বেড়ানো: ওয়াশিংটনের জাতীয় বিমান জাদুঘরে এক দিন

মিউজিয়ামের ভেতরের একাংশ। ছবি: লেখক
মিউজিয়ামের ভেতরের একাংশ। ছবি: লেখক

আমেরিকায় যে কটি শহর পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে, ওয়াশিংটন ডিসি তার অন্যতম। নিউইয়র্ক সিটি থেকে ওয়াশিংটন ডিসির দূরত্ব প্রায় ২৩০ মাইল বা ৩৭০ কিলোমিটার। ড্রাইভ করে গেলে সাড়ে চার ঘণ্টা লাগে। তবে পথে যেহেতু বিশ্রাম বা বিরতি নিতে হয়, তাই পাঁচ ঘণ্টায় লেগে যায়।

ছিমছাম সাজানো-গোছানো ছবির মতো শহর ওয়াশিংটন ডিসি। সবকিছু পরিপাটি করে সাজানো। বিশেষ করে নিউইয়র্ক সিটির মতো ঘিঞ্জি জায়গা থেকে এলে পরিবর্তনটা একটু বেশিই চোখে লাগে। গ্রীষ্মকালে পর্যটকদের কোলাহলটা বেশিই থাকে। আর স্কুল হলিডেতে তো কথাই নেই।

আমেরিকার ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া স্টেটে ওয়াশিংটন সিটির অবস্থান। জায়গাটি ওয়াশিংটন ডিসি নামেই বেশি পরিচিত। এখানেই আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বাসভবন ও কার্যালয় হোয়াইট হাউস, লিঙ্কন মেমোরিয়াল, ওয়াশিংটন মনুমেন্টসহ অসংখ্য স্মৃতিসৌধ আর ঐতিহাসিক স্থাপনার অবস্থান।

কিন্তু সব ছাপিয়ে একটি বিশেষ কারণে আমার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ন্যাশনাল এয়ার অ্যান্ড স্পেস জাদুঘরটি স্থান করে নেয়। প্রতিবছর বিশ্বের নানা প্রান্তের ৭০ লাখ পর্যটক এটি দেখতে আসেন। ১৯৪৬ সালে জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করা হয় মূলত পুরোনো আকাশযানের রক্ষণাবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে। এটি পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয় ১৯৭৬ সালে।

চাঁদের পাথরে লেখকের মায়ের হাত। ছবি: লেখক
চাঁদের পাথরে লেখকের মায়ের হাত। ছবি: লেখক

স্পেস জাদুঘরে ঢোকার পরপরই মনে হবে, আমি কি মহাকাশে চলে এলাম? চারদিকে অসংখ্য ঐতিহাসিক আকাশযানের ছড়াছড়ি। কোনোটি ওপর থেকে ঝুলছে, কোনোটি দেয়াল বেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কোনোটি মেঝেতে সাজিয়ে রাখা। কোনো কোনো বিমানের ভেতরে ঢোকার ব্যবস্থা আছে। প্রতিটি যানের সামনে আছে সংক্ষিপ্ত বিবরণ।

ঐতিহাসিক আকাশযানের মধ্যে আছে ১৯০৩ সালে রাইট ব্রাদার্সদের তৈরি বিমান, যেটি বিশ্বের প্রথম বিমান হিসেবে সফলভাবে উড্ডয়ন করেছিল। আছে অ্যাপোলো–১১। সর্বপ্রথম মহাকাশ থেকে সফলভাবে ফেরত এসেছিল। আছে আমেরিকা থেকে ইউরোপ যাওয়া প্রথম বিমান। যেটি ‘স্পিরিট অব সেন্ট লুইস’ নামে পরিচিত। নিউইয়র্ক থেকে প্যারিস গিয়েছিল ১৯২৭ সালে। এটিও আছে এখানে। ১৯২৪ সালে ‘শিকাগো’ নামের একটি বিমান প্রথম পুরো পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে। স্পেস জাদুঘরে এটিও রাখা আছে।

প্লেনের ককপিটে দুই মেয়েসহ লেখক। ছবি: লেখক
প্লেনের ককপিটে দুই মেয়েসহ লেখক। ছবি: লেখক

আছে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং কোরিয়া ও ভিয়েতনাম যুদ্ধে ব্যবহৃত যুদ্ধজাহাজ। মহাকাশযানের সংখ্যাও কম নয়। আরও আছে মহাকাশযানে ব্যবহার করা স্পেস স্যুট। ছোট একটি হল আছে, যেখানে ছবিতে দেখানো হচ্ছে জাদুঘরে রাখা বিভিন্ন নিদর্শনের ইতিহাস।

ডিসি, বোয়িং ও এয়ার বাসের প্রথম দিকের বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত অনেক বিমান শোভা পাচ্ছে জাদুঘরটির আনাচ–কানাচে। প্রাইভেট জেটের সংগ্রহও অনেক।

জাদুঘরটির সব কটি নিদর্শন এক দিনে দেখে শেষ করার মতো নয়। আর সব নিদর্শনেরই অর্থবহ উপস্থিতি দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে।

তবে যার জন্য এই জায়গার আবেদন আমার কাছে অনেক বেশি, সেটি চাঁদের পাথর। ১৯৭২ সালে অ্যাপোলো ১৭ মহাকাশযান একটি পাথর নিয়ে আসে পৃথিবীতে, যার একটু টুকরো এই জাদুঘরে রাখা আছে দর্শনার্থীদের ছুঁয়ে দেখার জন্য। পাথরটিতে যখন ছুঁই, এক শূন্য অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছিল। যার কোনো তুলনা হয় না।

মাজহারুল বনি: সফটওয়্যার কোয়ালিটি এনালিস্ট, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।