মিয়ানমারকে চুক্তি প্রতিপালনের আহ্বান জাতিসংঘের

জেনেভায় মানবাধিকার পরিষদের ৪২তম অধিবেশনে বক্তব্য দিচ্ছেন শামীম আহসান
জেনেভায় মানবাধিকার পরিষদের ৪২তম অধিবেশনে বক্তব্য দিচ্ছেন শামীম আহসান

মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সীমানা উন্মুক্ত করে দেন। দুই বছর পেরিয়ে গেলেও মিয়ানমার এখনো উত্তর রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় মানবাধিকার পরিষদের চলতি ৪২তম অধিবেশনে দেশটির জাতিসংঘ দপ্তরে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি শামীম আহসান এ কথা বলেন।

অধিবেশনে এ বিষয়ে গৃহীত একটি প্রস্তাবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পাদিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুসারে উত্তর রাখাইন অঞ্চলে সহায়ক পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে পূর্ণ নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে নিজেদের আবাসস্থলে ফেরত যেতে উৎসাহিত করার জন্য জাতিসংঘ মিয়ানমারকে আহ্বান জানিয়েছে।

একই সঙ্গে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় প্রদান করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা ফেরত যাওয়া পর্যন্ত এ গুরুভার বহনে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদার হওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়।

বাংলাদেশের উদ্যোগে ইসলামিক সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি) ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা যৌথভাবে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক এ প্রস্তাবটি চূড়ান্ত করেন। নিবিড় ও সুদীর্ঘ আপস-আলোচনা শেষে জাতিসংঘের প্রায় এক শ সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট এ প্রস্তাবটি মানবাধিকার পরিষদে পেশ করা হয়।

প্রস্তাবটির ওপর অনুষ্ঠিত আলোচনায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি ২০১৭ সালের আগস্টের পর থেকে প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষ করে জাতিসংঘের আলোচ্যসূচিতে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষার বিষয়টি সক্রিয় আলোচনায় রাখা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন।

গৃহীত এ প্রস্তাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যৌন অপরাধসহ সব ধরনের নির্মম নির্যাতন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের মানবাধিকার লঙ্ঘনসংশ্লিষ্ট সব আন্তর্জাতিক বিধান ও আন্তর্জাতিক বিচার প্রক্রিয়া তথা জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার আওতায় আনার জন্য তদন্ত প্রক্রিয়া জোরদার করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়।

এর মাধ্যমে প্রকারান্তরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরেপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) বর্তমানে চলমান প্রক্রিয়ার পাশাপাশি গাম্বিয়া ও বাংলাদেশের যৌথ নেতৃত্বে গঠিত ইসলামিক সম্মেলন সংস্থার ‘অ্যাডহক মিনিস্ট্রিয়াল কমিটি’ কর্তৃক আন্তর্জাতিক আদালতের (আইসিজে) শরণাপন্ন হওয়ার উদ্যোগকে বিশ্ব পরিসরে উৎসাহিত করা হয়েছে।

সদ্য কার্যক্রম সম্পন্ন করা মিয়ানমারবিষয়ক নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তথ্যানুসন্ধান মিশনের প্রতিবেদনসমূহ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এবং সাধারণ পরিষদের মাধ্যমে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সব অঙ্গসংগঠনের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করারও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। প্রস্তাবটিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলমান সব প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে এরূপ পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এখতিয়ারের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পক্ষে জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পথে বর্তমান প্রস্তাবটি একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে।

প্রস্তাবটি একই দিন (বৃহস্পতিবার) জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে উত্থাপিত হলে চীনের প্রতিনিধি প্রস্তাবটির ওপর ভোট গ্রহণের দাবি জানান। প্রস্তাবটি ৩৭-২ ভোটে গৃহীত হয়। সাতটি দেশের প্রতিনিধি ভোটদানে বিরত থাকেন।