যে ধারণা পাল্টে দিতে পারে জীবন

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে কিছু ঘটনা ঘটে মানুষের আচরণগত সমস্যার কারণে। এই আচরণকে আমরা অনেক সময় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বলি।

মূলত, প্রতিটি মানুষের আচরণ নির্ভর করে তার ব্রেনে কী ইনফরমেশন দেওয়া আছে তার ওপর। যেমন আমাদের ছোটবেলা থেকেই শেখানো হয় কীভাবে মা–বাবার সঙ্গে আচরণ করতে হবে। কীভাবে শিক্ষকের সঙ্গে আচরণ করতে হবে। কীভাবে বড় ও ছোটদের সঙ্গে আচরণ করতে হবে ইত্যাদি।

দৈনন্দিন জীবনে আমরা আমাদের মনের ভেতর সব কাজ বা বিষয়ের একটা মাপকাঠি তৈরি করে নিই। যখনই কোনো কাজ বা ঘটনা আমাদের এই মাপকাঠির বাইরে ঘটে, তখনই আমরা রাগ করি বা অন্যের সঙ্গে খারাপ আচরণ করি।

আর এই রাগ থেকেই তৈরি হয় সম্পর্কের বিচ্ছেদ। ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের, বোনের সঙ্গে বোনের, বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুর, এমনকি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কও ভেঙে যেতে পারে।

যদি জিজ্ঞেস করা হয়, কার কার রাগ আছে বা খুব বেশি রাগী, তাহলে অনেকেই উত্তর দেবেন যে আমার রাগ আছে বা আমি অনেক বেশি রেগে যাই। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না।

কিন্তু আসল কথা হলো, যাঁরা বলেন আমি রেগে যাই বা রাগ অনেক বেশি, তাঁরা কেউ কিন্তু সত্য বলেননি। রাগ হলো মূলত নৃত্যের মতো। যেটা আমরা ইচ্ছা হলে করি, না হলে করি না।

বিষয়টা খুব জটিল মনে হলেও একটি ছোট্ট উদাহরণ দিলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।

ঘটনা: এক
চাকরিজীবীরা অফিসে বসের বকা বা ঝাড়ি খাননি—এমন খুব কমই পাওয়া যাবে। মাঝেমধ্যে অফিসের বস খুব নগণ্য কারণে তাঁর অধস্তনদের বকা দেন বা অনেক লোকের মাঝে কাউকে অপমান করেন।

এমন কেউ কি আছেন, যিনি বসের বকা খাওয়ার পর বসকে উল্টো ঝাড়ি দেন বা চোখ রাঙিয়ে বসকে বলেন, এ রকম যেন আর কখনো না হয়।

আসলে ব্যতিক্রম ছাড়া কেউই এমনটি করেন না। মাথা নিচু করে শান্তভাবে বসের বকা শোনেন সবাই।

ঘটনা: দুই
আবার আমরা যখন বাসায় থাকি, হয়তো ছোট ছেলে বা মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে এসে বলল, বড় ভাই বা বোন তাকে মেরেছে। তখন আমরা কী করি? খুব রেগে গিয়ে বড় ছেলে বা মেয়েকে বকা দিই। নিজের যত রাগ ছেলে বা মেয়ের ওপর ওঠাই। এমনকি বসের ওপর থাকা রাগটাও তাঁদের ওপর প্রয়োগ করি। কেউ কেউ কোনো কিছু বিচার না করেই ছেলে বা মেয়েকে চড়-থাপ্পড় দিই আর বলি, এ রকম কাজ যেন সে আর না করে।

এখন যদি আমরা খুব মনোযোগসহ এই দুই ঘটনাকে নিরীক্ষণ করি, তাহলে বুঝতে পারব, আমাদের রাগ আসলে ওঠেনি। বরং আমরা ইচ্ছা করেই রাগ ওঠাই।

এখানে ঘটনা দুটি। প্রথম ঘটনায় আমাদের ভেতর অনেক রাগ হলেও আমি কিন্তু তার একটুও প্রকাশ করছি না। কারণ হলো, এখানে রাগলে আমার বা আমাদের নিজেদের ক্ষতি। আমাদের জানা, বসকে রাগ দেখানো তো দূরের কথা, চোখ গরম করে তাকালেই আমাদের চাকরি শেষ। আবার নতুন চাকরি খোঁজা। আর চাকরির সঙ্গে তো শুধু আমি জড়িত নই। আমার ফ্যামিলিও নির্ভরশীল এটার ওপর। আর এ জন্যই আমরা এই জায়গায় রাগ করি না। নিজের ইচ্ছাতেই রাগ করি না।

অন্যদিকে, আমরা যখন আমাদের ছেলেমেয়ে কারও ওপর রেগে যাই, তাদের বকাঝকার পাশাপাশি চড়-থাপ্পড়ও মারি। ভাবি, কী হবে! সে কি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে বা উল্টো আমাকেই মারবে কিংবা আমাকে গালি দেবে? সে একটু কাঁদবে তারপর আবার ঠিক হয়ে যাবে।

আসলে যেখানে আমদের জোর চলে আমরা সেখানেই রাগ দেখাই। যেখানে আমাদের জোর চলে না, সেখানে আমরা শান্ত থাকি। রাগ দেখাই না।

আমরা এটা অভ্যাসে পরিণত করেছি। যদি আমরা এটাকে পাল্টাতে চাই, তাহলে আমাদের প্রথমেই যে কাজটা করতে হবে, সেটি হলো, আমাদের স্বীকার করে নিতে হবে যে আমার রাগ অটোমেটিক ওঠে না, আমি নিজ থেকে রাগ ওঠাই।

আমরা যদি এই দায়িত্ব নিজের ওপর না নিই আর বলতে থাকি, আমার রাগ বেশি, খুব রেগে যাই, তাহলে আর কী। আপনার রাগ সব সময়ই আসবে। এটা আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।

আর এই রাগ আপনার অনেক মূল্যবান সম্পর্ক ভেঙে দিতে পারে। এ থেকে হতে পারে মানুষের সঙ্গে মনোমালিন্য, যা আমাদের সামাজিক জীবনে কাম্য নয়।

এ রকম ছোট ছোট চিন্তাভাবনা, যা আমাদের জীবনকেই বদলে দিতে পারে। আমি এই লেখা ভারতের মোটিভেশনাল বক্তা সন্দীপ মহেশ্বরী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের সবার মাঝে এ চিন্তাটুকু প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি।