লন্ডনে পিঠা মেলা

পিঠা মেলায় অতিথিরা। ছবি: পিঠা মেলা কর্তৃপক্ষ
পিঠা মেলায় অতিথিরা। ছবি: পিঠা মেলা কর্তৃপক্ষ

কমিউনিটির অনেকের উপস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে বাংলা টিভি পিঠা মেলা। গত শনিবার (২৬ অক্টোবর) পূর্ব লন্ডনের ইস্টহ্যামের পার্ল গার্ডেন হলে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

পিঠাশিল্পীদের বাহারি স্বাদের পিঠা মেলায় আসা দর্শনার্থীদের তৃপ্তি দেয়। তাঁরা দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশে এ আয়োজনের প্রশংসা এবং এ ধরনের আয়োজন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।

মেলায় গান পরিবেশন করেন ভাওয়াইয়া-শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, পরশমণি, শর্মিলী দাশ, সাদিয়া আফরোজসহ অন্য শিল্পীরা। আরও ছিল বাচ্চাদের চিত্রাঙ্কনসহ নানা আয়োজন। যথারীতি মেলায় প্রতিবছরের মতো পিঠাশিল্পীদের পুরস্কৃত করা হয়।

এ ছাড়া পিঠাকে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টে ডেজার্ট হিসেবে চালু করার সম্ভাবনাবিষয়ক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে আলোচকেরা বলেন, বর্তমানে প্রচলিত ডেজার্টের তুলনায় বাংলাদেশি পিঠা অনেক বেশি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর। তাই পিঠাকে রেস্টুরেন্টে ডেজার্ট হিসেবে চালু করলে ব্যবসায়িকভাবে রেস্টুরেন্টগুলোই লাভবান হবে।

পিঠা মেলায় অতিথিরা। ছবি: পিঠা মেলা কর্তৃপক্ষ
পিঠা মেলায় অতিথিরা। ছবি: পিঠা মেলা কর্তৃপক্ষ

মেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কবি শামীম আজাদ। আলোচনায় অংশ নেন ইউকে-বিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট বজলুর রশিদ এমবিই, কারি লাইফের প্রধান সম্পাদক সাংবাদিক সৈয়দ নাহাস পাশা, বিসিএর প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিম, বিবিসিসিএর প্রেসিডেন্ট কাউন্সিলর শামসুল আলম, বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার আশিকুন নবী চৌধুরী।

স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সামাদুল হক ও পরিচালক ড. দিনাক সোহানী। সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক ও কবি মিলটন রহমান।

পিঠা মেলায় অতিথিরা। ছবি: পিঠা মেলা কর্তৃপক্ষ
পিঠা মেলায় অতিথিরা। ছবি: পিঠা মেলা কর্তৃপক্ষ

বাংলা পিঠাকে বিলেতের রেস্টুরেন্টে কীভাবে ডেজার্ট হিসেবে যুক্ত করা যায়, এ-বিষয়ক সেমিনারে শামীম আজাদ বলেন, এ ধারণাকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে নতুন ব্যবসায়িক সমৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে নিজেদের সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া সম্ভব হবে।

সাইদা মুনা তাসনিম এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তাঁর দপ্তর থেকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়ে বলেন, বাংলার নারীরা এই বিলেতে পিঠাকে অবলম্বন করে স্বাবলম্বী হতে পারবেন। তিনি এ বিষয়ে সব রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

বজলুর রশীদ বলেন, এ উদ্যোগকে বাণিজ্যিকভাবে নিতে হবে। বর্তমানে রেস্টুরেন্টে যেসব ডেজার্ট ব্যবহৃত হয়, তার চেয়ে পিঠা অনেক বেশি সুস্বাদু ও উপাদেয় বলে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন।

সেমিনারে আলোচকেরা। ছবি: পিঠা মেলা কর্তৃপক্ষ
সেমিনারে আলোচকেরা। ছবি: পিঠা মেলা কর্তৃপক্ষ

সৈয়দ নাহাস পাশা বলেন, গুণগত ও স্বাস্থ্যগত বিচারে পিঠাকে বিলেতের রেস্টুরেন্টে ডেজার্ট হিসেবে যুক্ত করা সময়ের ব্যাপার। এর জন্য তিনি নিজের পত্রিকার মাধ্যমেও সহায়তার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘নিজের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, বেশির ভাগ রেস্টুরেন্টে যে ডেজার্ট দেওয়া হয়, তার চেয়ে পিঠা অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পাবে।’

সামসুল আলম বলেন, রেস্টুরেন্ট সেক্টরে পিঠাকে ডেজার্ট হিসেবে যুক্ত করার মাধ্যমে বাংলার খাদ্য সংস্কৃতিকে বিলেতে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।

দিনাক সোহানী বলেন, বাংলা টিভির বহুদিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। তিনি এর জন্য সব রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীর সহায়তা হামনা করেন।

শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়ের সঙ্গে কয়েকজন। ছবি: পিঠা মেলা কর্তৃপক্ষ
শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়ের সঙ্গে কয়েকজন। ছবি: পিঠা মেলা কর্তৃপক্ষ

সৈয়দ সামাদুল হক বলেন, বাংলা টিভি এখন বিলেত ছেড়ে বাংলাদেশ থেকে সম্প্রচারিত হচ্ছে। খুব দ্রুত বাংলা টিভি আবার বিলেত থেকে সম্প্রচার শুরু করবে। ২০০৮ সাল থেকে বাংলা টিভি যে পিঠা মেলার আয়োজন করে আসছে, তা এখন পরিপূর্ণতা লাভ করছে। তিনি আরও বলেন, পিঠাকে বিলেতের রেস্টুরেন্টে ডেজার্ট হিসেবে যুক্ত করার মধ্য দিয়ে বাংলা টিভি আরেকটি মাইলফলক স্থাপন করতে চায়।

পুরো দিনের পিঠা মেলা ছিল পিঠারসিকদের ভিড়ে জমজমাট। ছিল ফ্যাশন শো, জনপ্রিয় শিল্পীদের সংগীত পরিবেশনা ও শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন কর্মশালা। কবিতা আবৃত্তি করেন কবি সালেহা চৌধুরী। গ্রামবাংলার পোশাকে ফ্যাশন শো উপস্থাপন করেন সাঈদা সির মডেলরা। গান পরিবেশন করেন জনপ্রিয় শিল্পী শর্মিলী দাস, পরশমণি ও সাদিয়া আফরোজ। সবশেষে ছিল কিংবদন্তির শিল্পী ভাওয়াইয়া গানের সম্রাট রথীন্দ্রনাথ রায়ের পরিবেশনায় বিশেষ সংগীতানুষ্ঠান। তিনি গান গেয়ে পুরো মেলা মাতিয়ে রাখেন।

শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়ের সঙ্গে আয়োজকেরা। ছবি: পিঠা মেলা কর্তৃপক্ষ
শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়ের সঙ্গে আয়োজকেরা। ছবি: পিঠা মেলা কর্তৃপক্ষ

মেলায় উল্লেখযোগ্য ব্যক্তির মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নিউহ্যাম কাউন্সিলের মেয়র রোকসানা ফায়েজ, কাউন্সিলর আয়েশা চৌধুরী, কাউন্সিলর লাকমিনি শাহসহ কমিউনিটি নেতারা।

মেলা শেষে আয়োজকেরা জানিয়েছেন, পিঠাকে রেস্টুরেন্টের ডেজার্ট হিসেবে যুক্ত করতে বছরব্যাপী ব্রিটেনের বড় শহরগুলোতে তাঁরা সেমিনারের আয়োজন করবেন। এতে সবার সহায়তা কামনা করেছে বাংলা টিভি কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তি