্বর থেকে আবেদন করা যাবে ভিসার জন্য। ভিসায় আবেদন করতে হলে শুরুতে স্কিল অ্যাসেসমেন্টসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সনদ সংগ্রহ করতে হবে। এরপর অভিবাসন বিভাগের অনলাইনভিত্তিক ইওআই আবেদনপত্র পূরণ করে জমা দিতে হবে। এমন সব আবেদনকারীর মধ্যে আবশ্যিক শর্ত পূরণ করা এবং সর্বোচ্চ পয়েন্ট অর্জনকারীদের মধ্য থেকে নির্দিষ্টসংখ্যক প্রার্থীকে ৪৯১ মূল ভিসায় আবেদনের জন্য আমন্ত্রণ জানাবে রাজ্য সরকার।

তবে আমন্ত্রণ পাওয়া মানেই ভিসা মঞ্জুর নিশ্চিত হওয়া নয়। আমন্ত্রণ পাওয়া মানে প্রার্থী পেশাদার হিসেবে যোগ্য, অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশের যোগ্যতা যাচাই করবে ভিসা। অস্ট্রেলিয়ার প্রবেশের সব আবশ্যিক শর্ত প্রার্থী দ্বারা পূরণ হলে তবেই মিলবে সাবক্লাস ৪৯১ ভিসা। এ ভিসার তথ্য অভিবাসন বিভাগের ওয়েবসাইট <www.immi.homeaffairs.gov.au>-এ হালনাগাদ করবে অভিবাসন বিভাগ।

সাবক্লাস ৪৯১ ভিসাধারীরা প্রাথমিকভাবে পাঁচ বছর অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করতে পারবেন। এরপর যদি সব শর্ত সঠিকভাবে পূরণ করেন তাহলে তিন বছর পর স্থায়ী বসবাসের জন্য নতুন সাবক্লাস ১৯১ ভিসায় আবেদনের সুযোগ পাবেন। নতুন আরেকটি ভিসা হলো সাবক্লাস ৪৯৪ ভিসা। এ ভিসা পয়েন্ট টেস্টভিত্তিক ভিসা নয়। অস্ট্রেলিয়ার কোনো অঞ্চলের প্রতিষ্ঠান এ ভিসায় কাউকে মনোনীত করতে পারবে। আগামী লেখায় সাবক্লাস ৪৯৪ ভিসাটি নিয়ে আলোচনার ইচ্ছা রয়েছে।
---

কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।
ই-মেইল: <[email protected]>