কানাডায় উচ্চশিক্ষাবিষয়ক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

সুজানে ফর্টিয়ার ও মাহমুদ-উজ-জাহান সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে প্রাপ্ত
সুজানে ফর্টিয়ার ও মাহমুদ-উজ-জাহান সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে প্রাপ্ত

কানাডার খ্যাতনামা ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের উচ্চশিক্ষাবিষয়ক এক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

প্রথমবারের মতো স্বাক্ষরিত এই সমঝোতা স্মারকের অধীনে বাংলাদেশ সরকার ও ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪০ জন উচ্চশিক্ষার্থী ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি পর্যায়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে আসবেন। শিক্ষা শেষে তাঁরা বাংলাদেশের বঙ্গমাতা জাতীয় সেলুলার ও আণবিক গবেষণা কেন্দ্রে (বিএনসিএমআরসি) গবেষণাকাজে নিয়োজিত হবেন।

গত সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) কানাডার রাজধানী অটোয়ায় দেশটির বাংলাদেশ হাইকমিশনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিএনসিএমআরসি ও বিএমআরসির (বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল) বাংলাদেশ ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ প্রোগ্রাম শীর্ষক এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ও উপাচার্য অধ্যাপক সুজানে ফর্টিয়ার ও বিএনসিএমআরসির প্রকল্প পরিচালক ডা. মাহমুদ-উজ-জাহান সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগের ভিজিটিং প্রফেসর ড. আবু সাদাত মোহাম্মাদ নোমান স্মারক স্বাক্ষরে বিশেষ সহযোগিতা প্রদান করেন।

বক্তব্য দিচ্ছেন হাবিব ই মিল্লাত। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে প্রাপ্ত
বক্তব্য দিচ্ছেন হাবিব ই মিল্লাত। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে প্রাপ্ত

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাংসদ ও ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সভাপতি হাবিব ই মিল্লাত। বিশেষ অতিথি ছিলেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজানুর রহমান।

হাবিব ই মিল্লাত তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর স্বীকৃতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি সরকারের কর্মসূচি এবং এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফলতার জন্য স্বাস্থ্য খাতে গবেষণার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং এ ক্ষেত্রে সহায়তার জন্য ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়কে ধন্যবাদ জানান।

মাহমুদ-উজ-জাহান তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশ সরকারের একনেক কর্তৃক বিএনসিএমআরসি প্রকল্পের অনুমোদন ও প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে এ ধরনের অত্যাধুনিক প্রকল্প পরিচালনা এবং তা বাস্তবায়নে উচ্চশিক্ষিত দক্ষ জনবলের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। দক্ষ লোকবল তৈরিতে সহযোগিতার জন্য ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়কে তিনি ধন্যবাদ জানান।

মিজানুর রহমান তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতির জন্য মানসম্পন্ন গবেষণার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে এ ক্ষেত্রে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়কে ধন্যবাদ জানান। তিনি এ ধরনের সময়োপযোগী উদ্যোগ আরও বিস্তৃত ও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি হাইকমিশনের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস প্রদান করেন।

বক্তব্য দিচ্ছেন মিজানুর রহমান। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে প্রাপ্ত
বক্তব্য দিচ্ছেন মিজানুর রহমান। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে প্রাপ্ত

সুজানে ফর্টিয়ার তাঁর বক্তব্যে ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার উচ্চমান ও এর ঐতিহ্য বর্ণনা করে প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জ্ঞান ও গবেষণার ক্ষেত্র ও মান বৃদ্ধির অঙ্গীকার করেন। এই প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের বিএনসিএমআরসি ও বিএমআরসির সঙ্গে ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ও এই উদ্যোগের সফলতা কামনা করেন।

অনুষ্ঠানে দেশটির বাংলাদেশ হাইকমিশনের মিনিস্টার মিয়া মো. মাইনুল কবির ও কাউন্সেলর (বাণিজ্যিক) মো. শাকিল মাহমুদ এবং ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, সহকারী ডিনেরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অর্জিত উন্নয়নের ওপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্র হাইকমিশনের পক্ষ থেকে প্রদর্শিত হয়।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল, হাইকমিশনার ও হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের এক যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি হাইকমিশনার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি স্থায়ী ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ বা ‘বঙ্গবন্ধু বৃত্তি’ প্রচলনের প্রস্তাব করেন।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে হাইকমিশনার মিজানুর রহমান ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জীবন, কর্ম, আদর্শ ইত্যাদি বিষয়ে ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌথভাবে একটি সেমিনার আয়োজনের প্রস্তাব দেন।

বক্তব্য দিচ্ছেন সুজানে ফর্টিয়ার। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে প্রাপ্ত
বক্তব্য দিচ্ছেন সুজানে ফর্টিয়ার। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে প্রাপ্ত

এ ছাড়া হাইকমিশনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য খাতে গবেষণায় সহায়তার পাশাপাশি বাংলাদেশের নার্সিং শিক্ষার মান উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তা কামনা করা হয়।

সভায় বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ কর্মকাণ্ড আরও বেগবান করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে আলোচনায় হয়। আলোচনায় হাইকমিশনার কেন্দ্রটিকে বঙ্গবন্ধুর নামে নামকরণের প্রস্তাব করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সব প্রস্তাব সক্রিয় বিবেচনার আশ্বাস প্রদান করে। বিজ্ঞপ্তি