গ্যাং সমস্যা ও আমাদের করণীয়

প্রতীকী ছবি। ছবি: প্রথম আলো
প্রতীকী ছবি। ছবি: প্রথম আলো

এ দেশে আশপাশের যত দোকানে যাই, দেখি টিনএজার বাচ্চা কাজ করছে। যেকোনো কাজ। কফি বানিয়ে দেওয়া, বার্গার-স্যান্ডউইচ বানানো। ভীষণ ব্যস্ত দোকানে ক্যাশে কাজ করা ইত্যাদি।

বিষয়গুলো নিয়ে সব সময়ই ভাবি। কেন পড়ার ফাঁকে ফাঁকে এত কঠিন কাজ করছে ওরা? তাদের মা–বাবা কি এতই পাষাণহৃদয়?

তারপর লক্ষ করে দেখলাম, অনেক ছোট সময় থেকে বাচ্চারা স্কুল থেকে ফান্ড রাইজিংয়ের জিনিস আনে। বড়দের কাছে বিক্রি করে। উদ্দেশ্য সব সময় মহৎ। কোনো গরিব মানুষের কাছে বা সংস্থায় টাকাটা যায়।

তারপর সারা বছর স্পেয়ার চেঞ্জ দান, থ্যাংকস গিভিং বা ক্রিসমাসে কাপড় দান, খেলনা দান, চলছেই। মোটকথা জীবনে বেঁচে থেকে আমি একা শুধু ভালো থাকব ব্যাপারটা তা নয়।

এমনকি রেসিডেন্সির সময় হোমলেস শেল্টার বা টিন ক্লিনিকে রোটেশন বাধ্যতামূলক। মানে শিশু বয়স থেকে প্রাপ্তবয়স্ক পর্যন্ত মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া ‘সকলের তরে সকলে আমরা’।

এখানে হাইস্কুল পর্যন্ত পড়াশোনা ফ্রি। তারপর টাকা দিয়ে পড়তে হয় কিছু কমিউনিটি কলেজ ছাড়া। কলেজে ভর্তির ব্যাপারটায় একটু পরে আসছি।

লেখিকা
লেখিকা

প্রথম কথা হলো টিনএজারদের এনার্জি অনেক বেশি। নানা ধরনের খেলা, মিউজিক, কাজ দিয়ে মা–বাবারা ব্যস্ত রাখেন ওদের। তারপর অল্প কিছু টাকা তারা হাতে পায়। বেশির ভাগ নিজে আয় করে। না হয় পায়। কিন্তু সামান্য। তারা ভলান্টারির কাজ করে হাসপাতাল, লাইব্রেরি, অ্যানিমেল শেল্টারে।

আমাদের দেশে বাচ্চাগুলোর হাতে এত টাকা কেন? মা–বাবার সামর্থ্য যেমনই থাকুক, অল্প কিছু টাকা দিয়ে চেষ্টা করতে হবে বাকি সময়টায় কীভাবে তাদের ব্যস্ত রাখা যায়? এটা বাসা থেকে শুরু করতে হবে মা–বাবাকে। প্রতিবেশীদের ও অন্যের বাচ্চাকেও নিজের মতো করে দেখে রাখতে হবে। আমাদের ভবিষ্যৎ তো ওরাই। তারপর মানুষকে শ্রদ্ধা করতে হবে ধর্মবর্ণ–নির্বিশেষে। মেয়েদের নিরাপত্তার ব্যাপারটা তো আছেই।

এ দেশে ভালো কলেজে ভর্তি হতে হলে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা আর ভলান্টারি কাজ বাধ্যতামূলক। এটা অলিখিত নিয়ম। ভলান্টারি না করে দোকানে কাজ করলেও এখানে গুরুত্ব দেওয়া হয় অ্যাপ্লিকেশন রিভিউ করার সময়। এত কিছু করে সময় থাকে না তেমন এদের। অন্যায়কারীর জন্য শাস্তির কঠিন নিয়ম তো আছেই।

এ রকম কিছু করে বাচ্চাগুলোকে সঠিক পথে রাখতেই হবে যেভাবে হোক। তাহলে আমাদের মতো গরিব দেশে গ্যাং সমস্যা থাকবে না। এ সমস্যা এ দেশেও আছে। কিন্তু তারাও চেষ্টা করে যাচ্ছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। আমাদের পারতেই হবে।

ভেপিং নিকোটিন বা মারিজুয়ানাসহ নেশাদ্রব্য, এমনকি বিভিন্ন ফ্লেভারে বাচ্চারা পর্যন্ত কিনতে পারছে। ইলেকট্রনিক সিগারেট হিসেবে এবং আসল সিগারেটের চেয়ে অনেক কম ক্ষতিকর হিসেবে বাজারে এনেছিল ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিগুলো। এখন ভয়াবহ স্বাস্থ্যের প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে ভেপিং।

সপ্তাহ কয়েক আগে আমাদের হাসপাতালে একজন রোগী ভয়াবহ শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। বয়স মাত্র ৩০ বছর। চোখের সামনে রোগীর অবস্থা শুধু খারাপ হতে লাগল। কোনো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করল না। মেশিনে দিয়ে, স্টেরয়েড দিয়ে, ক্যামেরা দিয়ে দেখে ওয়াশ করেও বাঁচানো গেল না রোগীকে। তাঁর তরুণী বধূ আর মা চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, কেন এখনো জাতীয় পর্যায়ে এসব ব্যান্ড করা হচ্ছে না? অনাগত সন্তান কোনো দিন তার বাবাকে চিনবে না, কেন?

নেশাদ্রব্যের ক্ষতিকর দিক বাচ্চাদের বোঝাতে হবে। প্রতিটা মানুষ পৃথিবীতে নিজ নিজ স্থান থেকে অনেক কিছু করার আছে। কেউ এ দুনিয়ায় অকালে ঝরে যাক, সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।