প্রিয়তার চিরকুট থেকে

প্রিয়তার চিরকুট। ছবি: লেখক
প্রিয়তার চিরকুট। ছবি: লেখক

তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া নাজিলাতুল ফেরদৌস প্রিয়তা নামের ছোট মেয়েটির মা আমার বান্ধবী। মেয়েটি তার মায়ের মাধ্যমে আমার কাছে একটি চিরকুট (ছবি দেখুন) পাঠিয়েছে ও বলেছে আমি যেন তার লেখাটি পত্রিকায় প্রকাশ করার ব্যবস্থা করি। চিরকুটের শিরোনাম ‘নিয়ম’।

প্রিয়তা লিখেছে:
১. আমাদের রাস্তায় থুতু ফেলা উচিত নয়।
২. আমাদের রাস্তায় ময়লা ফেলা উচিত নয়।
৩. আমাদের রাস্তায় মলমূত্র ত্যাগ করা উচিত নয়।
৪. আমাদের রাস্তায় জোরে কথা বলা উচিত নয়।

প্রিয়তা আরও লিখেছে, ‘আমরা যদি রাস্তায় ময়লা বা নোংরা ফেলি তবে ওখানে নোংরা পানি জমে যায়। সেই পানিতে এডিস মশা হয় এবং আমাদের চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু জ্বর হয়। এটা আমাদের করা উচিত নয়’।

এত ছোট একটি মেয়ের নিয়ম মানার গুরুত্ব দেখে আমার দারুণ লেগেছে। মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্ম বাংলাদেশকে বদলে দেবে। আমাদের নতুন প্রজন্মের দেশ নিয়ে চিন্তাচেতনা সত্যিই অন্য লেভেলের। ট্রাফিক কন্ট্রোল নিজেদের কাঁধে নিয়ে তারা দেখিয়ে দিয়েছিল চাইলেই সবকিছুতে নিয়ম মানা যায়। নিয়ম না মানা একটা অজুহাত।

আমি আমার অনেক লেখায় বলেছি, দেশের আমূল পরিবর্তন করতে হলে স্কুল থেকেই বাচ্চাদের মগজে সব ভালো জিনিস ঢোকাতে হবে। নিয়ম মানা তাদের অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। আমার মনে হয়, এ ব্যাপারে আগের চেয়ে সচেতনতা বেড়েছে। প্রিয়তার লেখা তারই প্রমাণ।

আজ আমাদের যে ডেঙ্গু জ্বরের সমস্যা, তা কিন্তু নিয়ম না মানার কারণে হয়েছে। আমরা যদি সবকিছুতেই নিয়ম মানতাম, তবে মশার এই প্রাদুর্ভাবে আমরা পড়তাম না। আমাদের দেশ বেঁচে যেত ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহতা থেকে। ডেঙ্গু জ্বরের এই সংকট প্রিয়তার ভাবিয়ে তুললেও আমাদের বড়দের অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে পারছে কি না, আমার সন্দেহ আছে।

একটা দেশ কতটা এগিয়েছে, তা অনুমান করা যায় তার রাস্তাঘাট দেখলে। ঝকঝকে রাস্তা বলে দেয় সেই দেশের মানুষ কতটা সভ্য, কতটা নিয়ম মেনে চলে। জাপানে দেখেছি, এখন আমেরিকায় দেখছি, মানুষ প্রতিনিয়ত সচেতনভাবে নিয়ম মেনে চলে। নিয়ম মানা তাদের অভ্যাস হিসেবে গড়ে উঠেছে। আর এটা একদিনে হয়নি। এটা গড়ে উঠেছে প্রিয়তার মতো ছোট বয়স থেকে প্রশিক্ষণের কারণে।

তবে আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দেশ একসময় বদলে যাবে। আগামী প্রজন্ম ঠিক আমাদের দেশের চেহারা পরিবর্তন করে দেবে। আমরা চাই স্কুল–কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়–রাস্তাঘাট এই প্রিয়তাদের মাধ্যমে ঝলমলে হয়ে উঠুক। সেই দিনের প্রত্যাশায় সব প্রিয়তার জন্য শুভকামনা।
–––

ড. মো. ফজলুল করিম: পোস্টডক্টরাল রিসার্চ ফেলো, পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র এবং সহযোগী অধ্যাপক মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ।