ব্রিটেনে পেন্সিলের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উদ্যাপন

নৃত্য পরিবেশনা
নৃত্য পরিবেশনা

তিন বছর আগে অনলাইনভিত্তিক শিল্প-সাহিত্যনির্ভর গ্রুপ পেন্সিলের জন্ম হয় এই সেপ্টেম্বর মাসেই। মাত্র এক বছরেই অনলাইন থেকে অফলাইনে যাত্রা শুরু করে পৃথিবীজুড়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করে ফেলেছে।

গত তিন বছরে পরপর তিনটি একুশের বইমেলায় অংশ নিয়েছে। এ বছর পেন্সিল ফাউন্ডেশন থেকে ৫২টি বই প্রকাশ করা হয় নতুন-পুরোনো লেখকদের। যা রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত সাহিত্যপ্রেমী মানুষের মধ্যে।

শিল্পের নানা স্তরে সম্পৃক্ততা রেখে হাজার প্রতিভা জন্ম দেওয়া এই পেন্সিলের বর্ষপূর্তি ও জন্মদিন প্রতিবছরই তাই নানা আয়োজনে পালিত হয় এই সেপ্টেম্বর মাসেই।

জীবনের নানা রং ছড়িয়ে দিয়ে বর্ষপূর্তির এই উৎসব বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে ইংল্যান্ড, কানাডা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ নানা দেশে আনন্দ-উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করেছেন উদ্যমী পেন্সিলররা।

খুদে পেন্সিলরদের কেক কেটে জন্মদিন উদ্‌যাপন
খুদে পেন্সিলরদের কেক কেটে জন্মদিন উদ্‌যাপন

এ বছর পেন্সিলের বর্ষপূর্তি নিয়ে প্রথম আয়োজন হয় কানাডায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) ব্রিটেনের ব্র্যাডি আর্ট সেন্টারে উদ্‌যাপিত হলো পেন্সিল যুক্তরাজ্যের বর্ষপূর্তি উৎসব।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ব্যাংক অব আইডিয়াসের ফাউন্ডার তানজিলা জামান খুদে পেন্সিলরদের নিয়ে একটি অ্যাক্টিভিটি সেশন করেন। যেখানে ব্রিটেনে বসবাসরত ছোট ছোট ছেলেমেয়ে তাদের মাতৃভাষা, বাংলাদেশ সম্পর্কে ও বাংলায় বিভিন্ন অক্ষর রঙের মাধ্যমে রাঙিয়ে ‘শুভ জন্মদিন পেন্সিল’ নামক একটি ব্যানার তৈরি করে।

এর পরপরই শুরু হয়ে যায় ছোট-বড় পেন্সিলরদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

ব্রিটেনে পেন্সিলের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপনের একটি দৃশ্য
ব্রিটেনে পেন্সিলের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপনের একটি দৃশ্য

অনুষ্ঠানের শুরুতেই সকালে করা তানজিলা জামানের পেন্সিলের জন্মদিন এবং এর সঙ্গে খুদে পেন্সিলরদের নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘মাতৃভাষা নিয়ে আমি কাজ করছি কয়েক বছর ধরে। কিন্তু এই খুদে পেন্সিলররা যে এত প্রতিভাসম্পন্ন এবং এরা আমাদের গান, কবিতা, নাচ চর্চা করছে, এটি সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে। আমি অভিভূত এমন একটি আয়োজনের অংশ হতে পেরে।’

খুদে পেন্সিলররা তাদের রং করা বর্ণমালা একে একে জোড়া লাগিয়ে ‘পেন্সিল শুভ জন্মদিন’ নামক একটি ব্যানার তৈরি করে।

এর পরপরই পেন্সিলর কানিজ ফাতেমার লেখা ও আসমা দেবজেনির সুরে সংগঠনের মৌলিক গান দিয়ে উদ্বোধন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।

ব্রিটেনে বেড়ে ওঠা একঝাঁক খুদে পেন্সিলর বাংলা ভাষায় ছড়া, গান ও নৃত্য পরিবেশন করে। তাদের পরিবেশনা উপস্থিত দর্শককে চমকপ্রদ ও বিস্মিত করে। নিঃসন্দেহে একটি বিরাট অর্জন ছিল।

ব্রিটেনে পেন্সিলের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপনের একটি দৃশ্য
ব্রিটেনে পেন্সিলের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপনের একটি দৃশ্য

শিশুশিল্পী কিয়ারা দাসের কণ্ঠে শ্রুতিমধুর লালনগীতি, খুদে পেন্সিলর (দুই বছরের একটু বেশি) আয়াতের ‘একতা যদি পাই অমনি ধরে গাপসি গাপসি খাই’ ও শিশুশিল্পী প্রাপ্তি দেব সরকারের কণ্ঠে নির্ভুল উচ্চারণে পুরো বিদ্রোহী কবিতাটি আবৃত্তি ছিল রীতিমতো বিস্ময়কর।

পেন্সিল যুক্তরাজ্য সব সময়ই স্পেশাল নিড শিশুদের উৎসাহিত করে। তারা যেন তাদের প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে নিজেদের সুপ্ত প্রতিভা সবার সামনে তুলে ধরতে পারে। সেই অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে দুজন অটিস্টিক বাচ্চা সুন্দর গান ও আবৃত্তি পরিবেশন করে; যা প্রত্যেক দর্শকের মন জয় করে।

এ ছাড়া আরও ছিল বড়দের আবৃত্তি, গান ও নৃত্য পরিবেশনা। বড়দের মধ্যে সিমি ও তাইফা দীর্ঘ ১৫ বছর পর সদস্যদের অনুপ্রেরণায় গান পরিবেশন করেন। উল্লেখ্য, তাঁরা দুজনে নতুন কুঁড়ি ও ক্লোজআপ ওয়ানের একসময়কার নির্বাচিত শিল্পী ছিলেন। বিলেতে থাকাকালে নানা প্রতিকূলতায় তাঁদের গান চর্চা করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে সেদিনের এই আয়োজন।

ব্রিটেনে পেন্সিলের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপনের একটি দৃশ্যa
ব্রিটেনে পেন্সিলের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপনের একটি দৃশ্যa

অনুষ্ঠানে আরও উল্লেখযোগ্য ছিল পেন্সিল ইউকের নির্বাহী কমিটির সদস্য নিজাম উদ্দিনের মূল পেন্সিল নিয়ে এবং নির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য ড. এশরার লতিফের পেন্সিল ইউকে নিয়ে তথ্যবহুল প্রেজেন্টেশন। জন্মদিন উপলক্ষে করা ‘রং পেন্সিল’ নামে প্রথম ই-ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন। এই ম্যাগাজিন অনলাইনে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে পড়া যাবে। ম্যাগাজিনটি সম্পাদনায় রয়েছেন মোর্শেদ আখতার, চারুলতা আরজু ও নিয়াজ তামান্না কান্তা।

জন্মদিনের কেকের পাশাপাশি উপস্থিত দর্শক উপভোগ করেন পেন্সিলরদের নিজেদের হাতে তৈরি পিঠাপুলি।

বর্ষপূর্তি ও জন্মদিন উৎসবে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র লন্ডন শাখার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, কবি ও গল্পকথক শামীম আজাদ। তিনি শুভেচ্ছা বক্তব্যে পেন্সিলকে একটি শিল্প-সাহিত্যভিত্তিক পরিবেশবান্ধব সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেন; যা অত্যন্ত অনুপ্রেরণাদায়ক একটি বক্তব্য। আরও উপস্থিত ছিলেন ব্রিটেনের সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রিয় মুখ স্মৃতি আজাদ। তাঁর উপস্থিতি উৎসব-অনুষ্ঠানকে আরও রঙিন করে তুলেছিল।

আয়োজকেরা
আয়োজকেরা

প্রধান সমন্বয়কারী ও পেন্সিল ইউকের নির্বাহী সদস্য মুন্নি লাল ও মুনতাসির রুবেলের সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হয় বর্ষপূর্তির আয়োজন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন টুশি, মিলা, হিমু ও মিতি।

আয়োজনে লন্ডন ছাড়াও ব্রিস্টল, বার্মিংহাম, কার্ডিফসহ দূরদূরান্তের পেন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, পেন্সিল যুক্তরাজ্য ইতিমধ্যে ফটোগ্রাফি ও আবৃত্তি নিয়ে দুটি কর্মশালা সম্পন্ন করেছে। জন্মদিনের আয়োজন যেন ছিল তারই প্রতিফলন। অদূর ভবিষ্যতে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিসংক্রান্ত নানাবিধ কর্মকাণ্ড নিয়ে এগিয়ে যেতে চায় পেন্সিল ইউকে।