ভাতিজার দুরবস্থা

প্রতীকী ছবি। ছবি: রয়টার্স
প্রতীকী ছবি। ছবি: রয়টার্স

জার্মানি থেকে দুবাই হয়ে ঢাকায় যাচ্ছি। মন খুশিতে ভরা। আবার আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা হবে। আবার শর্ষে দিয়ে ইলিশ মাছ খাব।

জার্মানির ডুসেলডর্ফ থেকে প্লেন ছাড়তে দেরি হলো। হবে না কেন? বিমানবন্দরে চেকের সময় জুতা খোলা, বেল্ট খোলা, ঘড়ি-মানিব্যাগ চেক। কোনো দিন হয়তো বলবে প্রায় দিগম্বর হয়ে প্লেনে উঠতে হবে আর নামার সময় সব কাপড়চোপড় ফেরত দেবে।

একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম দুবাই থেকে পরের প্লেনটি যদি মিস করি। যাহোক প্লেনে উঠে নিজ আসনে বসলাম। বাম দিকে এক বাঙালি যুবক বসে আছেন। তাঁর পাশে এক সুন্দরী জার্মান যুবতী।

যুবককে দেখলাম খুব চেষ্টা করছেন মেয়েটির মন গলাতে। মেয়েটিও খুব ভদ্রভাবে একটু–আধটু উত্তর দিচ্ছেন।

কিছুক্ষণ পর স্টুয়ার্ড এসে জিজ্ঞেস করলেন কারও কোনো ড্রিংকস লাগবে কি না। জার্মান মেয়েটি একটি শ্যাম্পেনের (মদ) অর্ডার দিলেন। বাঙালি যুবকও দেখাদেখি শ্যাম্পেনের অর্ডার দিলেন। মেয়েটি আরেকবার অর্ডার দিলেন। বাঙালিও। বাঙালি কি কখনো হারে?

আমি অনেক দিন জার্মানিতে আছি।

জার্মানরা যেমন ভালো ফুটবল খেলে, মদ খাওয়ার ব্যাপারেও ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন। কিছুক্ষণ পর মেয়েটি গেল ওয়াশ রুমে।

আমি যুবককে বললাম, ‘প্লিজ, আপনি আর খাবেন না। দুবাইতে আমাদের প্লেন চেঞ্জ করতে হবে।’

যুবক অবাক হয়ে বললেন, ‘আপনি বাঙালি! আমি তো এতক্ষণ মনে করেছি আপনি নেপালি। টাকটি তো দালাই লামার মতো।’

আমি রেগে না গিয়ে বললাম, ‘দেখুন, আপনি আমার ছেলের বয়সী, আপনার ভালোর জন্য বলছি...।’

যুবকটি বললেন, ‘ঠিক আছে আঙ্কেল, mind your own business।’

ইতিমধ্যে মেয়েটি ফিরে এসেছেন ওয়াশ রুম থেকে। এসেই আবার ড্রিংকসের অর্ডার দিলেন। আমার নতুন ভাতিজাও। খেলা চলতে থাকল। কিছুক্ষণ পর দুবাইতে ল্যান্ড করলাম। ভাতিজা টলোমলো অবস্থায় উঠে দাঁড়াল। হাঁটি হাঁটি পা, টলি টলি গা। আমাদের একটি শাটল ট্রেনে যেতে হবে অন্য প্লেনের কাছে।

ভাতিজার অবস্থা দেখে দুঃখ হলো। আমরা শত হলেও বাঙালি তো!

ভাতিজাকে বললাম, আমাকে ফলো করেন।

ভাতিজা বললেন, ‘আঙ্কেল, No problem. Mind your own business।’

যাহোক দুবাই-ঢাকা প্লেনে বসলাম। প্লেন আর ছাড়ে না। একজন যাত্রী নাকি নেই। যাত্রীটি যে কে হতে পারে আমার আর কোনো সন্দেহ রইল না। দেরি করে প্লেন ছাড়ল। ঢাকায় পৌঁছে ভাতিজাকে আর দেখলাম না।

পরদিন আবার আমাকে ঢাকার বিমানবন্দরে যেতে হয়েছিল এক আত্মীয়কে রিসিভ করবার জন্য। দুবাই থেকে আসবেন। পাঠক, আপনার কি মনে হয়, কার সঙ্গে দেখা হলো? আমার সেই ভাতিজা।

উসকোখুসকো বদন, চোখগুলো লাল। আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরলেন। আঙ্কেল, আমারে মাফ কইরা দেন। আপনারে অসম্মান করছিলাম, তার ফল পাইছি। আমি আর কোনো দিন ড্রিংক করুম না।

আমি তাঁকে বললাম, সব ঠিক আছে তো?

: না, আমার স্যুটকেস পাইতাছি না।

আমি বললাম, স্যুটকেস তো আগের প্লেনে এসেছে। স্যুটকেস তো আর ড্রিংক করেনি।

: ঠিক কইছেন, আল্লাহ আপনারে বাঁচাইয়া রাখুক। আপনি জার্মানি যাইবেন কবে?

আমি তারিখটি বললাম।

ভাতিজা চিৎকার করে বলল, ‘আঙ্কেল, আমিও তো ওই দিনই যাইমু।

আমি শুনে, মনে মনে বললাম, এই সেরেছে রে!