উচিটায় দুর্গাপূজার মহোৎসব

উচিটায় পূজামণ্ডপ
উচিটায় পূজামণ্ডপ

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস রাজ্যের আকাশে বাংলাদেশের শরৎকালের সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায় না। পথের ধারে হাওয়ায় হেলেদুলে কাশফুলেরা খেলা করে না। গাছের নিচে শিউলিরা সাজিয়ে দেয় না ফুলের চাদর।

তবু প্রকৃতির সব রং ছাপিয়ে মেঘলা আকাশেও দুর্গোৎসবের আনন্দে ঝলমল করে ওঠে এই রাজ্যের উচিটা শহর। দুর্গামায়ের চরণধূলিতে হাত রেখে প্রণাম, ঢাকঢোল বাজিয়ে, সিঁদুর খেলার মধ্য দিয়ে উচিটায় দুই দিনব্যাপী সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্বজনীন দুর্গাপূজা গতকাল রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) শেষ হয়েছে।

উচিটায় ঢাকঢোল বাজিয়ে দুর্গাপূজা শেষ হয়েছে
উচিটায় ঢাকঢোল বাজিয়ে দুর্গাপূজা শেষ হয়েছে

দুই দিনব্যাপী বর্ণিল এই আয়োজনের প্রথম দিন শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে পুরোহিত ড. দেবব্রত ভাদুরী শত শত পূজারিকে নিয়ে ষষ্ঠী, সপ্তমী পালন করেছেন। অষ্টমী-নবমী-দশমী পালন করেন পুরোহিত শুভেচ্ছা চক্রবর্তী।

সকাল থেকে ক্যানসাস রাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে শত শত পূজারি এনডোভার স্পোর্টস অ্যান্ড রিক্রিয়েশন সেন্টারে যোগ দেন। প্রতিবারের মতো এবারও অনেকে ক্যানসাসের আশপাশের রাজ্য শহর থেকে পূজায় যোগ দিতে উচিটায় এসেছিলেন।

শনিবার সকালে শুরু হয় পূজার মূল পর্ব। শুরুতে পুরোহিত ধর্মের মূল বাক্য পাঠ করে শোনান। তিনি বলেন, আন্তরিক নিষ্ঠার সঙ্গে প্রার্থনা বা পুষ্পাঞ্জলি করলে মনে শুদ্ধি ও উচ্চ ভাব লাভ করা যায়। সৃষ্টির মূল ধ্বনি ‘ওম’-এর মাঝে সৃষ্টির মূলমন্ত্র রয়েছে বলে তিনি পূজারিদের স্মরণ করিয়ে দেন। এ সময় মা দুর্গার বেদিতে পুষ্পাঞ্জলি, আরতি, মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়।

নারী পূজারিরা একে-অপরের কপালে সিঁদুর পরিয়ে দেন
নারী পূজারিরা একে-অপরের কপালে সিঁদুর পরিয়ে দেন

দুপুরে পরিবেশন করা হয় খিচুড়ি, পাঁচমিশালি তরকারি, চাটনি, পাপড়ি ও মিষ্টি।

পরে আলোঝলমল মঞ্চে পূজায় আগত একঝাঁক তরুণ-তরুণীর যৌথ নৃত্যের পরিবেশনায় পরিবেশ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। এরপরে সঙ্গীতার একক কবিতা আবৃত্তি সবাইকে বিমোহিত করে। কিবোর্ডের ঝংকারে রবীন্দ্রসংগীতের ঝড় তোলেন হিউস্টন থেকে আসা সুব্রত-শর্মিষ্ঠা কোল। তাঁদের দ্বৈত সংগীতসন্ধ্যা অন্য রকম আবহ সৃষ্টি করে।

দিনভর আনন্দোৎসব শেষে রাতে কাবেরী ও রুপেন কান্তি দেবের ইলিশ মাছ ভাজা, খাসির রেজালাসহ নানা পদের মুখরোচক বাঙালিয়ানা খাবার দিয়ে চলে ভুঁড়িভোজ।

সমবেতদের একাংশ
সমবেতদের একাংশ

দ্বিতীয় দিন রোববার সকালে নবমী ও দশমী পূজা শেষে পুরোহিত বছরজুড়ে কল্যাণপ্রার্থী হয়ে পূজারিদের মাথায় জল ছিটিয়ে দেন। এ সময় মা দুর্গাদেবীর সামনে উপস্থিত পূজারিদের সুন্দর জীবন কামনায় পুরোহিতকে জল ছিটাতে দেখা যায়। রোববার ছিল এই মহাক্ষণ।

প্রবাসজীবনে নানা ব্যস্ততার মধ্যে সারা বছর অপেক্ষার পালা শেষে আসে দুর্গাপূজা। ক্যানসাস রাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে ছুটে আসা অনেক পূজারিকে দেবী দুর্গার সামনে সেলফি তুলতে ভোলেননি।

প্রত্যয়-প্রমা, পার্থ-সুলগ্না ও অভিষেক-শালিনী। এই তিন জুটি উচ্চশিক্ষার জন্য সবেমাত্র স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় এসেছেন। তাই এবারের পূজায় তাঁরা ম্যানহাটন ও টেক্সাস থেকে ছুটে এসেছেন পূজায় যোগ দিতে। রোববার পূজার দ্বিতীয় দিনে দুর্গাদেবীর আশীর্বাদ নিতে আসা পূজারিরা দুর্গার বেদিতে শেষ ছোঁয়া নেন।

সমবেতদের একাংশ
সমবেতদের একাংশ

ষাটোর্ধ্ব আসিস ঘোষ হাজরা বলেন, ছোটবেলার পূজা আর এখনকার পূজা আকাশ-পাতাল ব্যবধান। সে সময় ধর্মীয় আবর্তে সবকিছু মেনে পূজা হতো। এখন পূজা মানে সর্বজনীন উৎসব। এখানে সব ধর্মের মানুষের মিলনমেলা।

শেষ দিন বাদ্যের তালে তালে নারী পূজারিরা একে-অপরের কপালে সিঁদুর পরিয়ে দেন।

বিদায়বেলায় কেউ যেন মা দুর্গাকে ছেড়ে যেতে চাচ্ছিলেন না। সকাল থেকে পূজারিরা দুর্গাদেবীর বেদিতে পূজা-অর্চনা দিয়ে আবারও দেখা হবে আগামী বছর এই আশীর্বাদ কামনায় ঘরে ফিরেছেন।

পূজারিরা দেবী দুর্গার সামনে সেলফি তুলতে ভোলেননি
পূজারিরা দেবী দুর্গার সামনে সেলফি তুলতে ভোলেননি