আবুধাবিতে সনাতনধর্মীদের একটি সম্মেলন

মঞ্চে অতিথিরা
মঞ্চে অতিথিরা

সন্ধ্যাকাল। আবুধাবির মদিনা জায়েদ পার্টি হল। সনাতনধর্মীরা এলেন। এখানে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোট বৈদেশিক শাখা আরব আমিরাতের সম্মেলন। রূপস দাসের সভাপতিত্বে সংগঠনের কর্মপরিচালনার জন্য উদ্যোক্তারা ১০১ সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিষদ ঘোষণা করেন।

গত ৩০ আগস্ট শুক্রবার এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন মরুতীর্থ আল আইনের জগদীশ্বর আনন্দপুরী মহারাজ। অনুষ্ঠানে প্রকৌশলী তপন সরকার প্রধান অতিথি ছিলেন। প্রধান বক্তা ছিলেন প্রকৌশলী সুবোধ চৌধুরী।

ওখানে আমিও ছিলাম। কোনো কথা বলতে নয়। অন্যদের বক্তব্য শুনতে। সাধারণত এমন অনুষ্ঠানে আমার থাকা সম্ভব হয় না। সেটা সময়ের স্বল্পতার কারণে। ওই দিনও আমার পেশাগত কাজ ছিল। তবু নেতা-কর্মীদের অন্তত একজনের আহ্বান উপেক্ষা করতে পারিনি।

হলভর্তি মানুষ। বলা চলে পেছনে গিয়ে বসলাম। ইতিমধ্যে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু ঘোষণা করা হয়েছে। উচ্চারিত হচ্ছে শ্রীমদ্ভগবত গীতার স্তোত্র। পুষ্পার্ঘ্য তুলে দেওয়া হচ্ছে অতিথিদের হাতে। বাদ পড়ে না এই হতভাগ্যও। অতঃপর তাকে বসতে হবে মঞ্চে।

মঞ্চে অতিথিরা
মঞ্চে অতিথিরা

সামনে আসি। সশ্রদ্ধ আকুতি আমার। আমি আছি আপনাদের মাঝে। অনুরোধ মঞ্জুর হয়। শ্রোতার সামনের আসনে বসি। দেখছি মঞ্চ। চোখ বুলিয়ে নিই হলের প্রিয় মুখগুলোর দিকে।

আলো চিক চিক করে। সম্মেলনে প্রকৌশলী তপন সরকার সভাপতি, সঞ্জয় শীল সাধারণ সম্পাদক, সঞ্জিত শীল সাংগঠনিক সম্পাদক ও মনতোষ শীল অর্থ সম্পাদক মনোনীত হন। প্রতিটা নামের সঙ্গে আনন্দের হাততালি। পরিষদ ভালোবাসায় সিক্ত হয়। অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেন দুজন। পুলক চৌধুরী ও সজল চৌধুরী।

প্রধান অতিথি ধর্মীয় আলোকে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ঈশ্বর এক। কলি যুগে শ্রীকৃষ্ণই জীবজগতের একমাত্র ত্রাণকর্তা। তিনি প্রবাসের ধর্মীয় মন্দিরকে পাঠশালায় রূপ দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন। আমি ভাবি, এটাই তো হওয়া উচিত। এমনটি হলে সবাই শিখতে পারবে। বিস্ময় প্রকাশ করলেন। হলভর্তি তারকা, তাঁরা যুবক। আমার জন্য অপূর্ব এক সুযোগ। সবার সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

মঞ্চে অতিথিরা
মঞ্চে অতিথিরা

প্রধান বক্তা তুলে আনেন প্রধানমন্ত্রীর প্রসঙ্গ। দেশের সেরা মানুষ বিদেশে গিয়ে সম্মান আদায় করছেন। আর আমরা দেশে থেকে নিপীড়িত মানুষের সম্মান রক্ষা করতে পারব না, তা কি হয়? হয় না। সে জন্যই সাহসের সঙ্গে দাঁড়াতে হবে। সোচ্চার হতে হবে। বক্তব্যে নারী কল্যাণের প্রতীক শাখা-সিঁদুর ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়। বাল্যবিবাহ বন্ধে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। আমিও মিলিয়ে নিই, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায় এ জন্য কাজ করে গেছেন। সে ছিল বৈরী পরিবেশ। আজ কি তেমনটি আছে? নেই, তাহলে কেন উদাসীন থাকা!

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করার প্রত্যয় ব্যক্ত হয়। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ নিয়ে আমার কাজ। মনে হয়, নিরলস এ চর্চার বিষয়টি আলোচনায় আসা জরুরি ছিল। ধর্মনিরপেক্ষতা না থাকলে স্বাধীনতার মূল্য থাকে না। একাত্তর সে জন্য, মুক্তিযুদ্ধও একই কারণে।

ঐক্যবদ্ধভাবে সংগঠনকে এগিয়ে নেওয়ার কথা বললেন তাঁরা। সংগঠনকে অরাজনৈতিক বলেও উল্লেখ করলেন। দাবি উঠল, মন্দির, দাতব্য চিকিৎসালয় কিংবা অন্য প্রতিষ্ঠানের আগে চাই সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ করার উদ্যোগ। ভুক্তভোগী জানে কী তার জ্বালা। সুতরাং প্রাণের বাংলার উন্নয়ন-পরিবর্তন উপভোগ্য হয়ে ওঠে নিশ্চিন্ত থাকতে পারলে। তবে এ কথাও ঠিক, কল্যাণকর মহান সৃষ্টির এই আয়োজন নষ্ট করে না ব্যাপক জনগণ।

মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু হয়
মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু হয়

খারাপ মানুষ একজনই যথেষ্ট। সেই কখনো একা, কখনো ভুল বুঝিয়ে অন্যদের নিয়ে, মঙ্গল আয়োজন নষ্ট করে দেয়। মসজিদ, মন্দির বা প্যাগোডা—যেকোনোটির ওপর হামলা হলে শাস্তি হতে হবে অবশ্যই। সমস্যা হচ্ছে, ভালোরা থাকে নির্বাক। ভয়ে কিংবা বুঝতে দেরি হয় বলে। ততক্ষণে অনেক কিছু পণ্ড হয়ে যায়।

বক্তব্য শুনি। জ্ঞানগর্ভ কথা। এরই মধ্যে উপস্থাপক আসেন, বলেন একটি সংবাদ বুলেটিন পড়তে। পড়ার আগে লিখতে হয়। হাতে কাগজ-কলম নেই, না বলি। পরক্ষণে মত পাল্টে ফেলি। পাশেই নৃত্যশিল্পী তিশা সেন। কাগজ-কলম দুই-ই মেলে তাঁর সহযোগিতায়। মঞ্চ থেকে আবার এসে নিশ্চিত হয়ে যান, আমি লিখছি। সেদিন প্রিয় বন্ধুদের জন্য, তাৎক্ষণিক সে সংবাদ পড়েছিও। ধন্যবাদের কাজ করলেন ছড়াকার লুৎফর রহমান। তিনি পুরো সময়টির কণ্ঠচিত্র ধারণ করেন।

মানবের সুকুমারবৃত্তিগুলো প্রাধান্য পায়। মানবতা, প্রেম, ভালোবাসা দিয়ে আমরা আমাদের ব্রতের ডালি সাজাব। স্বামী বিবেকানন্দের কথা মনে পড়ে। আমেরিকায় গিয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক ধর্মসভায় বক্তব্য দিলেন। আমেরিকার প্রিয় ভাই ও বোনেরা দিয়ে শুরু। মাত করে দিলেন।

উপস্থিতির একাংশ
উপস্থিতির একাংশ

প্রিয় বাংলাদেশ আমার, এ দেশ ছেড়ে আমরা যাব না। সাহসী উচ্চারণ তাদের। হ্যাঁ, ঐক্যের পাশাপাশি আত্মবিশ্বাস ও মনোবল থাকতে হবে। একসময় বরেণ্য সাংবাদিক ওয়াহিদুল হক বারবার কথাটি মনে করিয়ে দিয়েছেন। সাহস কাজ দেয়। ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙা হচ্ছিল। তার ঢেউ আছড়ে পড়ে প্রিয় দেশে। বুক বেঁধে দাঁড়িয়েছিল আমার ২২টি ভাই। দস্যুরা ভয়ে পালিয়েছিল। এ ছিল এক জায়গার কথা। দৃষ্টান্ত আরও আছে।

তবে কৌশলী হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের নামেও চলে ব্যবসা। সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। অবাঞ্ছিত এই মানুষেরা এ ব্যবসায়ও অসফল নয়।

উপস্থিতির একাংশ
উপস্থিতির একাংশ

সময় পক্ষে, বঙ্গবন্ধুর দেশে মুক্তিযুদ্ধের সরকার ক্ষমতায়। সে জন্য এটা লক্ষণীয়, সরকারকে উত্ত্যক্ত করা যাবে না। তা হবে আত্মঘাতী। দেখো, কে কখন দাঁড়িয়েছে বন্ধু পাশে তোমার! বরং সঙ্গে থেকে নিজেদের পাওনা বুঝে নিতে হবে। বিশ্বাস করি, সনাতনধর্মীরা সেটা বোঝেন। বক্তারা বলেছেন, জয় আমাদের হবে।

আমিও বলি, জয় সুনিশ্চিত।