আমার আঙিনা

কয়েক মাস আগের ঘটনা। বাংলাদেশ বনাম ভারতের মধ্যকার ক্রিকেট ম্যাচ দেখব বলে ক্লাস শেষ করেই দৌড় দিয়েছিলাম পড়ার কক্ষের দিকে। ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে এই দুই দেশের খেলা দেখার চেষ্টা করি একটু বেশিই। তা ছাড়া দূর দেশে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত শোনা বাড়তি পাওয়া মনে হয়। তাই একটু দ্রুতই সেখানে গেলাম। সঙ্গে আমার বন্ধুরাও ছিল। তাদের কেউই আগে কখনো ক্রিকেট খেলা দেখেনি। তাই তারা বেশ উত্তেজিত। কিন্তু বিপত্তি বাধল টিভির রিমোট হাতে। আমরা কোনোভাবেই খেলার চ্যানেলটি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এমনকি অনলাইনে দেখব এমন লিংকও না।

হঠাৎ খেয়াল করলাম, আমাদের থেকে সামান্য দূরেই কেউ একজন খেলা দেখছেন। এটা দেখে খুবই আশ্চর্য হলাম। কারণ, আমার জানামতে, আমার অনুষদে বাঙালি কেউ ছিল না। এগিয়ে গেলাম তাঁর দিকে। আমরা অনুমতি চাইলাম তাঁর সঙ্গে খেলা দেখার। অনুমতি মিলল। কথাও হলো তাঁর সঙ্গে। আমি বাংলাদেশি জেনে তিনিও বেশ অবাক হলেন। দেশ থেকে প্রায় ৭ হাজার মাইল দূরে এসে নিজ দেশের কাউকে আচমকা খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারটা রোমাঞ্চকর। সেই ম্যাচ বাংলাদেশ হেরে গেলেও আমার জন্য হয়ে থাকল এক স্মরণীয় ঘটনা। কারণ, সেদিন থেকেই বাংলায় কথা বলার মতো একজনকে পেলাম।

আমি পড়ছি ইতালির ইউনিভার্সিটি অব বলোগনায়। বিশ্বের পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও চলে আসে। মনে আছে, ২০১৮ সালে প্রথম দিনের কথা। ক্লাসে গিয়ে খেয়াল করলাম, প্রায় ৩০০-৪০০ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে আমি একমাত্র এশিয়ার। খুব একা লাগছিল। সত্যি বলতে, সামান্য ভয়ও পাচ্ছিলাম। দিনে দিনে কেটে গেছে সেসব। কিছু বন্ধু আর ব্যস্ততায় দিন কাটাচ্ছি। এখানকার পরিবেশ বা সবার ব্যবহার আমার কাছে প্রাপ্তিমতো।  

তবে যত আনন্দ বা সুযোগ-সুবিধার মাঝেই ক্লাস করি না কেন, দেশকে কিন্তু সামান্যতমও ভুলতে পারি না! আমার খুলনা প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হয়েছিল। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে কেমন দিন কাটত সেসবও ভাবি। সত্যি বলতে, বাংলাদেশ সব সময়ই আমাকে টানে। দেশের মানুষ, সংস্কৃতি সব সময়ই অনেক মিস করি। এখানকার মানুষ অনেক ভালো, এখানে যে বন্ধুরা আমার, তারা অনেক ভালোও বাসে। তবু মন পড়ে থাকে দেশে। এখানে ক্লাস শেষে মাঠে বসে আড্ডা দেওয়া হয় না, খালি গলায় গান গাওয়া হয় না। টং দোকানে বসে চা খাওয়া বা বন্ধুরা মিলে হুট করে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয় না। 

প্রাপ্তি আর শত অপ্রাপ্তির মধ্যেই সামনে হাঁটছি। সকাল থেকে সন্ধ্যা, ক্লাস ল্যাব আর দিন শেষে বিছানায় শুয়ে ভাবছি আবার একদিন বাংলাদেশে যাব, আড্ডা দেব, বাংলা ভাষায় অনেক দিন পর মন খুলে কথা বলব।       

ফৌজিয়া করিম
ইউনিভার্সিটি অব বলোগনা, ইতালি