নিসর্গ মনে বনে

আইমান আর আরিয়ান পুরস্কার নিচ্ছে
আইমান আর আরিয়ান পুরস্কার নিচ্ছে

ইট-পাথরের রাজ্যে আর কতক্ষণ। মনটা চায় সতেজ নিশ্বাসে নিজেকে হালকা করতে। আল আইন দূরের কোনো নগরী নয়। আবুধাবির উদোর থেকে বেরিয়ে এরই সন্তান। প্রকৃতিঘেরা এ জায়গাকে সে জন্যই পছন্দ। আমরা সেখানে ঘুরে আসি সপরিবার।

আস্তানা নিই এক জায়গায়। সেখানকার গল্প নাহয় পরে হবে। তার আগে হোক শৈশব-বারতা।

সামিয়া ইসলাম। সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। দেশ সম্পর্কে লিখে পুরস্কার পেয়েছে এর আগে। প্রিয় দেশের গ্রাম তাকে দারুণ টানে। হাল ধরে মাঝি যায় দূর সীমানায়। পালতোলা নৌকার ছবি তার মনে আঁকা। রং-পেনসিলে তাই তো আরও নিখুঁতভাবে আনা। যমুনার পাড়ে নেই। তবে এই নদীর গল্প সে শোনে মা-বাবার কাছে। কারণ, সিরাজগঞ্জে তার মা-বাবা দুজনেরই জন্মস্থান।

পুরস্কার গলায় নিয়ে আইমান
পুরস্কার গলায় নিয়ে আইমান

শাহজাদপুর কাছারিবাড়িটি দেখার জন্য অনেকে যান। কবিগুরু এখানে সাত বছর বসবাস করেছেন। সৃষ্টি করেছেন অনবদ্য সাহিত্যকর্ম। এ ভবন এখন জাদুঘর। নিচতলায় তিনটি কক্ষের দেয়ালে সেঁটে রয়েছে কবির আঁকা কিছু মূল্যবান ছবি। জলরঙে আঁকা নারী প্রতিকৃতি ও কয়েকটি চিত্রকর্ম। প্রকৃতিছোঁয়া আবেদন। এ ছাড়া কবির পাণ্ডুলিপি ও কয়েকটি আলোকচিত্র কক্ষগুলোকে আকর্ষণীয় করেছে। ইতালিতে, বিলেতে ও তাঁর জন্মদিনে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে বিশেষ মুহূর্তের ছবিগুলো এখনো প্রাণবন্ত। সিরাজগঞ্জ এ জন্যই বিখ্যাত।

কথা বলছি বড়রা। ছোটরা ব্যস্ত নিজ নিজ কাজে।

আরিয়ান স্কুল শুরু করবে এবার। কিন্তু এরই মধ্যে দৌড়ে পুরস্কার পেয়েছে। সমাজের আয়োজনে এখন এই পরিবারের সরব উপস্থিতি।

টিস্যু পেপার তার জন্য নিরাপদ নয়। এ দিয়ে সে বানায় বুর্জ আল খলিফা। আল আইনে জলাশয়ের কিলবিল করা মাছের সঙ্গে বন্ধুত্ব। আইমান তার সহোদর। তার আছে অঙ্ক প্রতিযোগিতায় জেতার পুরস্কার। তৃতীয় শ্রেণির এই শিক্ষার্থীর আছে আরও আরও কৃতিত্ব। ওরা আনন্দ করছিল। ‘কী মজা! এবার তিন ভাইবোনই হব জাকের প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষার্থী।’


সামিয়াকে দিয়ে শুরু হয়েছিল। ক্যারাট নয় শুধু, নৃত্যেও অংশগ্রহণ আছে কিশোরীর। ইন্ডিয়ান স্কুলের এক আয়োজনে বাংলা নৃত্য করেছিল সামিয়া। অন্য অনুষ্ঠানেও তার স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি।

চিত্রকল্প হাজির হয়। কৃষ্ণ রাধাকে পাওয়ার আশায় যমুনার ঘাটে বসে আছে। কখন রাধা জল আনতে আসে।

মা-মার সঙ্গে তিন সহোদর
মা-মার সঙ্গে তিন সহোদর

সূর্য পাটে বসে। সখীরা কলসি কাঁখে দল বেঁধে যমুনার ঘাটে আসে। রাধার যে কী অবস্থা তখন। ভেতরকার উড়ু উড়ু মনটির কথা এখন আর বর্ণনা সম্ভব নয়।

সূর্যাস্তের রক্তিম আভা যমুনার তরঙ্গে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে। রাধিকা কি সেই কথাই বলছে? সখীদের নীল শাড়ির আভা মিশে অনন্য এক অনুভূতির জন্ম দেয়। রাধা সেটাই কি বলতে চাইছে? কৃষ্ণ এসে কদমতলে বাঁশি বাজিয়েছে। রাধা কুল রাখতে পারেনি। সিরাজগঞ্জ বলে কথা। প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম ও সাদিয়া ইসলাম পুরান থেকে রাধা-কৃষ্ণের চরিত্র বের করেন। ক্ষতি কী, ছোটরা একটু জানুক না!

মামজার পার্কে যায় সামিয়া ও তার দুই সহোদর। তারা প্রকৃতির ছবি দেখে। ভালোবাসে আলোকচিত্র তুলতে। ক্লিক ক্লিক। মা-বাবা সঙ্গে থাকেন। নিসর্গ বন্দী হয় মনে বনে।