বাংলাদেশ-সার্বিয়ার অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে গুরুত্বারোপ

সার্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বৈঠক
সার্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বৈঠক

বাংলাদেশ ও সার্বিয়ার মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে কীভাবে আরও শক্তিশালী করা যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে দেশটির জ্যেষ্ঠ উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইভিকা ড্যাসিকের সঙ্গে ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদারের সাক্ষাৎকালে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইভিকা ড্যাসিকের সঙ্গে গত শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) তাঁর কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন।

এ সময় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও এশিয়া অনুবিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ছিলেন ইতালির বাংলাদেশ দূতাবাসের ইকোনমিক কাউন্সেলর মানস মিত্র ও প্রথম সচিব (রাজনৈতিক) রাজীব ত্রিপুরা।

আলোচনায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে রাজনৈতিক সংলাপ ও দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের সফর বিনিময়ের ওপর গুরুত্ব তুলে ধরেন। পাশাপাশি দুই দেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের ওপর ভিত্তি করে সামগ্রিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও জোরদার করার বিষয়ে তাঁর আগ্রহের কথা জানান।

রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একমত পোষণ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাবেক যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল জোসেফ টিটোর ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা স্মরণ করেন। রাষ্ট্রদূত জানান, দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে বিশেষত অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার ব্যাপারে তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন।

এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত সার্বিয়ার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সেমিনারে অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সেমিনারে দুই দেশের অর্থনৈতিক বাণিজ্য বৃদ্ধির ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তিনি দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি এবং সরকারি ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেন।

রাষ্ট্রদূত উচ্চপর্যায়ের সফরের মাধ্যমে এ চুক্তি স্বাক্ষর সম্পাদন করা যেতে পারে বলে মত ব্যক্ত করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে তাঁর আগ্রহের কথা জানান।

উল্লেখ্য, রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদার সার্বিয়া ও আলবেনিয়ার অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন।

বেলগ্রেডে বাংলাদেশ ও সার্বিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিবিষয়ক সেমিনার
বেলগ্রেডে বাংলাদেশ ও সার্বিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিবিষয়ক সেমিনার

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে রাষ্ট্রদূত বেলগ্রেডে বাংলাদেশ ও সার্বিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিবিষয়ক এক সেমিনারে যোগ দেন। বাংলাদেশ দূতাবাস ও দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে চেম্বার ভবনে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে বাংলাদেশের উন্নয়নচিত্র, বিদ্যমান বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ, বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্রসমূহ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা এবং বাংলাদেশ ও সার্বিয়ার মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয়। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি, দ্বৈতকর অব্যাহতি চুক্তি ও দুই দেশের বাণিজ্যিক সংগঠনগুলোর মধ্যে সমঝোতা স্মারক চুক্তির ব্যাপারেও সেমিনারে মত প্রকাশ করা হয়।

আবদুস সোবহান সিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া অনুবিভাগের কর্মকর্তা ও চেম্বার অব কমার্সের নেতারাসহ প্রায় ৩০ জন সার্বিয়ান ব্যবসায়ী অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন চেম্বার অব কমার্সের আন্তর্জাতিক বিভাগের পরিচালক মিস জেলেনা জোভানোভিস।

রাষ্ট্রদূত বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র ব্যবসায়ীদের কাছে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শক্তিশালীকরণে অর্থনৈতিক সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এ সম্পর্ক উন্নয়নে সরকারের ভূমিকার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের ভূমিকাও অনস্বীকার্য।

সেমিনারে বাংলাদেশ দূতাবাসের ইকোনমিক কাউন্সেলর মানস মিত্র একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেন। প্রেজেন্টেশনের শুরুতে তিনি সংক্ষিপ্তভাবে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। এরপর বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বর্তমান অবস্থান এবং দেশটির সঙ্গে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের বিষয়ে আলোকপাত করেন।

রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ করার সুযোগসহ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্র তুলে ধরেন। বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্র হিসেবে তিনি পোশাকশিল্প, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস, তথ্যপ্রযুক্তি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, সিরামিকস, নবায়নযোগ্য শক্তি, ব্লু-ইকোনমি ও ট্যুরিজম বিষয়ে প্রেজেন্টেশনে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

উপস্থাপনার পর দেশটির দুজন ব্যবসায়ী বাংলাদেশে তাঁদের ব্যবসার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এবং উপস্থিত অন্যদেরও বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসায় উৎসাহিত করেন। এরপর প্রশ্নোত্তর ও মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিত ব্যবসায়ীরা আগ্রহ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রশ্নোত্তর ও মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ সরকারের করনীতি, বাণিজ্যনীতি ও বিনিয়োগসংক্রান্ত বিভিন্ন দিক ও অগ্রগতির বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদার ও ইকোনমিক কাউন্সেলর মানস মিত্র এসব প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। বিজ্ঞপ্তি